প্রতীকী ছবি।
নারীর সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা অন্যতম অগ্রাধিকার— নির্বাচনের আগে তো বটেই, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের পরেও জোর দিয়ে বলেছিলেন যোগী আদিত্যনাথ। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হয়েই ময়দানে নামিয়ে দিয়েছিলেন অ্যান্টি-রোমিও স্কোয়াডকে। অনেক ঢাক-ঢোল পিটিয়ে, অনেক বাগাড়ম্বরে সে সব শুরু হয়েছিল। যোগীর তৈরি নতুন স্কোয়াড তৎপরতা দেখাল বটে। সে তৎপরতায় নীতি-পুলিশি বা সমাজ-পুলিশির গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ উঠতে শুরু করল। কিন্তু নারী আগের চেয়ে অনেক বেশি সুরক্ষিত হলেন, এমনটা জোর গলায় বলার মতো অবস্থায় আদিত্যনাথের প্রশাসনও সম্ভবত রইল না।
মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে দু’টো ভয়ঙ্কর ঘটনার সাক্ষী হয়েছে উত্তরপ্রদেশ। পথে-ঘাটে মহিলাদের নিরাপত্তার আশ্বাসটা যে এখনও শুধু আশ্বাসই, বাস্তবটা যে ভীষণ ক্লিন্ন, সে কথা আবার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। প্রথমে জাতীয় সড়কে গাড়ি থামিয়ে মহিলাদের গণধর্ষণ। তার অভিঘাত সামলে ওঠার আগেই ফের ভাইরাল ভিডিও— ১৪ জন তরুণ প্রকাশ্য রাস্তায় দুই তরুণীর শ্লীলতাহানিতে মত্ত, অমানবিক উল্লাসে উন্মত্ত। এতই বেপরোয়া এই দুষ্কৃতীরা যে জঘন্য ঘটনাটা চেপে রাখার চেষ্টাও তারা করে না। নিজেরাই অপরাধের ভিডিও রেকর্ডিং করে, সে ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েও দেয়।
অ্যান্টি-রোমিও স্কোয়াড কি তা হলে শুধুই ঢক্কানিনাদ! কথা ছিল, পুলিশের এই বিশেষ বাহিনী মহিলাদের অতন্দ্র প্রহরী হয়ে উঠবে রাজ্যের সর্বত্র। কথা ছিল, নারীর অসম্মান দেখলেই প্রতিরোধ করবে তারা, করবে তাৎক্ষণিক প্রতিকার। তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ এবং প্রতিকারের এই সশব্দ অঙ্গীকার তৎক্ষণাৎ মিডিয়ার নজর টেনেছিল, সোশ্যাল মিডিয়াকে উদ্বেল করেছিল। কিন্তু দেশের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্যে যোগী-রাজ শুরুর পর বেশ কয়েকটা মাস কাটিয়ে এসে মনে হচ্ছে, নারীর সুরক্ষার প্রশ্নে উত্তরপ্রদেশ যে অবস্থানে ছিল, এখনও ঠিক সেখানেই রয়েছে। অ্যান্টি-রোমিও স্কোয়াড তৎপরতা দেখিয়েছে, কোথাও কোথাও অনধিকার প্রবেশ করেছে, কখনও কখনও নিরীহকেও তটস্থ হতে হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতিতে বদল আনতে পারেনি।
মিডিয়ায় বা সোশ্যাল মিডিয়ায় এত দিন জয়ধ্বনি হয়েছে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর নামে, তাঁর পরিকল্পনার নামে, অ্যান্টি-রোমিও স্কোয়াডের নামে। এখন তা হলে কী হওয়া উচিত? পর পর কয়েকটা ভয়ঙ্কর নির্যাতনের দৃষ্টান্ত সামনে এসেছে— সত্য কিন্তু শুধু এটুকুতে সীমাবদ্ধ নয়। অপরাধী যে একটুও পিছু হঠেনি, অপরাধ প্রবণতা যে বিন্দুমাত্র কমেনি, এত বীরদর্পে ময়দানে নামা বাহিনী দুষ্কৃতীর মনে যে একটুও ত্রাসের সঞ্চার করতে পারেনি— সবচেয়ে বড় সত্য সেটাই।
প্রমাণ করুন যোগী আদিত্যনাথ, উচ্চগ্রামে উচ্চারিত প্রতিশ্রুতিগুলো কেবলমাত্র ঢক্কানিনাদ ছিল না। প্রমাণ করুন, সেগুলো শুধুমাত্র গণমাধ্যম আর সামাজিক মাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ব্যবহৃত আতসবাজি ছিল না। সদ্য ক্ষমতায় আসীন হয়েছেন আপনি ঠিকই। কিন্তু মধুচন্দ্রিমা কাল আর প্রলম্বিত হতে পারে না। এ বার প্রতিশ্রুতির প্রতি দায়বদ্ধতার পরিচয়টা দিতে হবে। না হলে অনেকগুলো নিষ্ঠুর প্রশ্নের জবাবদিহির দায়টা ঘাড়ে চেপে বসবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy