ডাকঘর নাটকে অভিনয় করার সময় রবীন্দ্রনাথ। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ থেকে সংগৃহীত।
তাই আমরা তাঁর কাছে ছুটে যাই। কেন? তার কারণ, বাঙালির, বিশেষত লেখাপড়া-করা মধ্যবিত্ত বাঙালির—এইটা একটা অভ্যাস হয়ে গেছে। এ অভ্যাসের জন্য রবীন্দ্রনাথের নিজের দায় কম নয়। তিন হাজারের মতো কবিতা, দু’হাজারের বেশি গান, গল্প-উপন্যাস-নাটক, অজস্র প্রবন্ধ তিনি শুধু আমাদের বিনোদনের জন্য লিখেছেন—এ কথা তিনি বললেও আমরা মেনে নেব নাকি? শুধু তাই নয়, লিখেছেন ‘আত্মপরিচয়’, শান্তিনিকেতনে তিনি একটানা গুরুর আসনে বসে দিয়ে গেছেন ‘শান্তিনিকেতন’ উপদেশমালা, ‘আত্মশক্তি’, ‘সমাজ’, ‘Creative Unity’, ‘Personality’, ‘কালান্তর’ ‘Nationalism’, ইত্যাদি কত লেখায় দেশ-কাল-পৃথিবী-অস্তিত্ব নিয়ে কত জিজ্ঞাসা উচ্চারিত হয়েছে, আগের নানা চিন্তার সূত্র বিস্তার করে ‘Religion of Man’ আর ‘মানুষের ধর্ম’-তে দু-ভাবে দেখা ধর্মের খতিয়ান, সর্বোপরি শেষ বক্তৃতা ‘সভ্যতার সংকট’-এ মানবসভ্যতার এক বিপন্ন সময়ে প্রবল আশ্বাসের ঘোষণা—এ সবই তাঁকে একজন সাধারণ কবি বা সাহিত্যস্রষ্টা থেকে যে কতটা আলাদা করে দিয়েছিল তা কি তিনি নিজে জানতেন না? নিশ্চয়ই জানতেন। তাঁর কাছে দেশের আর পৃথিবীর প্রত্যাশার কথাও জানতেন। আর এও ঠিক যে, মুখে যাই বলুন, সেই আশ্রয় আর শুশ্রূষার দায়িত্ব পালনে তাঁর কোনও কুণ্ঠা ছিল না।বাঙালির জানাতেই হয়। পৃথিবীতে আরও অনেকের কাছে রবীন্দ্রনাথ পৌঁছেছেন, কিন্তু তার নিজের ভাষায় রবীন্দ্রনাথকে পেয়েছে একমাত্র বাঙালি। রকের ভাষা ধার করে বলি, বাঙালি পেয়েছে ‘অর্জিন্যাল’ রবীন্দ্রনাথকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy