Advertisement
E-Paper

বাতি খসলেই জাতি বদলে যাবে না, বুঝিয়ে দিচ্ছেন ‘ভিআইপি’রা

অনেক হয়েছে ভিআইপি সংস্কৃতি, আর নয়, লালবাতির যথেচ্ছ ঝলসানি আর নয়— সদ্য সেই লক্ষ্যে পদক্ষেপ করেছে ভারত সরকার। দীর্ঘ দিনের একটা কু-অভ্যাসে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:৩৬
Share
Save

অনেক হয়েছে ভিআইপি সংস্কৃতি, আর নয়, লালবাতির যথেচ্ছ ঝলসানি আর নয়— সদ্য সেই লক্ষ্যে পদক্ষেপ করেছে ভারত সরকার। দীর্ঘ দিনের একটা কু-অভ্যাসে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে এক বিধায়ক, মহারাষ্ট্রে এক সাংসদ বুঝিয়ে দিলেন, মাথার উপর থেকে লালবাতি খুলে নিলেই ভিআইপি সংস্কৃতির অবলুপ্তি ঘটানো যায় না। বুঝিয়ে দিলেন, সুদীর্ঘ পরম্পরার ‘সুবাদে’ ভিআইপি সংস্কৃতি আমাদের শিকড়ে-বাকড়ে আজ, শুধু ডাল-পালা ছেঁটে এর অবলুপ্তি ঘটানো সহজ নয়।

দীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসনের ঘোর এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি ভারত। সমাজ-রাজনৈতিক মানসে ঔপনিবেশিক সংস্কৃতির প্রগাঢ় ছাপ এখনও। ভিআইপি সংস্কৃতি তাই মানসিক গঠনের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে বহুলাংশে। ভারত সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ করেছে সংশয় নেই। সব নাগরিকই যে রাষ্ট্রে সমমর্যাদার, সেই বার্তা স্পষ্ট করে চারিয়ে দিতে অত্যন্ত ইঙ্গিতবহ একটি সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়েছে। কিন্তু গাড়ির মাথা থেকে লালবাতিটা সরিয়ে নিলেই যে আমাদের মানসিকতাটা বদলে ফেলা যায় না, সে সত্যও অত্যন্ত দ্রুত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।

টোল প্লাজায় বিধায়কের গাড়ি পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গে সব কাজ ফেলে ওই গাড়িকে ছাড়ার ব্যবস্থা করা হল না কেন? বিধায়কের হাতে চড় খেয়ে গেলেন টোল প্লাজার কর্মী। এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মীকে ২৫ বার চপ্পল-পেটা করার কথা সদর্পে ঘোষণা করতে পারেন যে সাংসদ, এটিএম কাউন্টারে টাকা না থাকার কারণে তাঁকেও খালি হাতে ফিরতে হবে কেন? বিক্ষোভ-অবরোধ শুরু হয়ে গেল, পুলিশকেও শাসানির মুখে পড়তে হল।

দেশের দুই প্রান্ত থেকে ছিটকে আসা দু’টুকরো ছবিই বলে দিচ্ছে, নিজেদের অধিকারের পরিধি সম্পর্কে এ দেশের তথাকথিত ভিআইপিদের ধারণাটা ঠিক কী রকম? বিমানবন্দরে নিরাপত্তা সংক্রান্ত নিয়ম-কানুন মানার প্রশ্ন হোক বা ট্র্যাফিক নিয়ম সুচারু ভাবে মেনে চলার দায়বদ্ধতা— অধিকাংশ ‘ভিআইপি’-ই মনে করেন, এ সব তাঁদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

অধিকারের পরিধি সংক্রান্ত এই ধারণা আসলে আমাদের দীর্ঘ দিনের অভ্যাস-জনিত। সমাজ-মানস এবং রাজনৈতিক-মানসে বহু বছর ধরে বাসা বেঁধে থাকা বৈষম্যমূলক ভ্রান্তিগুলোই মানসিক গঠনে এই বিকৃতি এনেছে। সরকারি সদিচ্ছায় গাড়ির মাথা থেকে লালবাতিটা হঠাৎ এক দিন খসে যেতেই পারে। কিন্তু মানসিক গঠনটা এত সহজে বদলে যেতে পারে না।

কু-অভ্যাসগুলোকে শিকড় থেকে উপড়ে ফেলতে খুব জোরে একটা টান দিতে হবে। মোদী কি পারবেন সেই টানটা দিতে?

Anjan Bandyopadhyay News Letter Lal Batti Red Beacon Politician
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy