Advertisement
E-Paper

নিরহং

অসঙ্গত বা অনৃতভাষণে ট্রাম্প বরাবরই বেলাগাম, কিন্তু ভিতর-বাহিরের এই পরস্পরবিরোধী ভাষ্যের পিছনে প্রধান নিয়ন্তা তাঁহার অসম্ভব অহং, বলিলে ভুল হইবে না।

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:০১
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি এএফপি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি এএফপি।

এক মার্কিন সাংবাদিক ফাঁস করিলেন, ফেব্রুয়ারি মাসেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁহাকে বলিয়াছিলেন, করোনাভাইরাস অতি ভয়ঙ্কর। পরের কয়েকটি মাস সেই ট্রাম্পই ক্রমাগত অতিমারিকে লঘু করিয়া দেখাইয়াছেন। নিজে মাস্ক পরেন নাই, উহার গুরুত্বও অস্বীকার করিয়াছেন। কোভিডে আমেরিকায় দুই লক্ষ মানুষ মৃত, আক্রান্তের সংখ্যা এখনও বাড়িতেছে, এবং রাষ্ট্রপ্রধানের পূর্ব-স্বীকারোক্তি এখন প্রকাশ্যে আসায় ট্রাম্পের উত্তর, মানুষ আতঙ্কিত হইয়া পড়িবে বলিয়াই তিনি ওই রূপ বলিয়াছিলেন। অসঙ্গত বা অনৃতভাষণে ট্রাম্প বরাবরই বেলাগাম, কিন্তু ভিতর-বাহিরের এই পরস্পরবিরোধী ভাষ্যের পিছনে প্রধান নিয়ন্তা তাঁহার অসম্ভব অহং, বলিলে ভুল হইবে না। যে কোনও বিষয়েই তাঁহার প্রকাশ্য বিবৃতি জুড়িয়া থাকে কেবলই দম্ভোক্তি। ক্যালিফর্নিয়া উত্তাপে দগ্ধ হইতেছে, এক আধিকারিক সতর্ক করিলে তিনি নির্বিকার উত্তর দেন, চিন্তা নাই, কালে ঠান্ডা হইবে। বিজ্ঞান ওই ভাবে কাজ করে না, যুক্তির পিঠে তাঁহার প্রতিযুক্তি— বিজ্ঞান কিছু জানে না।

ইহা যে প্রতিযুক্তি নহে, কুযুক্তিও নহে, আত্মম্ভরিতার সপাট বহিঃপ্রকাশ, বুঝিতে ভুল হয় না। শাসকের এই পদক্ষেপ জনস্বার্থ রক্ষায় নহে, নিজ দম্ভের পরিপুষ্টি সাধনে মগ্ন। তাই অতিমারিতে জনপদ উজাড় হইলেও বহিরঙ্গে স্বাভাবিকতার ভান, সবই ঠিক আছে, কোনও সমস্যা নাই— এই স্বাভাবিকতাকে এক প্রকার জোর করিয়া জনজীবনে ঢুকাইয়া দেওয়া। আমেরিকায় বিভিন্ন প্রদেশ ও শহরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পার্ক, সমুদ্রতট, বিনোদনকেন্দ্র খুলিয়া দেওয়া হইয়াছে, অবরুদ্ধ দশা হইতে হাঁপ ছাড়িয়া বাঁচিয়া জনজীবন সেখানে ছুটিয়া গিয়াছে। তাহাতে জায়গায় জায়গায় করোনা-সংক্রমণ বাড়িয়াছে। করোনার প্রকোপ কমিয়া কালক্রমে নিশ্চিত ভাবেই জনজীবন মসৃণ হইত, কিন্তু এই মুহূর্তের মসৃণতা কতখানি জনসাধারণের সঙ্গত প্রয়োজনে আর কতখানি শাসকের ইচ্ছায় পড়িয়া, তাহা সংশয়ের ঊর্ধ্বে নহে। ভারতেও লকডাউন হইতে আনলক-পর্বে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হইতেছে। কর্মক্ষেত্র খুলিয়াছে, পরিবহণ খুলিতেছে। বিনোদন ও শিক্ষার পরিসরে এখনও সতর্কতা। পাশাপাশি উঠিতেছে বিপ্রতীপ স্বরও, এখনই এত সব খুলিয়া দেওয়া কি ঠিক হইল? সামনেই ব্যাডমিন্টনের দুই বিশ্বখ্যাত প্রতিযোগিতা; এক ভারতীয় ব্যাডমিন্টন-তারকা টুইট করিয়াছেন, এত সত্বর খেলা চালু না করিলেই কি হইতেছিল না?

জনজীবন সচল রাখিতে অর্থনীতির গতিময়তা অপরিহার্য। সরকারের দাবি, সেই দিকে চোখ রাখিয়াই উৎপাদনক্ষেত্র খোলা হইয়াছে। এমনকি ক্রীড়া, উৎসব ও বিনোদনের পরিসরগুলিও, যেখানে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও প্রভূত চাহিদা-জোগানের সক্রিয়তায় অর্থনীতির চাকা গড়াইবে। ইহাতে নাগরিকেরই লাভ বটে, কিন্তু এই কর্মচক্র যেন নাগরিকের স্বার্থেই আবর্তিত হয়, শাসকের খেয়ালখুশিতে নহে, তাহা দেখিতে হইবে। শাসক চাহিতেছেন, এবং তাহার চাওয়াটিই একমাত্র ঠিক, অতএব সব খুলিয়া দিলাম, ইহা যেন না হয়। অতিমারির সতর্ক নিয়ন্ত্রণ এবং নাগরিক ও অর্থনীতির যথাযথ রক্ষণ, দুই-ই সরকারকে করিতে হইবে। নাগরিক শাসকের ক্ষমতার উৎস, তাঁহার দম্ভ বা অনুগ্রহের পাত্র নহে। সেই নাগরিককে সংশয় হইতে প্রত্যয়ে লইয়া আসা তাঁহার কাজ, ছড়িটি হাতে আছে বলিয়াই ঘুরানো নহে।

Donald Trump Coronavirus USA
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy