লড়াই যখন অন্যায় বা অসত্যের বিরুদ্ধে, তখন হাতিয়ারটা অন্যায় বা অসত্য হতে পারে না। যা অশিব বা অসুন্দর, তার প্রতিবাদ সেই অশিবের মাধ্যমেই হতে পারে না। অন্যায়ের প্রতিকার কখনও অন্যায়ের মাধ্যমে হয়নি, পৃথিবীর ইতিহাস তার সাক্ষী। বিলোনিয়ায় লেনিন মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদ যাঁরা করলেন কলকাতায় শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মূর্তি নষ্ট করার মাধ্যমে, তাঁরা ইতিহাসটা জানেন না।
ব্রিটিশরাজের বিরুদ্ধে ভারতে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন মহাত্মা গাঁধী। আন্দোলন অহিংস রাখা যায়নি। ১৯২২ সালে চৌরিচৌরা বীভত্স হত্যালীলার সাক্ষী হয়েছিল। বিন্দুমাত্র আপোস করেননি গাঁধী। আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করেছিলেন তত্ক্ষণাত্।
যে সময়ে গাঁধীজি আন্দোলনে ইতি টানার কথা ঘোষণা করেছিলেন, অহিংস অসহযোগ আন্দোলন তখন তীব্রতায় এবং প্রাবল্যে তুঙ্গস্পর্শী। গোটা ভারত স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল মহাত্মা গাঁধীর সিদ্ধান্তে। চৌরিচৌরার ভুলে গোটা ভারত কেন শাস্তি পাবে? সমগ্র দেশ যখন ব্রিটিশরাজ বিরোধী আন্দোলনে অভিভূত, দেশের অধিকাংশ এলাকাতেই যখন আন্দোলন অহিংসই, তখন চৌরিচৌরার হিংসাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেও তো দেখা যেতে পারে! একটা হিংসাত্মক কাণ্ডের জন্য সুবৃহত্ অহিংস আন্দোলনটা কেন স্তব্ধ করে দেওয়া হবে? এমনই অনেক প্রশ্নের অবতারণা সে দিন হয়েছিল গাঁধীজির সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে। কিন্তু মহাত্মা গাঁধী সিদ্ধান্ত বদলাননি।