Advertisement
E-Paper

আত্মশুদ্ধি

ভারতে গণমাধ্যমের অন্তত খাতায়কলমে কোনও সরকারি প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি বা সমর্থন নাই। তাহার অস্তিত্বের, এবং কার্যকারিতার, ভিত্তি হইল তাহার বৈধতা, এবং জনমানসে তাহার বৈধতা সম্বন্ধে ধারণা।

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৮ ০১:৪১

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বলিয়াছেন, সাংবাদিকরাই রাতারাতি পোপ এবং জাতির জ্যাঠামহাশয় হইয়া বসিয়াছেন। কথাটি তাৎপর্যপূর্ণ। সংবাদমাধ্যম কিছু ক্ষেত্রে নিজের গণ্ডি অতিক্রম করে। প্রতিটি সংবাদপত্র বা টেলিভিশন চ্যানেলের ক্ষেত্রে কথাটি প্রযোজ্য নহে— অনুমান করা চলে, শ্রীমিশ্র কথাটি সর্বজনীন অর্থে বলেনও নাই। তবে, অধুনা বহুশ্রুত ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ কথাটির মধ্যে সত্যের ভাগ যে অনেকখানি তাহা অস্বীকার করিবার নহে। সংবাদমাধ্যমের চলার পথ পরিবর্তনের কিছু প্রয়োজন অবশ্যই আছে। কিন্তু প্রশ্ন হইল, সংশোধন করিবার দায়িত্বটি কাহার? প্রশ্নটি জরুরি। সরকারকে আদালত বিভিন্ন সময়ে স্বপ্রবৃত্ত হইয়াই নানান নির্দেশ দেয়। সমাজ সাক্ষ্য দিবে, সেই নির্দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভাল বই মন্দ হয় নাই। তেমনই, আদালত যদি প্রকারান্তরে সংবাদমাধ্যমকে কোনও একটি নির্দেশিকা দেয়— যেমন, জাতির স্বনিযুক্ত অভিভাবক না হইয়া উঠিবার নির্দেশ— তাহা কি গণতন্ত্রের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল?

ভারতে গণমাধ্যমের অন্তত খাতায়কলমে কোনও সরকারি প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি বা সমর্থন নাই। তাহার অস্তিত্বের, এবং কার্যকারিতার, ভিত্তি হইল তাহার বৈধতা, এবং জনমানসে তাহার বৈধতা সম্বন্ধে ধারণা। সংবাদমাধ্যমের প্রধান কাজ প্রতিষ্ঠানকে নিরন্তর প্রশ্ন করিয়া চলা। বাছিয়া লওয়া টেলিভিশন চ্যানেলে নরেন্দ্র মোদীর সাক্ষাৎকারের মাখনসম প্রশ্ন নহে— অস্বস্তিকর, কঠিন প্রশ্ন। ফলে, প্রতিষ্ঠানের সহিত সংবাদমাধ্যমের সংঘাত প্রায় অনিবার্য। অন্তত, সেই সংবাদমাধ্যমগুলির সহিত, যাহারা এই নামটির যোগ্য— যাহারা নিজেদের সরকারের জনসংযোগ দফতরে পরিণত করে নাই। এই সংঘাতে সংবাদমাধ্যমের একমাত্র বর্ম তাহার বৈধতা। আদালত যদি সংবাদমাধ্যমকে সংশোধনের পরামর্শ দেয়, তাহাকে সাধারণ মানুষ সংবাদমাধ্যমের বৈধতার স্বীকৃতি প্রত্যাহার করিয়া লওয়া হিসাবে দেখিতে পারেন। তাহাতে হয়তো রাজনীতিকদের লাভ। কিন্তু গণতন্ত্রের ক্ষতি।

মাননীয় প্রধান বিচারপতি যে আপত্তি করিয়াছেন, তাহার যাথার্থ্য সংশয়াতীত। কিন্তু, কোনটি নিজেদের বিচারকের আসনে বসানো, আর কোনটি প্রশ্ন করিবার প্রকৃত দায়িত্ব সম্পাদন— রাজনীতির তরজা সেই সূক্ষ্ম বিচারের ধার ধারিবে না। গণমাধ্যমকে সমালোচনা করিবার দরজাটি খুলিয়া গেলে রাজনৈতিক সমাজ যে কোনও প্রশ্নকেই সংবাদমাধ্যমের অনধিকারচর্চা হিসাবে দাগিয়া দিবে। সেই দোষারোপ যদি গণমানসে বৈধতা অর্জন করে, তবে গণতন্ত্রের প্রহরী হিসাবে কাজ করিবার উপায় মিডিয়ার থাকিবে না। অতএব, দরজাটি খুলিবার পূর্বে সাবধান। সংশোধন অবশ্যই প্রয়োজন, কিন্তু তাহা বাহিরের তাগিদে নহে, হইবে অভ্যন্তরীণ বিচারেই। সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের আপন বৈধতা রক্ষার তাগিদেই সেই সংশোধন করিতে হইবে। ধারাবাহিক সংশোধন। কোনও সংবাদমাধ্যমের বা সাংবাদিকের জাতির জ্যাঠামহাশয় হইয়া উঠিবার বাসনাটিকেও ভারতীয় গণতন্ত্র স্বীকৃতি দেয়। আবার, তাঁহার বিপ্রতীপে দাঁড়াইয়া দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার অনুশীলনের পরিসরটিকেও খুলিয়া রাখে। অভ্যন্তরীণ তাগিদেই মিডিয়াকে এই দায়িত্বশীলতার পাঠ লইতে হইবে। কাহারও তিরস্কারে নহে।

Indian Media Supreme Court Mass Medium
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy