Advertisement
E-Paper

রাহুলের টুইট কংগ্রেসের প্রাচীন ঐতিহ্য স্মরণ করাল

এই আধুনিক সময়ে পুরনো কংগ্রেসের দর্শনকেই পুনরুজ্জীবিত করছেন রাহুল। লিখছেন জয়ন্ত ঘোষালরাহুল গাঁধীর টুইট দিল্লিতে বিতর্কের ঝড় তুলেছে। এক দিকে যখন গোরক্ষা বাহিনীর তাণ্ডবনৃত্য চলছে তখন সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, কেন্দ্রকে দায়িত্ব নিতে হবে। সংসদে এ ব্যাপারে কড়া আইন করতে হবে!

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৮ ০০:০০
সোমনাথ মন্দিরে পুজো দিচ্ছেন রাহুল গাঁধী। ফাইল চিত্র।

সোমনাথ মন্দিরে পুজো দিচ্ছেন রাহুল গাঁধী। ফাইল চিত্র।

রাহুল গাঁধী বলেছেন, তিনি হলেন কংগ্রেস |

প্রেক্ষাপটটা কী?

শশী তারুর বলেন, মোদী ২০১৯-এ জিতলে ভারত হয়ে উঠবে হিন্দু পাকিস্তান| এর পর ইনকিলাব নামের উর্দু কাগজে একটি খবর প্রকাশিত হল। তাতে বলা হল রাহুল গাঁধী অভ্যন্তরীণ বৈঠকে বলেছেন যে কংগ্রেস মুসলিমদের দল| ব্যস! এই খবরের ভিত্তিতে বিজেপি নেতারা রে রে করে মাঠে নেমে পড়লেন। অভিযোগ তোলা হল, রাহুল গাঁধী হিন্দু বিরোধী|

রাহুল গাঁধী এই বিতর্ক দেখে অবশেষে বললেন, তিনি কংগ্রেস! তিনি হিন্দু না মুসলমান এই ভেদাভেদের রাজনীতি করেন না! রাহুলের এই টুইট বার্তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ| তিনি একটা শব্দ ‘কংগ্রেস’ ব্যবহার করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি আসলে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের দর্শনে বিশ্বাস করেন না। তিনি বিশ্বাস করেন বহুত্ববাদে!

রাহুল গাঁধীর টুইট দিল্লিতে বিতর্কের ঝড় তুলেছে। এক দিকে যখন গোরক্ষা বাহিনীর তাণ্ডবনৃত্য চলছে তখন সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, কেন্দ্রকে দায়িত্ব নিতে হবে। সংসদে এ ব্যাপারে কড়া আইন করতে হবে!

ঠিক এই সময়ে রাহুলের এই মন্তব্য কংগ্রেসের এক প্রাচীন ঐতিহ্যকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।

কংগ্রেস, মানে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ঔপনিবেশিক শাসকদের ভূমিকার প্রতিবাদে। অ্যালেন অক্টাভিয়ান হিউম প্রতিষ্ঠাতা হলেও সুরেন বন্দ্যোপাধ্যায় দায়িত্ব নেন এই চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর। কী ভাবে এর পর এই চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী দেশে এক বিরাট রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয় সে তো ভারতের সমকালীন ইতিহাস জানে!

রাহুলের ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গী কতটা অস্বস্তিতে ফেলবে শাসকদলকে!—ফাইল চিত্র।

রাহুল তাঁর টুইটে বলেছেন, সমাজের শেষ সারিতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটির সঙ্গে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি দেখতে চান না, জানতে চান না পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি হিন্দু না মুসলমান! কোন ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করছেন তিনি সেটা তাঁর কাছে গুরুত্ব পূর্ণ নয়।

সকালবেলা রাহুলের টুইটের সঙ্গে সঙ্গেই বিজেপি শিবিরে তৎপরতা শুরু হয়| মাঠে নামানো হয় সম্বিৎ পাত্রকে। হাইকমান্ডের নির্দেশ, সম্বিৎ আক্রমণ কর রাহুলকে। যাতে টেলিভিশন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজনৈতিক পরিসর দখল করে নেওয়া যায়। চিৎকার করে এই পশু চিকিৎসক রাহুলের টুইট বার্তাকে মানুষের মন থেকে মুছে দিতে চান!

কিন্তু তা কি হয়?

এ কথা সত্য, কংগ্রেস ঐতিহ্য অনুসরণ করে হিন্দু এবং মুসলমান, দু’পক্ষকে সঙ্গে নিয়েই চলতে চান। যে দিন থেকে মুলায়ম বা লালু বা মায়াবতী মুসলিমদের দল হতে চান, আবার বিজেপি হয়ে ওঠে হিন্দুদের দল, এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়ে যায় কংগ্রেসের। কেননা অতীতে দু’পক্ষকে নিয়ে চলেছে কংগ্রেস। রাজীব গাঁধী সমস্যায় পড়েন রামমন্দির বিতর্ক নিয়ে। এক দিকে তিনি তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বুটা সিংহকে পাঠান মাচান বাবার আশীর্বাদ নিতে, আবার মুখ্যমন্ত্রী নারায়ণ দত্ত তিওয়ারিকে শিলান্যাসের নির্দেশ দেন। আবার শাহবানু মামলায় রাজীবের রক্ষণশীল অবস্থান মোল্লাতন্ত্রের চাপে বিপদে ফেলে রাহুলকে!

রাহুল সে ভুল করতেও চান না। তিনি এই ‘কাট অ্যান্ড পেস্ট’ ধর্মনিরপেক্ষতার পথে না গিয়ে বলছেন তিনি কংগ্রেস। মানে, তিনি এই আধুনিক সময়ে পুরনো কংগ্রেসের দর্শনকেই পুনরুজ্জীবিত করছেন। তিনি মন্দিরে যান। পৈতে পরেন। আবার তিনি মুসলিম সমাজেরও কংগ্রেস দল।

একেই বলা হয়ে ইনক্লুসিভ রাজনীতি। আর্য-অনার্য সবাইকে এক দেহে লীন করতে চান রাহুল। আজকের ভারতে এটাই সবচেয়ে বড় দাবি!

রাহুল সচেতন ভাবেই এগোচ্ছেন!

বস্তুত, মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের সভায় রাহুল গাঁধী কংগ্রেসকে মুসলিমদের পার্টি বলেছেন, উর্দু দৈনিকে প্রকাশিত এ খবর নিয়ে বিজেপি আসরে নেমে পড়ে| বিজেপি নেতাদের কৌশল ছিল খুব সহজ, শশী তারুরের হিন্দু পাকিস্তান মন্তব্য আর কংগ্রসকে মুসলিমদের দল বলে ধর্মীয় মেরুকরণকে তীব্র করে দেওয়া | ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে এই পথেই যে এগোবে বিজেপি, সেটা স্পষ্ট কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে|

বিজেপির এই উস্কে দেওয়া বিতর্কে জল ঢেলে দিয়ে রাহুল বললেন, ‘‘আমি পংক্তির একেবারে শেষ লোকটির পাশে রয়েছি| আমি শোষিত নির্যাতিত প্রান্তিকদের পক্ষে| ওদের ধর্ম, জাতপাত বা বিশ্বাস কী আমার কাছে তার গুরুত্ব নেই| যাঁরা কষ্টে রয়েছেন তাঁদের খুঁজে বুকে টেনে নিই আমি| ঘৃণা বিদ্বেষ আতঙ্ক মুছে দিই| সব জীবিত প্রাণকে ভালবাসি| আমি কংগ্রেস|’’

এই টুইট বিজেপি শিবিরে আলোড়ন সৃষ্টি করে, কারণ রাহুলের সংক্ষিপ্ত টুইট বার্তার শেষ বাক্যটি। রাহুল বলতে পারতেন, আমি ধর্ম জাতি গোষ্ঠী বিচার করি না, কারণ আমি কংগ্রেস | এই ‘কারণ’ শব্দটি ব্যবহার না করলেও রাহুলের আজকের টুইটের মর্মকথা ছিল, কংগ্রেস এই দর্শনেই আজও বিশ্বাস করে।

কংগ্রেসের মুখপাত্র রণবীর সিংহ সূর্যওয়ালা বলেন, কংগ্রেস শব্দটির মধ্যেই আছে সব ধর্ম সব জাতি সব মানুষের একতার ভাবনা। এ তো ঐতিহাসিক ভাবেই সত্য। সেই গৌরবকেই পুনরুজ্জীবিত করতে চাইছেন রাহুল গাঁধী।

বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব নির্দেশ দেন, আক্রমণ হানুন রাহুলের বিরুদ্ধে| দুপুরের মধ্যেই সম্বিৎ পাত্র সাংবাদিক বৈঠক করে বললেন, রাহুল মূল প্রশ্নটা এড়াচ্ছেন| কংগ্রেস মুসলিমদের দল, এ কথাটির জবাব দিতে হবে। যে উর্দু সংবাদপত্রটি মুসলিমদের সঙ্গে রাহুলের বৈঠকের খবর পরিবেশন করে সেটিও বিজেপি ঘনিষ্ঠ সংবাদমাধ্যমের| কংগ্রেস নেতারা বুঝতে পেরেছেন, এটা বিজেপির রাজনৈতিক কৌশল।

কংগ্রেস শুধু মুসলিম বা শুধু হিন্দুদের দল কখনওই নয় বলে বিজেপি উগ্র মেরুকরণের রাজনীতি করে কংগ্রেসকে কোণঠাসা করতে উদ্যত। অতীতে রাজীব গাঁধী মন্দির শিলান্যাস এবং শাহবানু, দু’টি সম্পূর্ণ পৃথক রাজনীতি করে সমস্যায় পড়ে যান। সনিয়া গাঁধীর মৌত কি সওদাগর মন্তব্য নিয়েও বিজেপি এই রাজনীতি করেছে। কিন্তু এ বার সেই রাজনীতি রাহুল ভিন্ন কৌশলে মোকাবিলা করছেন। তিনি বলছেন, আমি কংগ্রেস| কোনও ব্যক্তিবাদ নয়, কংগ্রেস মানে ভারতবর্ষের প্রাচীন দর্শন ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’।

Tweet Rahul Gandhi Congress শাহি সমাচার BJP Amit Shah Narendra Modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy