Advertisement
E-Paper

মুষলপর্ব এড়াতে চাইলে এখনই সংযমী হতে হবে

রাজনৈতিক বিরোধীকে গোলাপ দিয়ে স্বাগত জানিয়ে গাঁধীবাদের অনুকরণ করা যায় বটে। কিন্তু গোলাপ দেওয়ার নিহিতার্থ না বুঝলে গাঁধীবাদের অনুসরণটা হয় না। রাজ্যের শাসক গোষ্ঠীর ছাত্র শাখা বুঝিয়ে দিচ্ছে, তারা অনুকরণটা শিখেছে মাত্র, অনুসরণের অভ্যাসটা এখনও গড়ে ওঠেনি।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৫৫
মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে পুলিশের সামনেই টিএমসিপি-এসএফআইয়ের সংঘর্ষ। তিন রাউন্ড কাঁদানো গ্যাসের শেল ফাটাচ্ছে পুলিশ।

মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে পুলিশের সামনেই টিএমসিপি-এসএফআইয়ের সংঘর্ষ। তিন রাউন্ড কাঁদানো গ্যাসের শেল ফাটাচ্ছে পুলিশ।

রাজনৈতিক বিরোধীকে গোলাপ দিয়ে স্বাগত জানিয়ে গাঁধীবাদের অনুকরণ করা যায় বটে। কিন্তু গোলাপ দেওয়ার নিহিতার্থ না বুঝলে গাঁধীবাদের অনুসরণটা হয় না। রাজ্যের শাসক গোষ্ঠীর ছাত্র শাখা বুঝিয়ে দিচ্ছে, তারা অনুকরণটা শিখেছে মাত্র, অনুসরণের অভ্যাসটা এখনও গড়ে ওঠেনি।

বিরোধী রাজনীতির পরিসর পশ্চিমবঙ্গে সঙ্কুচিত হতে হতে প্রায় বিপন্ন হওয়ার পথে। তার অনেকটাই বিরোধীদের নিজেদের দুর্বলতায়। আবার অনেকটা শাসকের কেরামতিতেও। ছাত্র রাজনীতির অঙ্গনেও ছবিটা ভিন্ন নয় একেবারেই। রাজ্যের কোন কলেজে বিরোধী দলের ছাত্র সংগঠন ক্ষমতায় রয়েছে, তা খুঁজে পেতে হলে এখন অনুবীক্ষণ যন্ত্রই ব্যবহার করতে হয়। তা সত্ত্বেও শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের তরফ থেকে গণতন্ত্রের পথ আগলে দাঁড়ানোর এমন মরিয়া প্রয়াস কেন? ছাত্র সংসদের নির্বাচন এলেই একের পর এক কলেজ থেকে উন্মত্ত হিংসার খবর কেন?

দলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং এই হিংসার বিরুদ্ধে বার্তা দিয়েছেন। দলের ছাত্র শাখাকে তিনি শৃঙ্খলার বার্তা তো দিয়েছেনই, শিক্ষাঙ্গনে দূষণ যে বরদাস্ত করবেন না, তাও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন। শুধু দলনেত্রী নন, তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদ কর্মীদের বার বার সংযত হতে বলছেন, অনেক বেশি দায়িত্বশীল হতে বলছেন। তবুও টনক নড়ছে না শাসক দলের ছাত্র শাখার। বাংলার শিক্ষাঙ্গন থেকে বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলির অস্তিত্ব নিঃশেষে মুছে ফেলতে তৎপর যেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ কর্মীরা।

মহাভারতের সেই যদুবংশের কথা মনে পড়ছে আবার। প্রবল প্রতাপান্বিত যদুবংশ যখন সর্বক্ষেত্রে অপ্রতিদ্বন্দ্বী, তখন প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগুন জ্বলে উঠেছিল অন্দরমহলেই। মুষল পর্বকে আমন্ত্রণ জানিয়ে যদুবংশ নিজেই নিজের বিনাশ ডেকেছিল। সর্বত্র অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠার প্রয়াসে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ তেমন কোনও পরিণতির দিকে এগোবে না তো?

রাজ্যের শিক্ষাঙ্গন থেকে বিরোধী রাজনীতির শেষ চিহ্নটুকু এখনও মুছে যায়নি। অর্থাৎ শাসকের ছাত্র শাখা এখনও সর্বৈব অপ্রতিদ্বন্দ্বী নয়। কিন্তু ছোটখাট মুষল পর্বের নমুনা ইতিমধ্যেই ইতস্তত দৃশ্যমান। সুতরাং সর্বৈব অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা কোনও দিন যদি সম্ভব হয় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষে, তা হলে যদুবংশের পরিণতির সম্মুখীন হওয়া যে খুব একটা অস্বাভাবিক নয়, সে কথা বুঝে নিতে তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। দলীয় নেতৃত্বের পরামর্শ মেনে এখন থেকেই সংযম অভ্যাস না করলে বিপদ রয়েছে।

সকালের গোলাপ বিতরণ যত দিন অহিংসার অনুকরণ হয়ে থাকবে, তত দিন বেলা গড়ালেই হিংসাত্মক রূপটা ফুটে উঠবে। গোলাপের সৌরভে যে দিন অহিংসার বোধটা মিশে থাকবে, সে দিন বিপদের মেঘটা কেটে যাবে।

TMC Anjan Bandyopadhyay News Letter
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy