Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

শিক্ষকসুলভ 

কর্তব্য কাহাকে বলে? তাহা কি সমাজ যেটুকু কাজ কোনও এক জনের জন্য নির্দিষ্ট করিয়াছে, শুধুমাত্র সেইটুকুই? বালির জোড়া অশ্বত্থতলা বিদ্যালয়ের অবৈতনিক নৈশ শাখাটির শিক্ষকেরা দেখাইয়া দিয়াছেন, ‘কর্তব্য’ শুধুই কিছু নির্দিষ্ট দায়িত্বপালন নহে, আরও কিছু বেশি।

গৃহশিক্ষকের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে ক্রমশ।

গৃহশিক্ষকের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে ক্রমশ।

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০০
Share: Save:

কর্তব্য কাহাকে বলে? তাহা কি সমাজ যেটুকু কাজ কোনও এক জনের জন্য নির্দিষ্ট করিয়াছে, শুধুমাত্র সেইটুকুই? বালির জোড়া অশ্বত্থতলা বিদ্যালয়ের অবৈতনিক নৈশ শাখাটির শিক্ষকেরা দেখাইয়া দিয়াছেন, ‘কর্তব্য’ শুধুই কিছু নির্দিষ্ট দায়িত্বপালন নহে, আরও কিছু বেশি। তাঁহারা সপ্তাহে চার দিন তিন ঘণ্টা এই নৈশ স্কুলটিতে বিনা পারিশ্রমিকে শিক্ষকতা করেন। দুঃস্থ, অথচ মেধাবী ছেলেমেয়েরাই তাঁহাদের ছাত্র। শিক্ষকদের অনেকে ওই স্কুলেই দিনের বেলা শিক্ষকতা করেন, কেহ শিক্ষক হিসাবে অবসর লইয়াছেন, কেহ অন্য পেশার মানুষ। প্রত্যেকেই নিজেদের পেশাগত দায়িত্বটি যথাযথ পালন করিয়াছেন, পরিবারের গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যবস্থাও করিয়াছেন। কিন্তু এইটুকুতেই নিজেদের দায়িত্ব শেষ বলিয়া মনে করেন নাই। বরং বৃহত্তর সমাজকে গড়িয়া তুলিবার দায়িত্বটিকেও ‘কর্তব্য’জ্ঞানে নিজ স্কন্ধে তুলিয়া লইয়াছেন।

যথার্থ শিক্ষকসুলভ কাজ। আদর্শ শিক্ষক শুধুমাত্র বিদ্যালয়ের সময়টুকুতেই আবদ্ধ থাকেন না। শিক্ষকের শিক্ষাদানও নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রম অনুসরণ করিলেই সম্পূর্ণ হয় না। তিনি শুধুমাত্র সাফল্যের দিশারি নহেন, মানুষ হইবার শিক্ষাটিও তিনিই দেন। সেই কারণেই শিক্ষকের শিক্ষা সর্বাঙ্গীণ। বৈদিক যুগের প্রথম আশ্রম, অর্থাৎ ব্রহ্মচর্য পালনের সময় শিষ্যকে গুরুগৃহে বাস করিতে হইত। গুরু শিষ্যদের পাঠদানই করিতেন না, ব্যবহারিক জীবনের শিক্ষাও দিতেন। গুরুগৃহে হাতেকলমে কাজ করিবার সঙ্গে সঙ্গেই শিষ্য বিবিধ অভিজ্ঞতা অর্জন করিত। এবং গুরু-শিষ্যের এ হেন পারস্পরিক আদানপ্রদানের মধ্য দিয়াই শিক্ষার্থীর শিক্ষাটি সম্পূর্ণ হইত। কিন্তু বৈদিক যুগের সেই শিক্ষারীতি এখন অন্তর্হিত, ব্যতিক্রমী কিছু আবাসিক বিদ্যালয় ছাড়া। বিদ্যালয়ের শিক্ষালাভের সময়সীমা ছয় ঘণ্টায় সমাপ্ত। জীবনের শিক্ষা তো অনেক দূর, পাঠ্যক্রম শেষ করাটাই বহু ক্ষেত্রে দুরূহ হইয়া দাঁড়ায়।

এবং সেই সুযোগেই জন্ম লইয়াছে এক অদ্ভুত ধারা— গৃহশিক্ষকতা। গৃহশিক্ষকতার প্রথা বহু কালের। কিন্তু সম্প্রতি তাহার চরিত্রগত পরিবর্তন হইয়াছে। প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থার এক সমান্তরাল ব্যবস্থা হিসাবে তাহা ক্রমশ গড়িয়া উঠিতেছে এবং প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থাটির সর্বনাশ করিতেছে। এই নূতন ব্যবস্থায় পাঠ্যক্রম শেষ করিবার জন্য বিদ্যালয়ের উপর নির্ভরশীলতার প্রয়োজন হয় না। শিক্ষকরাও তাহা জানেন, এবং নিজ দায়িত্বটুকু পালনে অবহেলা করেন। ছাত্রদের সঙ্গেও শ্রেণিকক্ষের দূরত্ব রচিত হইয়া যায়। ২০০২ সালের শেষের দিক হইতেই তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার গৃহশিক্ষকতা বন্ধের উদ্যোগ করিয়াছিল। কিন্তু তাহা হয় নাই। উপরন্তু স্কুলশিক্ষার বিস্তর ফাঁককে কাজে লাগাইয়া এই ব্যবসার কলেবর ক্রমশ বৃদ্ধি পাইয়াছে। বিদ্যালয়গুলিতে অতিরিক্ত ছাত্রের ভারে এবং সময়াভাবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর প্রতি সমান যত্নবান হওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং, মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে বাড়তি সহায়তা ক্রয় করিতেই হয়। যাহাদের সেই সামর্থ্য নাই, তাহারা সমস্যায় পড়ে। বস্তুত বালির নৈশ স্কুলটি সেই দিক দিয়া এক বিকল্প পথের সন্ধান দিয়াছে। শিক্ষকদের প্রত্যেকে যদি এই ভাবে নিজেদের ‘কতর্ব্য’-এর সংজ্ঞাটি কিছুটা বদলাইয়া নেন, তবে গৃহশিক্ষকতা নাম্নী ব্যবসার রমরমা কমিতে পারে। সামাজিক শিক্ষাটিও উন্নততর হইতে পারে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Private Tuition Teachers Social Duties
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE