Advertisement
E-Paper

কাহার দায়

সমাজমাধ্যমের এই পরিণাম কী করিয়া হইল? মাধ্যমটি যে এই যুগে মহাশক্তিধর, বলিবার অপেক্ষা রাখে না।

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২০ ০০:০১
Share
Save

এক বৎসর পূর্বে এক সমীক্ষা তুলিয়া ধরিয়াছিল ফেসবুক-টুইটারের ন্যায় সোশ্যাল মিডিয়া বা সমাজমাধ্যমের অন্ধকার দিক। সমীক্ষায় ৬১ শতাংশ মানুষ বলিয়াছিলেন সমাজমাধ্যম অসঙ্গত আক্রমণের উৎস, ৫৫ শতাংশের মতে উহাতে মিথ্যার প্রচার হয়, ৫৭ শতাংশের দাবি তাহা মানুষে মানুষে বিভেদ ঘটায়। এক সাম্প্রতিক সমীক্ষাও দেখাইতেছে, ভারতে গত সাধারণ নির্বাচনের আগে হোয়াটসঅ্যাপের রাজনৈতিক গ্রুপগুলিতে ছড়াইয়া পড়া প্রতি আটটি ছবির একটি ছিল পুরাতন বা পরিপ্রেক্ষিতহীন ছবি, ইচ্ছাকৃত ভাবে ওই সময়ে বিদ্বেষ সৃষ্টি করিতে ব্যবহৃত। যে মাধ্যমের নামের সহিত ‘সমাজ’ বা ‘সামাজিক’-এর ন্যায় শব্দ জড়িত, তাহাই যাবতীয় অসামাজিক বিদ্বেষমূলক কাজের মাধ্যমে পর্যবসিত, রাজনীতির দুষ্ট কারবারিদের অস্ত্র হইয়া উঠিয়াছে।

সমাজমাধ্যমের এই পরিণাম কী করিয়া হইল? মাধ্যমটি যে এই যুগে মহাশক্তিধর, বলিবার অপেক্ষা রাখে না। শিক্ষা রুচি ও আর্থ-সামাজিক অবস্থান-নির্বিশেষে বহু নাগরিক সমাজমাধ্যমকেই তথ্যের প্রাথমিক ও প্রধান উৎস বলিয়া মনে করেন, হোয়াটসঅ্যাপে আসা তথ্য নিজেরা বিশ্বাস করিতে ও মুহূর্তে ছড়াইয়া দিতে দ্বিতীয় বার ভাবেন না। ফেসবুকে সংবাদের মোড়কে পরিবেশিত কোনও মন্তব্য পড়িয়া কেহ ভাবেন ইহা সত্য, কারণ অতি বিখ্যাত বা নিকটজন কেহ তাহা যখন শেয়ার করিয়াছেন, তাহা মিথ্যা হইবে কেন। সমাজমাধ্যমের এই আপাত-সর্বময় বিশ্বাসযোগ্যতার ঘরেই সিঁধ কাটিয়া প্রবেশ করে রাজনৈতিক ও অপরাপর স্বার্থসিদ্ধির কুমতলব। কিন্তু নাগরিকের দুর্বলতাই একমাত্র কারণ নহে। মাধ্যমের গঠনগত ত্রুটিও সমান দায়ী। ফেসবুক সংস্থার অডিটে অভিযোগ উঠিয়াছে, তাহার কার্যপদ্ধতির মধ্যেই এমন খামতি রহিয়াছে যাহার সুযোগ লইয়া নাগরিকের গোপনীয়তার স্বাধীনতা বা অন্য অধিকার ভঙ্গ করা যায়। এমন ঘটনা ঘটিয়াছেও বটে। সঙ্ঘবদ্ধ কোনও আক্রমণাত্মক ভিডিয়ো বা মন্তব্য সংস্থার কাছে ‘রিপোর্ট’ করিতে গিয়া সংখ্যালঘু, সমকামী বা বিশেষ ভাবে সক্ষম নাগরিকের কাছে অভিযুক্তকে ‘আনফ্রেন্ড’ বা ‘ব্লক’ করিবার যন্ত্রবদ্ধ স্বয়ংক্রিয় উত্তর আসিয়াছে, যেন উহাতেই মুশকিল আসান। সমাজমাধ্যম-ব্যবহারকারীর সমস্যাকে গুরুত্ব না দিবার এই প্রবণতা দুর্ভাগ্যজনক।

দায় কি তবে শুধু নাগরিকের? ভুয়া খবর যাহাতে তাঁহার মন বিষাইয়া না ফেলে, অজ্ঞাতসারে তাঁহাকেই অপরাধী বা শিকারে পরিণত না করে, সেই জন্য নাগরিককেই সবর্দা সতর্ক থাকিতে হইবে? তাঁহার দায়িত্ব নিশ্চয়, কিন্তু সমাজমাধ্যম সংস্থাগুলিকেও তাহাদের গঠন প্রকরণ পাল্টাইতে হইবে। এই কাজ জটিল ও দুরূহ, এবং নাগরিকের আয়ত্তের বাইরে। তাই দায়িত্ব লইতে হইবে সরকারকেও। সমাজমাধ্যম ব্যবহার ও সেখানে উপযুক্ত আচরণের দায় নাগরিকের, বলিয়া হাত ধুইয়া ফেলিলে চলিবে না। ইন্টারনেট, তথ্যপ্রযুক্তি তথা সমাজমাধ্যম ব্যবহার সংক্রান্ত আইন দেশ বা রাজ্যভেদে পৃথক, এবং অনেক সময়েই সমাজমাধ্যম সংস্থাগুলি তাহাদের জটিল কার্যপদ্ধতির সুবাদে আইনের পরিসর এড়াইয়া যায় বা লঙ্ঘন করে। এই দিকটি নজর রাখা দরকার। সমাজমাধ্যম সংক্রান্ত আইন পোক্ত করা প্রয়োজন। তাহাতে নাগরিকও সুবিধা পাইবেন, সমাজমাধ্যম সংস্থাগুলিও নিয়ন্ত্রণে থাকিবে।

Social media Hatred Fake News

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}