Advertisement
E-Paper

এই মৃত্যুর সফর বন্ধ হবে কবে?

এলফিনস্টোন দেখিয়ে দিল, কাঁথাটা ছেঁড়া। শুধু তাই নয়, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এক নির্মম রসিকতা। যে রসিকতা প্রতি দিন প্রতি মুহূর্তে হাড়ে হাড়ে টের পান এ দেশের একটা বড় অংশের মানুষ।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৩১
মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সাক্ষী রইল মুম্বইয়ের এলফিনস্টোন স্টেশন। ছবি: পিটিআই।

মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সাক্ষী রইল মুম্বইয়ের এলফিনস্টোন স্টেশন। ছবি: পিটিআই।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রায়শই বলে থাকেন, বড় হতে গেলে স্বপ্নের পরিধিটাকেও বড় করা দরকার। বড় স্বপ্ন না দেখলে বড় হওয়া সম্ভব নয়। কথাটার মধ্যে দার্শনিক উচ্চতা কতটা, কতটাই বা বাস্তবের অপ্রাপ্তির দুঃখহর নিদান— তা নিয়ে তর্ক চলতেই পারে, তর্কপ্রিয় ভারতীয় যে তা করছেন না, তেমনটাও নয়। কিন্তু মুম্বইয়ের এলফিনস্টোন স্টেশনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা এবং এতগুলো মৃত্যু প্রাচীন প্রবচনটাকে আরও এক বার প্রাসঙ্গিক করে তুলল— লাখ টাকার স্বপ্ন দেখার আগে কাঁথাটি ছিন্নবিচ্ছিন্ন কি না, সেটা দেখে নেওয়া প্রয়োজন।

জাপানের হাত ধরে এই দেশে বুলেট ট্রেন নিয়ে আসছেন নরেন্দ্র মোদী, এই তথ্যটা দেশের পক্ষে উৎসাহব্যঞ্জকই। বুলেট শুধু একটি মাত্র ট্রেন নয়, বুলেট আসলে সামগ্রিক ভাবেই গগনচুম্বী আকাঙ্খার প্রতীক, নতুন ভারতের গতির দ্যোতক— এই কথাগুলোও এই দেশের সাধারণ মানুষ মেনে নিতে প্রস্তুত থাকবেন যখন তাঁদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে আর একটু মসৃণ হতে দেখবেন। যখন নিত্যনৈমিত্তিক জীবনযন্ত্রণার উপশমের কোনও লক্ষণ দেখেন এবং দেখেন বড় স্বপ্নের কোনও কারিগরকে— এই দেশের আম আদমি কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করেন তাঁর প্রতি। অন্যথা হলে বিকল্পের সন্ধান শুরু হয়।

এলফিনস্টোন দেখিয়ে দিল, কাঁথাটা ছেঁড়া। শুধু তাই নয়, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এক নির্মম রসিকতা। যে রসিকতা প্রতি দিন প্রতি মুহূর্তে হাড়ে হাড়ে টের পান এ দেশের একটা বড় অংশের মানুষ। সংবাদমাধ্যমের একটা অংশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, এলফিনস্টোন ফুটব্রিজের জন্য ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল সুরেশ প্রভুর নেতৃত্বাধীন রেল মন্ত্রক, শেষ পর্যন্ত জুটেছিল যদিও মাত্র ১০০০ টাকা। এই রসিকতা নির্মম ছাড়া আর কিছু?

বিরোধীরা বলছেন, বুলেট ট্রেনও এক নির্মম রসিকতা। বিরোধী-শাসকের রাজনৈতিক চাপানউতোরকে যদি পাশে সরিয়েও রাখা যায়, এই প্রশ্নটাকে সরানো যাবে কি, কেন এই মৃত্যুগুলো হল? কেন এখনও আমরা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন যাত্রা সুনিশ্চিত করতে পারলাম না? বুলেটস্বপ্ন দেখার আগে মৌলিক কৃতকর্তব্যগুলো করতে পারছি না কেন এখনও?

নয়ের দশকে চন্দ্রবাবু নায়ডু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে হায়দরাবাদ শহরকে যখন সাজিয়ে তুলছিলেন নতুন করে, যখন বিরোধীরা অভিযোগ তুলছিলেন, গোটা রাজ্যকে রক্তশূন্য করে হায়দরাবাদের মুখে সব রক্ত আনছেন নায়ডু, তখন শাসকের যুক্তি ছিল এই বৃহৎ স্বপ্নের। ২০০৪ সালে রাজ্যের অর্ধভুক্ত মানুষ কুর্সিটা উল্টে দিয়েছিলেন।

বুলেট ট্রেন আনুন নরেন্দ্র মোদী। একই সঙ্গে দেশের শরীর জুড়ে রক্তের প্রবাহকে শক্তিশালী করুন। দেশ সেটাই চায়। নরেন্দ্র মোদী বিচক্ষণ। তিনি নিশ্চয়ই বোঝেন দেশের মন কি বাত।

Newsletter অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Anjan Bandyopadhyay Elphinstone Station Stampede
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy