উন্নাওয়ের ধর্ষণকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত হওয়া বহিষ্কৃত বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিংহ সেঙ্গারের জামিন মঞ্জুর হওয়ায় ভয় পাচ্ছেন নির্যাতিতা। দিল্লি হাই কোর্টের রায় ঘোষণার হওয়ার পরই ইন্ডিয়া গেটের বাইরে অবস্থানে বসেন নির্যাতিতা এবং তাঁর মা। সঙ্গে রয়েছেন আরও অনেকে। নির্যাতিতার কথায়, ‘‘কুলদীপ মুক্তি পাওয়ায় আমরা ভীত।’’
বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে রাজধানীতে। অবস্থান তুলতে এলে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়ান বিক্ষোভকারীরা। অভিযোগ, পুলিশ মারধর করে বিক্ষোভ হটানোর চেষ্টা করে। পুলিশের মারে আহত হন নির্যাতিতার মা। সংবাদসংস্থা এনআইএ-র সঙ্গে কথা বলার সময় নির্যাতিতা বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে অবিচার হয়েছে। নির্বাচন আসছে, তাই তাঁকে (কুলদীপ) মুক্তি দেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘যদি এমন এক জন ধর্ষণের আসামি বেরিয়ে আসে, তা হলে আমরা কী ভাবে নিরাপদে থাকব?’’
নির্যাতিতা জানান, বিচারপ্রক্রিয়ার উপর তাঁর আস্থা রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা শুরু থেকেই নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি।’’ তিনি মনে করেন, ‘‘এখন মনে হচ্ছে আমরা জেলে থাকলেই ভাল হত।’’ অতীতের কথা স্মরণ করে নির্যাতিতা বলেন, ‘‘আমি তখনই আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার পরিবারের কথা ভেবে সেই পদক্ষেপ করিনি।’’
মঙ্গলবার দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি সুব্রহ্মণ্যম এবং বিচারপতি হরিশ বৈদ্যনাথন শঙ্করের বেঞ্চ কুলদীপের জামিন মঞ্জুর করে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে উন্নাও ধর্ষণকাণ্ডে কুলদীপকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সাজা শোনায়। সেই সাজা মুকুব করল দিল্লি হাই কোর্ট। তবে জামিন দিলেও কুলদীপের উপর বেশ কয়েকটি শর্ত চাপিয়েছে আদালত। হাই কোর্ট ১৫ লক্ষ টাকা ব্যক্তিগত বন্ডে কুলদীপের সাজা মুকুব করেছে। আদালত আরও জানিয়েছে, উন্নাওয়ের নির্যাতিতার বাড়ির পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে প্রবেশ করতে পারবেন না কুলদীপ। নির্যাতিতার পরিবারকে হুমকি না-দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে আদালত। নির্যাতিতা জানান, এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন তিনি।
২০১৭ সালের জুনে উন্নাও জেলায় এক নাবালিকাকে অপহরণ করে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনায় কুলদীপকে দোষী সাব্যস্ত করে নিম্ন আদালত। ২০১৯ সালে ১ অগস্ট উন্নাওয়ে ধর্ষণ এবং অন্যান্য মামলা উত্তরপ্রদেশ থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সেই ধর্ষণকাণ্ডে জামিন পাওয়ায় আতঙ্কিত নির্যাতিতার পরিবার। ধর্ষণকাণ্ডের সাজা থেকে মুক্তি পেলেও নির্যাতিতার বাবার মৃত্যুর ঘটনাতে সাজা ভোগ করতে হবে তাঁকে। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে দিল্লি হাই কোর্টেই আবেদন করেছেন কুলদীপ, যা এখনও বিচারাধীন।