মাধ্যমিকের সময়ে বিস্তর কান্নাকাটি করে বিয়ে রুখেছিল অন্নপূর্ণা (ছবিতে)। উচ্চমাধ্যমিকের পরে বিয়ে ঠিক হতে সে যখন ফের বেঁকে বসল, বাড়ির লোক বেজায় চটে গেল। মেয়ের বিয়ে কি সোজা? জল-জঙ্গলের জায়গা গোসাবা ব্লকের বালিদ্বীপ। গদখালি থেকে ডিঙিতে দুর্গাদোয়ানি পার করতে হয়। কাজ বলতে মাছ ধরা, নইলে মধু-কাঠের খোঁজে বনে যাওয়া। মণ্ডলপাড়া, আদিবাসীপাড়া, খ্রিস্টানপাড়ায় বাঘের থাবার চিহ্ন বৈধব্যের বেশে। খিদের জ্বালায় শালুক তুলতে গিয়ে কত মেয়ে যে সাপের কামড়ে মরেছে, তার হিসেব কেউ রাখে না।
এমন যে কঠিন ঠাঁই, সেখানে মেয়ে ‘পড়তে চাই’ বললেই হল? বাড়ি থেকে বলে দেওয়া হল, বিয়ে ভাঙলে বাপ-মা-মরা মেয়ের দায়িত্ব নেবে না পরিবার। যাঁরা কলেজে পড়াতে চান, দায়িত্ব পাড়ার সেই সব মেয়ে, স্কুলের সেই শিক্ষকদের।
অগত্যা বিজয়নগর আদর্শ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুকুমার পারিয়া আর তাঁর স্ত্রী বাড়িতে আনলেন অন্নপূর্ণাকে। কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহায়তায় অন্নপূর্ণা ভর্তি হল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ বছর সে সংস্কৃতে এমএ পাশ করল, ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে। নারী দিবসের অনুষ্ঠানে রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী, মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়, বালি ২ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান, গোসাবা থানার সেকেন্ড অফিসার যখন হাততালি দিচ্ছিলেন, ভারি লজ্জা পাচ্ছিল অন্নপূর্ণা। একটু পরেই সে সবার সঙ্গে অভিনয় করল একটি নাটকে। দেখাল, কেমন করে নাবালিকা বিয়ে আটকাচ্ছে বালিদ্বীপের মেয়েদের সংগঠন ‘বিজয়নগর দিশা’। এখন যার অন্যতম সদস্য অন্নপূর্ণা মণ্ডল।