Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

সক্ষমতার গরিমা ভাল, কিন্তু বেহুলার বাসরঘরে তা বেমানান

সামরিক শক্তির গরিমা রয়েছে, আস্ফালন রয়েছে, প্রতি-হুঙ্কার রয়েছে। দেশকে ঘিরে অবস্থান যে সব চোখরাঙানির, তাদের প্রতি কঠোর বার্তা রয়েছে। ছোট-বড় নানা সামরিক পদক্ষেপের ফলাও প্রচারও রয়েছে।

ডুবোজাহাজ স্করপেন।

ডুবোজাহাজ স্করপেন।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৬ ০৩:২০
Share: Save:

সামরিক শক্তির গরিমা রয়েছে, আস্ফালন রয়েছে, প্রতি-হুঙ্কার রয়েছে। দেশকে ঘিরে অবস্থান যে সব চোখরাঙানির, তাদের প্রতি কঠোর বার্তা রয়েছে। ছোট-বড় নানা সামরিক পদক্ষেপের ফলাও প্রচারও রয়েছে।

সঙ্গত কারণেই হয়তো রয়েছে এই সব কিছু। ঠিক সেই সঙ্গত কারণটার জন্যই সামরিক সম্পদের বিষয়ে অনুপুঙ্খ সতর্কতা থাকাও জরুরি ছিল। তা যে নেই, সে সত্য বেশ স্পষ্ট করেই প্রমাণ হয়ে গেল।

ভারতীয় এবং ফরাসি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে মুম্বইয়ের ডকে তৈরি হচ্ছে শক্তিশালী ডুবোজাহাজ। কখনও প্রয়োজন পড়লে প্রতিপক্ষকে যাতে চমকে দেওয়া যায়, তার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে ডুবোজাহাজে। কিন্তু প্রতিপক্ষের জন্য চমকটা আর রইল না। যতটা গোপনে চমকপ্রদ বৈশিষ্ট্যগুলির সংযোজন করা হচ্ছিল, তার চেয়েও গোপনে সে সব গোপন কথা ফাঁস হয়ে গিয়েছে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক প্রতিপক্ষের জন্য চমক রাখতে চেয়েছিল। পরিবর্তে মন্ত্রকের কর্তাব্যক্তিরা নিজেরাই চমকে গিয়েছেন। কবে, কোন ফাঁক গলে, কী ভাবে সর্বসমক্ষে নিজেকে মেলে ধরেছে ভারতের এই গুরুতর সামরিক গোপনীয়তা, টেরই পায়নি নয়াদিল্লি। এক সুন্দর সকালে নির্মেঘ আকাশ থেকে বজ্রপাত হওয়ার ঢঙে সামনে এসেছে ফাঁস হয়ে যাওয়ার খবরটা।

তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। রিপোর্ট চাওয়া হচ্ছে। সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা মজবুত, খতিয়ে দেখতে বলা হচ্ছে। কিন্তু বুদ্ধিটা আবার সেই চোর পালানোর পরেই বাড়ছে।

ভারতীয় সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ডুবোজাহাজ তৈরির কাজটি করছে যে ফরাসি সংস্থা, ত্রুটি সম্ভবত তাদের অংশেই। ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ইঙ্গিত অন্তত সে রকমই। ফরাসি সংস্থাটিও দায় সম্পূর্ণ ঝেড়ে ফেলছে না। বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার শিকার হতে হয়েছে বলে আভাস দিতে চাইছে। কিন্তু ফরাসি সংস্থার উপর দায়টুকু চাপিয়ে দিতে পারলেই কি আমাদের সমস্যা মিটে যাবে? গোপন রণকৌশলগত তথ্য সকলের সামনে ফাঁস হয়ে যাওয়ার জেরে যে জটিল, অনাকাঙ্খিত এবং বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হল, সেই পরিস্থিতি থেকে কি বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে কেউ দায়টুকু মাথা পেতে নিলেই? দুর্গের কোনও প্রান্তেই যাতে অযাচিত রন্ধ্র না থাকে, তা নিশ্চিত করার দায় কি ভারতীয় কর্তৃপক্ষও এড়িয়ে যেতে পারে?

আগ বাড়িয়ে আক্রমণ না করার যে নীতিতে ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিশ্বাসী, সেই নীতি অনুসারে নিজের দুর্গ নিশ্ছিদ্র করা সর্বাগ্রে আবশ্যিক। অন্যের গড় হানা দেওয়ার বা তা বিধ্বস্ত করার সক্ষমতা কত দ্রুত আয়ত্ত করছে ভারত, তা নিয়ে নয়াদিল্লির উৎসাহী চর্চা নিঃসন্দেহে দেশপ্রেম উস্কে দিতে সক্ষম। কিন্তু তাতে বাস্তবটা বদলে যায় না।

একাধিক উদ্যত ফণা যখন সুযোগের অপেক্ষায়, ভারত সরকারের ‘ওয়ার রুম’কে তখন রন্ধ্রহীন হতেই হবে। বেহুলার বাসরঘর হয়ে থাকলে চলবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anjan Bandyopadhyay Newsletter Scorpene
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE