Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Sexist Comment

প্রশ্ন আছে, কিন্তু উত্তর খুঁজি না, তাই এগোতেও পারি না

মাথার উপরে যে খোলা আকাশ, তার পুরোটা আমাদের জন্য নয় সম্ভবত। নারীকে অর্ধেক আকাশ নামে ডাকি। কিন্তু, মনের অন্দরমহলে সেই নারী সম্পর্কে যে দৃষ্টিভঙ্গি পুষে রাখি, তা নিকষ অন্ধকারে মোড়া। আমাদের অর্ধেক আকাশটাই অন্ধকারে মোড়া।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৪০
Share: Save:

মাথার উপরে যে খোলা আকাশ, তার পুরোটা আমাদের জন্য নয় সম্ভবত। নারীকে অর্ধেক আকাশ নামে ডাকি। কিন্তু, মনের অন্দরমহলে সেই নারী সম্পর্কে যে দৃষ্টিভঙ্গি পুষে রাখি, তা নিকষ অন্ধকারে মোড়া। আমাদের অর্ধেক আকাশটাই অন্ধকারে মোড়া।

মহিলাদের সম্পর্কে যাঁর চেতনা আদ্যন্ত অসম্মানজনক দৃষ্টি‌ভঙ্গি থেকে সঞ্জাত, তেমন একটা মানুষ কী ভাবে বছরের পর বছর জনপরিসরে দাপটে বিরাজ করেন? কী ভাবে দশকের পর দশক নেতা বিবেচিত হন? কী ভাবে বার বার জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন? আমরাই তো বেছে নিই এঁদের। তাই আমাদের চেতনা নিয়েই আজ প্রশ্ন ওঠে।

উত্তরপ্রদেশ বিজেপির প্রভাবশালী নেতা বিনয় কাটিয়ার যে মন্তব্য প্রিয়ঙ্কা গাঁধী সম্পর্কে করলেন, সে মন্তব্যে তাঁর কুরুচি, রাজনৈতিক অশিক্ষা এবং অসামাজিক চিন্তাধারার খুব স্পষ্ট প্রতিফলন রয়েছে। কিন্তু বিনয় কাটিয়ার এক জন ‘সম্মাননীয়’ নেতা। কোনও ক্ষণজন্মা নেতাও নন, সুদীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রা তাঁর।

আমরা আসলে অদ্ভুত স্ববিরোধের শিকার। এক দিকে আমরা নারীকে মাতৃজ্ঞানে পুজো করার বাণী আওড়াই। অন্য দিকে, নারীর অস্তিত্ব সম্পর্কে মনে নিদারুণ অন্ধকার পুষে রাখি, সতর্ক বা অসতর্ক ভাবে নারী সম্পর্কে নিজেদের ঘৃণ্য মূল্যায়ন প্রকাশ্যে আনি, প্রয়োজন হলে ‘অনার কিলিং’-ও করি। যাঁকে মাতৃজ্ঞানে পুজো করার কথা বলি, তাঁকেই কী ভাবে সম্মান রক্ষার অজুহাতে খুন করতে পারি?

এই নিদারুণ স্ববিরোধ কেন, সে প্রশ্নের উত্তর আমরা খুঁজি না। উত্তর খুঁজি না বলেই বিনয় কাটিয়াররা প্রতাপে নেতৃত্ব করেন। উত্তর খুঁজি না বলেই শরদ যাদবের মতো প্রবীণ নেতা ভোটদানের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে বলতে পারেন— নারীর সম্মান গেলে শুধু পরিবারের ক্ষতি, গ্রামের ক্ষতি। আর ভোটের সম্মান গেলে দেশের ক্ষতি। নারীর সম্মানহানি যে আসলে গোটা সমাজ-মানসের ক্ষতি, নারীর সম্মানহানির প্রতিটি দৃষ্টান্ত যে গোটা সমাজকে বর্বরতার বন্ধনীতে ফেলে দেয়, সামাজিক উত্থানের সব আখ্যানকে যে তা মিথ্যায় পর্যবসিত করে, এই বোধ যত দিন না জাগবে, তত দিন মুক্তির উপায় নেই।

আপাতদৃষ্টিতে আমাদের সমাজ একের পর এক নতুন মাইলফলক স্পর্শ করছে। কিন্তু আসলে সে মাইলফলকগুলো বিচ্ছিন্ন অর্জন, সমাজের সামগ্রিক অর্জন নয়। আমরা ভাবছি, আমরা এগোচ্ছি। কিন্তু আসলে একটা অগ্রগতি-অগ্রগতি খেলা চলছে, সামাজিক সরণ নেই, আমরা একই বিন্দুতে স্থির। নিজেদের চৈতন্যের প্রবাহে স্ববিরোধের চোরাস্রোতগুলোকে যে দিন চিহ্নিত করতে পারব, যে প্রশ্নগুলোর মুখোমুখি দাঁড়ানোর চেষ্টাই কোনও দিন করিনি, যে দিন সেগুলোর উত্তর খুঁজে পাব, অর্ধেক আকাশকে সেই দিন অন্ধকার থেকে মুক্ত করতে পারব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE