Advertisement
E-Paper

গভীর ক্ষত

মহিলাদের উপর অ্যাসিড হামলার নিরিখে বিশ্বের প্রথম স্থানটি ভারতের।

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:১০
গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

থামিবার নহে তাঁহাদের লড়াই। চিরস্থায়ী শারীরিক ও মানসিক ক্ষতের বিরুদ্ধে লড়াই। সমাজে সম্মান লইয়া বাঁচিয়া থাকিবার লড়াইও বটে। মহিলাদের উপর অ্যাসিড হামলার নিরিখে বিশ্বের প্রথম স্থানটি ভারতের। আর ভারতে শীর্ষে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গ। অথচ, এই ভয়ঙ্কর সামাজিক অপরাধ রুখিতে যে তৎপরতা এবং কার্যকর পদক্ষেপের প্রয়োজন ছিল, প্রশাসনের তরফে অদ্যাবধি তাহা দেখা যায় নাই। এই সংক্রান্ত আইন আছে, নাই তাহার কঠোর প্রয়োগ। সর্বোপরি, অ্যাসিড আক্রমণ যে গর্হিত অপরাধ, সেই স্বীকৃতিটুকুও ক্ষেত্রবিশেষে মিলে না। সুতরাং, কখনও বিবাহে অসম্মত হইলে, কখনও পণ না মিলিলে, আবার কখনও জুয়ার পণ হিসাবে স্ত্রীকে হারাইয়া তাহার ‘শুদ্ধিকরণ’-এর জন্য অ্যাসিডের ব্যবহার চলিতেই থাকে। জ্বলিতে থাকেন মেয়েরা। শারীরিক ভাবে, মানসিক ভাবেও।

অ্যাসিড-হামলার প্রধানতম কারণ, অনিয়ন্ত্রিত ভাবে অ্যাসিড বিক্রয়। অথচ, অ্যাসিড বিক্রয় রুখিতে ইতিপূর্বে একাধিক ব্যবস্থা করা হইয়াছিল। ২০১৩ সালে লক্ষ্মী আগরওয়াল বনাম ভারত সরকার মামলার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রত্যেক রাজ্যকে অ্যাসিড বিক্রয় নিয়ন্ত্রণে নিজস্ব আইন প্রণয়নের প্রস্তাব দিয়াছিল। বলা হইয়াছিল, স্থানীয় থানাকে না-জানাইয়া কোনও বিক্রেতা দোকানে অ্যাসিড রাখিতে পারিবেন না। হিসাব দিতে হইবে, কোন ধরনের অ্যাসিড, কত পরিমাণে তিনি মজুত ও বিক্রয় করিতেছেন। ইহাও বলা হইয়াছিল যে, পরিচয়পত্র ব্যতীত কেহ অ্যাসিড ক্রয় করিতে পারিবেন না। অপরাধী প্রমাণিত হইলে ক্রেতার সঙ্গে বিক্রেতাও শাস্তির মুখে পড়িবেন। কিন্তু, এই সকল বিধিনিষেধের অস্তিত্বই খাতায়-কলমে আবদ্ধ। খোলা বাজারে অবাধে বিক্রি হইতেছে অ্যাসিড। অ্যাসিড আক্রমণে দোষীদের ন্যূনতম ১০ বৎসর এবং প্রয়োজনে যাবজ্জীবন শাস্তির কথা আইনে বলা হইয়াছে। বাস্তবে, অপরাধীদের দোষ প্রমাণেই বিস্তর ফাঁক থাকিয়া যায়। আক্রমণের খবর মিলিলে প্রশাসনিক তরফে কিছু তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। শোরগোল কমিলে পূর্ববৎ উদাসীনতা ফিরিয়া আসে।

একই উদাসীনতা বর্তমান আক্রান্তদের সামাজিক সুরক্ষার ক্ষেত্রেও। বহু ক্ষেত্রেই আক্রান্ত মেয়েটি স্ব-গৃহ ছাড়িতে বাধ্য হন ক্রমাগত হুমকির মুখে পড়িয়া। সামাজিক, এবং অনেক ক্ষেত্রে পারিবারিক সুরক্ষাও তিনি পান না। বিলম্ব হয় সরকারি ক্ষতিপূরণের অর্থ পাইতেও। ফলে, ঘরের টাকা এবং মূলত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির সাহায্যে তাঁহাকে এক দিকে মামলা চালাইতে হয়, অন্য দিকে চিকিৎসার বিপুল খরচ মিটাইতে হয়। অবশ্য সম্প্রতি খবরে প্রকাশ, অ্যাসিড আক্রান্তদের বকেয়া ক্ষতিপূরণ মিটাইবার সংখ্যা পূর্বের তুলনায় বাড়িয়াছে। ইহা স্বস্তিদায়ক। যাহাতে আরও বেশি সংখ্যক আক্রান্তকে এই ক্ষতিপূরণের আওতায় আনা যায়, সেই চেষ্টা করিতে হইবে। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দৃষ্টান্তটি শিক্ষণীয়। শুধুমাত্র কঠোর আইন এবং রাসায়নিক বিক্রয়ের উপর কড়া নজরদারিকে অস্ত্র করিয়াই সেই দেশে অ্যাসিড আক্রমণের সংখ্যা বিপুল ভাবে হ্রাস করা সম্ভব হইয়াছে। এই ঘৃণ্য অপরাধ প্রতিরোধ করা যায়। প্রয়োজন শুধুমাত্র সামাজিক সচেতনতা, সহমর্মিতা এবং প্রশাসনিক সক্রিয়তার। দুর্ভাগ্য, এই দেশে তিনটিই নিদারুণ ভাবে অনুপস্থিত।

Acid Attack Crime West Bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy