শরীরের দুর্গন্ধের কারণে অস্বস্তিতে ভোগেন অনেকেই। বিশেষ করে গরমে কারও কারও বেশি ঘাম হয়। নিজেকে দুর্গন্ধমুক্ত রাখতে তাঁরা ব্যবহার করেন বিভিন্ন ডিওডোর্যান্ট, সুগন্ধি। শরীরের অতিরিক্ত জল এবং কিছু খনিজ ও বর্জ্য পদার্থ ঘাম হিসাবে বেরিয়ে যায়। প্রত্যেকের শরীরে নিজস্ব কিছু গন্ধ আছে। কিন্তু তা যদি অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তা হলে সমস্যা। এ সব কারণ ছাড়াও একটি বিশেষ হরমোনের কারণে গায়ে দুর্গন্ধ হতে পারে। তার নাম ‘কর্টিসল’। যার আরও একটি পরিচয় হল ‘স্ট্রেস হরমোন’। অর্থাৎ, মস্তিষ্ক চাপে থাকলে এই হরমোন নিঃসৃত হয় শরীরে। মুম্বইনিবাসী পুষ্টিবিদ মনপ্রীত কালরা সমাজমাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভিডিয়োয় বলছেন, ‘‘শরীরে কর্টিসলের মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে ঘাম বেশি হতে থাকে, যা থেকে শরীরে ব্যাক্টেরিয়া এবং দুর্গন্ধ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেই সমস্যা দূর করতে হলে শুধু শারীরিক পরিচ্ছন্নতা নয়, সার্বিক জীবনযাপনেও বদল আনতে হবে।"
রক্তে কর্টিসল হরমোনের পরিমাণ বেড়ে গেলে আর কী কী হতে পারে?
১) মানসিক চাপ বাড়িয়ে দিতে পারে, এমন হরমোন হল কর্টিসল। তার মাত্রা বেশি হয়ে গেলে উচ্চ রক্তচাপ, টাইপ-২ ডায়াবিটিস, অস্টিয়োপোরোসিসের মতো সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
২) কর্টিসল হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে গেলে বিপাকহার কমে যায়। পাশাপাশি, এই হরমোনের প্রভাবে ঘন ঘন খিদে পায়। তাই হঠাৎ ওজন বেড়ে যেতে পারে কর্টিসল হরমোনের প্রভাবে।
৩) কর্টিসল শুধু মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয় না। অনিদ্রাজনিত সমস্যার জন্যেও দায়ী এই হরমোন।
৪) কর্টিসল হরমোনের অধিক ক্ষরণ প্রভাব ফেলে যৌনজীবনের উপরেও। এই হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে গেলে পুরুষদের লিঙ্গোত্থানে সমস্যা হয়, শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যায়, যৌন ইচ্ছেও কমে যায়। মহিলাদের শরীরে কর্টিসল হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে গেলে ঋতুস্রাব অনিয়মিত হয়ে পড়ে, ফলে সন্তান ধারণে সমস্যা হয়।
৫) কর্টিসল হরমোনের ক্ষরণ বেশি হলে হালকা চোট লাগলেও শরীরে কালসিটে পড়ে যায়। তা ছাড়া, এই হরমোনের প্রভাবে মুখে কিংবা ঘাড়ের কাছে লোমের আধিক্য দেখা দেয়।
কর্টিসল হরমোনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কী কী করবেন?
১) সারা দিন বদ্ধ ঘরের মধ্যে বসে থাকলে মনমেজাজ এমনিতেই খারাপ হয়। চিকিৎসকেরা বলছেন, সূর্যের আলো কর্টিসল হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাই দিনের মধ্যে মাত্র আধ ঘণ্টা গায়ে রোদ লাগাতেই হবে।
২) হরমোন ক্ষরণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত শরীরচর্চা করতে বলেন চিকিৎসকেরাই। খুব পরিশ্রমসাধ্য ব্যায়াম না হলেও নিয়মিত হাঁটা, স্ট্রেচ করা, সাইকেল চালানো বা সাঁতার কাটার মতো কসরত কর্টিসল ক্ষরণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।
৩) মানসিক চাপ বা উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডিপ ব্রিদিং অভ্যাস করতে বলেন অনেকেই। সুখাসনে বসে, শান্ত এবং গভীর ভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার পদ্ধতিকেই ডিপ ব্রিদিং বলা হয়। এই অভ্যাসে স্নায়ুর উত্তেজনা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে।