Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Newsletter

অভূতপূর্ব সাফল্যের পরেও তুচ্ছতায় আটকে রইলাম!

যেখান থেকে উঠে এসেছেন, যে পরিস্থিতির মধ্যে থেকে উঠে এসেছেন, যত দ্রুত উঠে এসেছেন, যেখানে উঠে এসেছেন— সবটা মিলিয়ে ইতিহাসকে ছাপিয়ে গিয়েছেন নগাঁওয়ের হিমা দাস। রূপকথাই একমাত্র নাম হতে পারে তাঁর আখ্যানটির।

বিশ্বমঞ্চে সোনা জিতে নিজের দেশেই ব্যঙ্গের শিকার অ্যাথলিট হিমা দাস।

বিশ্বমঞ্চে সোনা জিতে নিজের দেশেই ব্যঙ্গের শিকার অ্যাথলিট হিমা দাস।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৮ ০০:৩৮
Share: Save:

রূপকথার আদর্শ নমুনা। সুদূর প্রান্তের প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে। চাষি পরিবার। মেয়ে খেলতে চেয়েছিলেন ফুটবল। পরিকাঠামো না পেয়ে এলেন অ্যাথলেটিক্সে। মাত্র এক বছরের দৌড়, সোনা ফলিয়ে দিলেন হিমা দাস। ধান চাষির ঘরে আজ আক্ষরিক অর্থেই সোনার ফসল।

ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন উত্তর-পূর্ব ভারতের ১৮ বছের মেয়ে হিমা। অ্যাথলেটিক্সে অনূর্দ্ধ ২০ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ৪০০ মিটার দৌড়ে প্রথম হয়েছেন তিনি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের আসরে ট্র্যাক ইভেন্টে এই প্রথম সোনা পেলেন কোনও ভারতীয়। ইতিহাস সেখানে তো বটেই, জলজ্যান্ত ইতিহাস যেন হিমা দাস নিজেই, যেন আরও অনেক ইতিহাস গড়ার অপেক্ষায়। যেখান থেকে উঠে এসেছেন, যে পরিস্থিতির মধ্যে থেকে উঠে এসেছেন, যত দ্রুত উঠে এসেছেন, যেখানে উঠে এসেছেন— সবটা মিলিয়ে ইতিহাসকে ছাপিয়ে গিয়েছেন নগাঁওয়ের হিমা দাস। রূপকথাই একমাত্র নাম হতে পারে তাঁর আখ্যানটির।

কিন্তু হরিষে বিষাদও হানা দেয়। অভূতপূর্ব সাফল্যের মাঝে দাঁড়িয়েও আমরা তুচ্ছ বিষয়-আশয় ভুলে থাকতে পারি না। হিমা দাস ভাল ইংরেজি বলতে পারেন না। হিমার অসামান্য সাফল্যের মাঝেও সেই না পারার কাঁটা খচখচ করে বিঁধল ভারতীয় অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের বুকে। হিমা ইংরেজি ভাল বলতে পারেন না— দায় স্বীকারের ঢঙে ফেডারেশনের টুইটে সে কথা লেখা হল। সেমিফাইনালে জয়ের পরে মিডিয়ার সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলেন হিমা দাস। সেই ভিডিয়ো টুইটারে ছেড়ে ভারতীয় অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের তরফ থেকে অনেকটা মার্জনা চাওয়ার ভঙ্গিতে লেখা হল— হিমা ভাল ইংরেজি বলতে পারেন না, কিন্তু সেখানেও অসামান্য চেষ্টা দেখিয়েছেন। অর্থাত্ এই অসামান্য সাফল্যের মাঝেও ইংরেজি জানা বা না জানার মতো বিষয় বড় হয়ে উঠছে, সে নিয়ে সাফাই দিতে হচ্ছে। মাত্র এক বছর আগে অ্যাথলেটিক্সে নাম লেখানো হিমা ট্র্যাক ইভেন্টের বিশ্ব মঞ্চে ভারতের জন্য কত বড় সাফল্যের সৌধ গড়ছেন, সেমিফাইনালের পরেও উপলব্ধিতে তা আসেনি ফেডারেশন কর্তাদের। তখনও ইংরেজি ঠিক মতো না জানাটাকে সঙ্কোচের বিষয় বলে মনে হচ্ছিল ফেডারেশনের।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

হিমা গায়ে মাখেননি কোনও কিছুই। হিমা লক্ষ্যে অবিচল থেকেছেন। হিমার দৌড়টা স্বর্ণপদক পর্যন্তই পৌঁছেছে। আর তত ক্ষণে ভারতবাসী অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনকে ওই বালখিল্যসুলভ টুইটের জন্য কাঠগড়ায়ও তুলে দিয়েছে। ফাইনালে হিমার জয়ের পরে তাই টুইটারেই ত্রুটি স্বীকার করে নিয়েছে ফেডারেশন।

আরও পড়ুন: টুইট করে বিতর্কে জড়াল ফেডারেশন

আরও পড়ুন: মনে হচ্ছে স্বপ্ন, সোনা জিতে বললেন হিমা

ভুল-ত্রুটি হয়ে যাওয়া মানবিক লক্ষণ। ফেডারেশন ভুল করেছে, স্বীকারও করেছে। হিমার তুঙ্গস্পর্শী সাফল্যের মাঝে তাই ফেডারেশনকে আর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রেখে কাজ নেই। কিন্তু প্রশ্নটা তবু থেকেই যাবে। ইংরেজি ভাষায় ব্যুত্পত্তিকে আর কত দিন কৌলীন্যের চূড়ান্ত মাপকাঠি হিসেবে ধরা হবে ভারতীয় মানসিকতায়? স্বাধীনতার পরে সাত দশক কেটে গিয়েছে। আর কত দিন মনে মনে এ ভাবে পরাধীন হয়ে থাকবে ভারত? প্রত্যেক ভারতবাসীর উচিত নিজেকে এই প্রশ্নগুলো করা। প্রত্যেক ভারতবাসীর উচিত হিমা দাসকে নিয়ে গর্ব করা। আজ প্রত্যেক ভারতবাসীর উচিত অপারগতা সংক্রান্ত যাবতীয় অভিযোগ তুচ্ছ করে হিমা নামক রূপকথায় বুঁদ হয়ে যাওয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE