Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Deepika Padukone

বলিউডে তৈরি হচ্ছে প্রতিবাদের নতুন স্বর

উনিশ-কুড়ির দল বারবার বাতাসের বুক চিরে স্লোগান উড়িয়েছে। কিন্তু তথাকথিত ‘সিভিল ড্রেস’-এ থাকা মুখোশধারী ঘাতকদের সামনে এই স্লোগান কি কাজে আসবে? সুদেব বসু।বাদামি উর্দির সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো উনিশ-কুড়ি-একুশ-বাইশের দল বারবার বাতাসের বুক চিরে এই স্লোগান উড়িয়েছে।

—ফাইল চিত্র

—ফাইল চিত্র

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২০ ০২:২৩
Share: Save:

পুলিশ তুমি যতই মারো/ মাইনে তোমার একশো বারো

ছয়-সাতের দশকে যখন কলকাতার রাস্তা বারবার উত্তাল হচ্ছে ছাত্র আন্দোলনের ঢেউয়ে তখন জন্ম নিয়েছিল এই স্লোগান। একদিকে রাষ্ট্রবাহিনী অন্যদিকে রাষ্ট্রকে প্রশ্ন করা রক্তপলাশের দল। বাদামি উর্দির সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো উনিশ-কুড়ি-একুশ-বাইশের দল বারবার বাতাসের বুক চিরে এই স্লোগান উড়িয়েছে। কিন্তু তথাকথিত ‘সিভিল ড্রেস’ এ থাকা মুখোশধারী ঘাতকদের সামনে দাঁড়াতে এই স্লোগান কি কাজে আসবে?

সন্দেহ হচ্ছে এ কারণেই যে এরা পেশাগত পুলিশ নয়। দেশের স্বঘোষিত রক্ষক এরা, আর এদের অঘোষিত উদ্দেশ্য একটাই। বিরোধী-মতকে গায়ের জোরে দমিয়ে রাখা। আর যারা সেই অবদমনের প্রতিবাদ জানাবেন তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণার বিষ ছড়ানো, বিচ্ছিন্ন করা, দেশদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করা।

শেষ এক মাসের ঘটনাধারা যাঁরা নিয়মিত কাগজের পাতায় পড়েছেন তাদের বুঝতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয় যে এখানে জেএনইউ-এ এবিভিপির পৈশাচিক আক্রমণ আর তার প্রেক্ষিতে দীপিকা পাডুকোনের বক্তব্য নিয়ে কথা হচ্ছে। দীপিকা এমনিতেই টার্গেট হিসেবে চিহ্নিত, সেই ‘পদ্মাবৎ’ এর সময় থেকেই। আরও বেশি করে চিহ্নিত বলিষ্ঠভাবে সেই আক্রমণের সামনে দাঁড়ানোয়, মনে করিয়ে দিয়েছেন শাবানা আজমি। দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফি-বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলন, তাকে দমন করতে রড-লাঠি-অ্যাসিডে সুসজ্জিত এবিভিপির দল অপারেশন চালাল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কত ঘরের কাঁচ পড়ল ভেঙে/কত লোকের মাথা পড়ল ফাটা।’ দেশরক্ষকদের এমন ভলান্টিয়ারির সামনে নীরব দর্শক ছাড়া কীই বা হতে পারে ‘একশো বারোর পুলিশ’? বড়জোর মাথায় সেলাই নিয়ে আবার সক্রিয় হওয়া ছাত্রনেত্রী ঐশীর নামে এফআইআর করতে পারে।

আসলে এর কোনওটাই অস্বাভাবিক নয়। দমন যত বাড়বে ছাত্রশক্তি ততই অপ্রতিরোধ্য হবে তার প্রমাণ ইতিহাস। আর প্রকৃত অপরাধী নয়, এফআইআরে অভিযুক্ত হবে প্রতিবাদী এটাও সর্বজনবিদিত। বরং গর্বিত হওয়া যাক দীপিকাকে নিয়ে। ‘জেন ওয়াই’ এর প্রতিনিধি তিনি, ‘ডেস্টিনেশন ওয়েডিং’ এর জন্যও পেজ থ্রিতে রাজত্ব করেন। আবার অ্যাসিড আক্রান্ত মহিলার সঙ্গে কাটান জন্মদিন, পৌঁছে যান আহত ঐশীর পাশে, দ্ব্যর্থহীন ভাষায় উগরে দেন প্রতিবাদ। তিনি নতুন করে মনে করান বলিউড মানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাঁকজমকের মিটিং আর সেলফি নয়, রুপোলি পর্দা প্রশ্ন করতে বা ভিন্নমত তুলে ধরতে ভোলেনি। যেমন ভোলেননি অনুরাগ কাশ্যপ, অনিল কপূররা। তাই কার্যত ফাঁকা থাকে পীযূষ গয়ালের সভা, ট্যুইটারে আছড়ে পড়ে প্রতিবাদ। কালো মুখোশে মুখ ঢেকে যারা আক্রমণ করে তাদের বিরোধিতা করতে ‘শাসকের বিরোধী নই’ এই মুখোশটাও ছিঁড়ে ফেলেছেন তাঁরা।

প্রতিবাদ জানায় বিপক্ষও। শাসক দলের নেতারা, সমর্থকরা দীপিকার ছবির টিকিট বাতিল করেন, দ্রুত তৈরি হয় #বয়কটছপাক হ্যাশট্যাগ। এ ছবির মুক্তির পর দীপিকার ওপর ঘৃণা যে হল ভাঙচুরের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে তা বলাই যায়। ক্ষতি নেই, কারণ ‘নিউ ইন্ডিয়ার’ অন্যতম ইউএসপি যে ঘৃণা আর বিদ্বেষ তা আমরা আগেই জেনেছি। যেটা নতুন জানলাম বলিউডে তৈরি হচ্ছে নতুন স্বর। তা হয়তো কাউকে খান-খান করতে পারে না, তা হয়তো ব্যারিটোন ভয়েসে ‘জয়’ এনে দিতে পারে না। কিন্তু ভিন্নমতকে বেআইনি করলে,তার পাল্টা জবাব দিতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Deepika Padukone Protest Bollywood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE