Advertisement
E-Paper

পুনশ্চ পুলিশ

অবশেষে বধূ-নির্যাতনবিরোধী আইনকে পূর্বের শক্তি ফিরাইয়া দিল সুপ্রিম কোর্ট। স্বামী ও তাঁহার আত্মীয়দের বধূ-নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হইবে কি না, সে সিদ্ধান্ত পুলিশের উপরেই ফের ন্যস্ত হইল, খারিজ হইল ‘পরিবার কল্যাণ কমিটি’।

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০০

অবশেষে বধূ-নির্যাতনবিরোধী আইনকে পূর্বের শক্তি ফিরাইয়া দিল সুপ্রিম কোর্ট। স্বামী ও তাঁহার আত্মীয়দের বধূ-নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হইবে কি না, সে সিদ্ধান্ত পুলিশের উপরেই ফের ন্যস্ত হইল, খারিজ হইল ‘পরিবার কল্যাণ কমিটি’। শীর্ষ আদালতে এই সত্য স্বীকৃতি পাইল যে, ৪৯৮-ক ধারাকে দুর্বল করিলে নির্যাতিত মেয়েদের প্রতি অবিচার হইবে। অভিযুক্তদের মানবাধিকার বা নাগরিক অধিকার রক্ষা করিতে হইবে বইকি। কিন্তু তাহার জন্য আগাম জামিন-সহ নানা আইনি ব্যবস্থা রহিয়াছে। গত বৎসর জুলাই মাসে সুপ্রিম কোর্ট একটি রায়ে বলিয়াছিল, নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগ এড়াইতে আইনজ্ঞ নাগরিকদের দ্বারা প্রস্তুত একটি কমিটি পূর্বে বধূ-নির্যাতনের অভিযোগের সত্যতা যাচাই করিবে। অতঃপর তাহা গ্রহণ করিয়া তদন্ত করিবে পুলিশ। বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ জানাইয়া দিল, নির্যাতনের অভিযোগের সত্যতা যাচাই করিবার কাজটি পুলিশকেই করিতে হইবে, অপর কাহারও সে অধিকার নাই। পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করিতে চাহিলে তাহাতেও বাধা রহিল না। সুপ্রিম কোর্টের রায় ইহাই প্রতিষ্ঠা করিল যে, আইনের ‘অপব্যবহার’ হইলে সে দোষ আইনের নহে। নিরপরাধকে গ্রেফতার করিলে অভিযুক্তের অধিকার লঙ্ঘন এবং মানহানিও হইয়া থাকে। তাহার প্রতিকার অন্যত্র। পুলিশকে স্বচ্ছ ও দ্রুত তদন্ত করিতে হইবে। সুপ্রিম কোর্ট তদন্তকারীর যথাযথ প্রশিক্ষণের নির্দেশও দিয়াছে।

১৯৮৩ সালে ফৌজদারি আইনে ৪৯৮-ক ধারাটি যুক্ত হইবার পর হইতেই তাহার বিরোধিতা শুরু হইয়াছে। বিরোধীদের প্রধান যুক্তি, আইনের অপব্যবহার করে মেয়েরা। অকারণে, অথবা সামান্য কারণে, শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে বধূ অভিযোগ করিলে স্বামী-শ্বশুরকে হয়রান করিতেছে পুলিশ। দ্বিতীয় যুক্তি, পরিবারে ভাঙন ধরিতেছে। পরিবারই ভারতীয় সমাজের ভিত্তিপ্রস্তর, আইন তাহাকে আঘাত করিলে ভারতীয় সমাজ নাকি প্রভূত ক্ষতিগ্রস্ত হইবে। বিভিন্ন আদালতও নানা রায়ে উল্লেখ করিয়াছে যে, ৪৯৮-ক ধারাটি অসন্তুষ্ট স্ত্রী তাহার শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে ‘অস্ত্রস্বরূপ’ ব্যবহার করিতেছে, নিজেকে বাঁচাইতে নয়। ইহার অপব্যবহারের ফলে ‘আইনি সন্ত্রাস’ ছড়াইতে পারে। তথ্য কিন্তু বলিতেছে, ভারতে বিবাহিত মহিলাদের চল্লিশ শতাংশই কোনও না কোনও প্রকার নির্যাতনের শিকার। তাঁহাদের এক হাজারে এক জনও ৪৯৮-ক ধারায় অভিযোগ করেন নাই।

আইনটির অপব্যবহারের যুক্তিও বিস্ময়কর। সমীক্ষা দেখায়, এই ধারার অধীন মামলার ৯০ শতাংশেই চার্জশিট দিয়াছে পুলিশ। তঞ্চকতা, অপহরণ, মানহানি প্রভৃতি ফৌজদারি ধারায় অনেক বেশি মামলা ভুয়া প্রমাণিত হইয়া থাকে। অথচ নির্যাতিত মেয়েরা আইনের আশ্রয় লইলে তাহা ‘বাড়াবাড়ি’ ঠেকিয়া থাকে। মেয়েরা প্রতিহিংসা চরিতার্থ করিতে স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের মামলা করিতেছে, অন্যায্য সুবিধা আদায় করিতে ধর্ষণ কিংবা যৌন হয়রানির মামলা করিতেছে, এমন ধারণা পুলিশ-প্রশাসন হইতে আইনজীবী, সকল মহলে প্রচলিত। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ এই বৈষম্যদুষ্ট ধারণাকে বাতিল করিল। অতঃপর প্রশ্ন, মেয়েদের সুবিচার দিবার দায়িত্বটি পুলিশ পালন করিবে তো?

Justice Women Dowry Section 498A Supreme Court of India
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy