টেক্সাসে বন্দুকবাজের গুলিতে নিহত স্ত্রীর সমাধির প্রস্তুতি। —ফাইল চিত্র
দিন কয়েক পূর্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের এল পাসো শহরে বন্দুকবাজের হামলায় প্রাণ হারাইয়াছেন ২০ জন, আহত ২৬। ইদানীং ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকবাজের হামলা’ যেন ‘কলিকাতা মেট্রোয় আত্মহত্যা’র ন্যায় পরিচিত ঘটনা হইয়া উঠিয়াছে। নৃশংসতার পশ্চাৎপটেও সাধারণত বৈচিত্র থাকে না। বর্তমান আক্রমণটি সম্ভবত অংশত হইলেও ব্যতিক্রমী। যদিও নিয়মমাফিক তদন্তে জানানো হইয়াছে, হামলায় বিদ্বেষমূলক অপরাধের ছায়া থাকিতে পারে, তবু ধীরে ধীরে বন্দুকবাজ চব্বিশ বৎসর বয়সি কনর স্টিফেন বেটস সম্পর্কে অন্য তথ্য প্রকাশ পাইতেছে। জানা গিয়াছে, হত্যাকারী স্বঘোষিত বামপন্থী, ভালবাসে অ্যানিমেশন ও হেভি মেটাল রক সঙ্গীত। একাধিক টুইটে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরোধিতা এবং এলিজ়াবেথ ওয়ারেন, সমাজতন্ত্র ও নাস্তিকতার প্রতি সমর্থন ছিল তাহার। তবে তাহার ভাবনাচিন্তা একমুখী নহে, উহাতে ধারাবাহিক অসংলগ্নতা স্পষ্ট। ঘনিষ্ঠরাও জানাইয়াছেন, বেটসের মানসিক ভারসাম্যের অভাব ছিল। হ্যালুসিনেশন, সাইকোসিস ও স্কিৎজ়োফ্রেনিয়ার সঙ্কটের কথা জানাইয়াছেন তাহার বান্ধবী।
এই বন্দুক-হামলা, অতএব, কয়েকটি অতিসরলীকরণকে প্রশ্ন করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক-হামলা মাত্রেই হেট ক্রাইম— অর্থাৎ শ্বেতাঙ্গ মার্কিনদের অশ্বেতাঙ্গবিদ্বেষের ফল— টেক্সাসের হামলাটি সম্ভবত এতখানি সরল নহে। ঘাতকের মানসিক ভারসাম্যের অভাব এ ক্ষণে তাৎপর্যপূর্ণ বিবেচ্য। মানসিক ভারসাম্যের অভাব অপরাধ নহে। কিন্তু, যাহার সেই অভাব আছে, তাহার হাতে বন্দুক পৌঁছাইয়া দেওয়া অপরাধ। বেটস বন্দুক পাইল কোথায়, তাহা গৌণ প্রশ্ন। মূল প্রশ্ন হইল, মার্কিন আইন আর কত দিন সাধারণ নাগরিকের হাতে অবাধ বন্দুকের অধিকার রক্ষা করিয়া চলিবে? ‘সেকেন্ড অ্যামেন্ডমেন্ট’-এর প্রশ্নটি মার্কিন রাজনীতিতে অতিসংবেদী। কিন্তু, কোনও বাছবিচার ছাড়াই বন্দুক রাখিতে দেওয়ার এই নীতি যে সে দেশের সাধারণ মানুষের পক্ষে নিতান্তই প্রাণঘাতী, বহুশ্রুত এই কথাটি আরও এক বার স্মরণ করাইয়া দেওয়া বিধেয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প জানাইয়াছেন, তাঁহার দেশে ঘৃণার স্থান নাই। কিন্তু, যে বন্দুকের নল বাহিয়া সেই ঘৃণা মানুষের প্রাণ হরণ করে, সেই বন্দুক নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নটি সযত্নে এড়াইয়া গিয়াছেন। রাজনীতির এই দ্বিচারিতাই বিপদ বাড়াইতেছে।
টেক্সাস হামলা প্রসঙ্গে বারাক ওবামা বলিয়াছেন, ঘৃণা এবং মারণখেলা যে ভাবে সমাজের পার্শ্বচরিত্র হইতে চালিকাশক্তি হইয়া উঠিতেছে, তাহাকে ঠেকাইতে প্রশাসনের উন্নততর কৌশলের আশু প্রয়োজন। ‘কোনও নেতার মুখনিঃসৃত’ বিভাজনের বাণী, যাহা ‘ভীতি ও ঘৃণার আবহাওয়াকে পুষ্ট করে’, তাহারও সমালোচনা করিয়াছেন ওবামা। অনুমান করা চলে, নিশানা বর্তমান প্রেসিডেন্ট, কেননা ইদানীং কালে বারংবার তাঁহার বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্যে উৎসাহিত হইয়াছেন শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যকামীরা। এই দফায় তিনি বলিয়াছেন, তাঁহার দেশে ঘৃণার স্থান নাই। হয়তো ২০২০ সালের নির্বাচনের পূর্বে বিরোধীদের স্তিমিত করিতেই ছলনার আশ্রয় লইতেছেন শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যকামীদের রোল-মডেল ট্রাম্প। চোরকে চুরিতে উৎসাহদান করিয়া গৃহস্থকে সতর্ক হইতে বলার ন্যায় দ্বিচারিতা কমই হয়। তাহা যদি ঘৃণার পথ প্রশস্ত করে, তবে ভীতির তমসা গাঢ়তর হয় বইকি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy