Advertisement
E-Paper

পশ্চিমে কালো মেঘ

ওয়াশিংটন নাকি পশ্চিম এশিয়ায় এক লক্ষ কুড়ি হাজার সেনা পাঠানোর পরিকল্পনা করিতেছে।

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৯ ০০:০৩

ওয়াশিংটন এবং তেহরান ঠিক কী ভাবিতেছে, জানা অসম্ভব। তবে তাহাদের পারস্পরিক হুমকির আদানপ্রদান দেখিয়া বাকি দুনিয়া একটি ঘোর আশঙ্কার মধ্যে আছে। আশঙ্কা— যদি এই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ-পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, তাহা কিন্তু ইরাক যুদ্ধের অপেক্ষাও বহু গুণে ভয়ানক হইতে চলিয়াছে। ইরান ঠিক ইরাকের মতো নহে, তাহার সমরপ্রস্তুতি আরও অনেক গুণ বেশি, পশ্চিম এশিয়ায় তাহার অস্থিতি ঘটাইবার ক্ষমতাও অনেক বেশি। ইরান-আমেরিকা অনেক দিনই পরস্পরের উপর খড়্গহস্ত হইলেও, গত দিনদশেকের মধ্যে পরিস্থিতি অনেকখানি মন্দ হইয়াছে। ওয়াশিংটন নাকি পশ্চিম এশিয়ায় এক লক্ষ কুড়ি হাজার সেনা পাঠানোর পরিকল্পনা করিতেছে। ইতিমধ্যেই ইরাক ও ইরান হইতে মার্কিন দূতদের ফিরিতে বলা হইয়াছে। মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ও বোমারু বিমান নাকি সেখানে পৌঁছাইয়াও গিয়াছে। জনসমক্ষে অবশ্য বিমান প্রেরণের কথাটিকে ‘গুজব’ বলিয়া নস্যাৎ করিয়াছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তবে বাক্যবাণ বর্ষণে একটুও খামতি রাখিতেছেন না তিনি। যুদ্ধে নামিলে ইরানের সর্বনাশ হইবে, ট্রাম্পের মুখে এই হুমকি শুনিয়া ইরানের বিদেশমন্ত্রীর প্রতি-হুঙ্কার: ট্রাম্প এখন আলেকজ়ান্ডার দ্য গ্রেট কিংবা চেঙ্গিস খাঁ-এর মতো ব্যবহার করিলেও তিনি যেন মনে রাখেন যে ইরান কিন্তু সে কালে ইঁহাদেরও ভয় পায় নাই।

পশ্চিম এশিয়াকে কেন্দ্র করিয়া এই যুদ্ধ-যুদ্ধ আবহাওয়া গোটা বিশ্বের পক্ষেই অসম্ভব উদ্বেগজনক। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসিবার পর মার্কিন বিদেশনীতিতে বিপর্যয় নামিয়া আসিবে বলে অনেকে অনুমান করিয়াছিলেন— অনেকেই বলিতেছেন, এই হয়তো সেই তুুঙ্গ বিপদমুহূর্ত। মার্কিন বিশেষজ্ঞরাও চিন্তিত ট্রাম্পের যুদ্ধবাজ পরামর্শদাতাদের লইয়া। কেননা, তাঁহাদের অজানা নাই যে পশ্চিম এশিয়ার রাজনীতি কতখানি বিপদজালের মতো। এই রাজনীতির একটি মেরু রণাঙ্গণে অবতীর্ণ হইলে অন্যরাও দ্রুত পক্ষ লইতে বাধ্য হইবে। ইজ়রায়েল ও সৌদি আরবের ন্যায় মার্কিন মিত্র দেশগুলি কী করিবে, সহজেই অনুমেয়। বাস্তবিক, ইতিমধ্যেই পর পর দুই বার সৌদির তৈলভাণ্ডার আক্রমণ লইয়া ইরানের সহিত সৌদির সংঘাত ঘটিয়াছে। এই দুষ্টবৃত্তে আছে ইয়েমেন ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহিও। আগামী ত্রিশ তারিখ মক্কায় আপৎকালীন শীর্ষ বৈঠকে উপসাগরীয় ও আরব নেতৃত্ব কী সিদ্ধান্ত লইবে দেখা যাক। আপাতত তাহাদের উপরই ভরসা রাখিতে হইবে।

এমতাবস্থায়, নয়াদিল্লিতে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সহিত বৈঠক করিতে আসিয়াছিলেন ইরানের বিদেশমন্ত্রী মহম্মদ জাভেদ জ়ারিফ। পশ্চিম এশিয়ার আশি লক্ষ অভিবাসী ভারতীয় কর্মীর একাংশকে অন্যত্র সরানো হইলেও, এত সংখ্যক মানুষকে একসঙ্গে দেশে ফেরানো লইয়া সংশয়ে নয়াদিল্লি। উপরন্তু, তেল আমদানির মার্কিন নিষেধাজ্ঞা হইতে ভারত আগে যে ছাড় পাইত, এখন তাহা প্রত্যাহৃত হইবার ফলে তৈলসঙ্কটেরও সম্ভাবনা। চিন ও রাশিয়ার পরে জ়ারিফের ভারত আগমন সহায়তা প্রার্থনারই সফর। স্বভাবতই ‘গঠনমূলক’ প্রক্রিয়ায় ‘শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে’ জটিলতা কাটাইতে ইচ্ছুক ভারত। তবে একটি বিষয়ে সন্দেহ নাই। মাসের শেষে দিল্লিতে যে সরকারই শপথ লউক না কেন, প্রথমেই তাহাকে ভাবাইবে— ইরান।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

US Donald Trump Iran Tehran Conflict International Relationship
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy