Advertisement
E-Paper

শ্রবণসুখকর

ছয় হাজার কোটি ডলারের লক্ষ্য নিরাশাব্যঞ্জক, বুঝিয়াই হয়তো কৃষিমন্ত্রী গত এপ্রিল মাসে ঘোষণা করিয়াছিলেন, রফতানির লক্ষ্য দশ হাজার কোটি ডলার। কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করিবার উপায় অনুসন্ধান করিয়া দলওয়াই কমিটিও সুপারিশ করিয়াছিল, রফতানি অন্তত তিনগুণ বাড়াইয়া দশ হাজার কোটি ডলারের লক্ষ্য ধার্য করিতে হইবে।

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০
—ছবি এএফপি।

—ছবি এএফপি।

আগামী পাঁচ বৎসরে কৃষিপণ্যের রফতানি দ্বিগুণ করিবে কেন্দ্র। এই ঘোষণা কি আদৌ আশ্বস্ত করিল? প্রথমত, লক্ষ্য হিসাবে ইহা সুউচ্চ নহে। গত বৎসর ভারতের কৃষিপণ্য রফতানির মূল্য ছিল প্রায় তিন হাজার সাতশো কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু ২০১৩-১৪ সালে ভারতের রফতানির অর্থমূল্য ছিল ইহার অধিক, প্রায় চার হাজার কোটি ডলার। গত কয়েক বৎসরে রফতানি কমিয়াছে বলিয়াই আজ সরকারি লক্ষ্যটি (২০২২-২৩ সালে ছয় হাজার কোটি ডলার) বৃহৎ দেখাইতেছে। বাস্তব এই যে, মোদী সরকারকে পূর্বে অতীত সাফল্যকে ছুঁইতে হইবে, অতঃপর অতিক্রম করিতে হইবে। ছয় হাজার কোটি ডলারের লক্ষ্য নিরাশাব্যঞ্জক, বুঝিয়াই হয়তো কৃষিমন্ত্রী গত এপ্রিল মাসে ঘোষণা করিয়াছিলেন, রফতানির লক্ষ্য দশ হাজার কোটি ডলার। কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করিবার উপায় অনুসন্ধান করিয়া দলওয়াই কমিটিও সুপারিশ করিয়াছিল, রফতানি অন্তত তিনগুণ বাড়াইয়া দশ হাজার কোটি ডলারের লক্ষ্য ধার্য করিতে হইবে। অতএব কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার ঘোষণায় দেশবাসী বুকে বল পাইবেন, এই সম্ভাবনা কম। দ্বিতীয়ত, লক্ষ্যে পৌঁছাইবার পথটি অস্পষ্ট। গত কয়েক বৎসর রফতানি কমিবার মূল কারণ, বিশ্বের বাজারে কৃষিপণ্যের মূল্যে পতন। নিকট ভবিষ্যতে দাম না উঠিলে কী করিয়া রফতানি হইতে কৃষকের আয় বাড়িবে? তৃতীয়ত, কৃষিপণ্যকে রফতানির যোগ্য করিতে হিমায়িত পরিবহণ, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, জীবাণুবর্জন প্রভৃতি যাহা কিছু প্রয়োজন, তাহার পরিকাঠামো প্রায় কিছুই তৈরি নাই। দ্রুত তাহার নির্মাণ করিতে হইলে যে বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন, তাহা মিলিবে কি? কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা রফতানির লক্ষ্য বাড়াইয়াছে, পরিকাঠামো নির্মাণে বরাদ্দ বাড়ায় নাই।

তবে সংশয়ের প্রধান কারণ অন্যত্র। ক্রেতার দাবি ও চাষির স্বার্থের সংঘাতে সরকার বরাবর ক্রেতাকেই প্রাধান্য দিয়াছে। খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটাইতে পারে। তাই দেশের বাজারে দাম বাড়িবার উপক্রম হইলেই খাদ্যের রফতানি নিয়ন্ত্রণ করে সরকার। অথচ রফতানির প্রধান শর্ত, ছেদহীন সরবরাহ, চুক্তির শর্তরক্ষা। সরকারি নিয়ন্ত্রণের জন্য ভারতের কৃষিপণ্য বিশ্বের বাজার হারাইয়াছে। উৎপাদনের ব্যয় বাড়িলেও দেশে খাদ্যের দাম বাড়িতে দেওয়া হয় নাই। কৃষকদের অভিযোগ, তাঁহারা কার্যত ভর্তুকি দিতেছেন ক্রেতাকে। নূতন রফতানি নীতিতে এই দ্বন্দ্বের সমাধান নাই। বাণিজ্যমন্ত্রী সুরেশ প্রভু বলিয়াছেন, জৈব কৃষিপণ্যের রফতানি অবাধ হইল, কিন্তু ‘আবশ্যক’ পণ্য পরিস্থিতি অনুসারে নিয়ন্ত্রিত হইবে। জৈবপণ্যের রফতানি বাড়িলে ভাল, কিন্তু ভারতে কৃষিজমির এক শতাংশও জৈব চাষের অধীনে নাই। জৈব রফতানি বাড়াইয়া ভারতীয় চাষির আয়বৃদ্ধি শীঘ্র হইবার নহে। যাহা সর্বাধিক উৎপন্ন হয়, সেই ধান-গম ‘আবশ্যক’ তালিকাভুক্ত।

যাহা সর্বাধিক রফতানি হয়, ভারতের সেই কৃষিপণ্যগুলির অন্যতম হইল মাংস। নরেন্দ্র মোদীর সরকার তাহার উৎপাদন বা রফতানিতে উৎসাহ দিবে, সেই সম্ভাবনা কম। অপর একটি পণ্য বাসমতী চাল। তাহার উৎপাদনে জলের প্রয়োজন অত্যধিক। পরিবেশ সুরক্ষার নিরিখে চালের রফতানি বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করা উচিত কি না, তাহাও বিবেচ্য। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর সরকার ঘোষণার আ়ড়ম্বরে উৎসাহী। নীতি লইয়া বিচার-বিতর্কে অনাগ্রহী। প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা প্রকল্প, কিংবা ন্যূনতম মূল্যে ফসল ক্রয়ের প্রকল্প চাষির সুরক্ষায় ব্যর্থ হইয়াছে। কৃষি রফতানি নীতি কি চাষিকে বাঁচাইবে? না কি ‘রফতানি বাড়াইয়া কৃষকের আয় বৃদ্ধি’ আরও একটি শ্রবণসুখকর মনোহর কাহিনি, যাহা নির্বাচন-শেষে বাতাসে মিলাইয়া যাইবে?

Agriculture Export Central Government
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy