Advertisement
E-Paper

অর্ধেক সমাধান

অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যমের নেতৃত্বে প্রস্তুত যে ষাণ্মাসিক আর্থিক সমীক্ষাটি কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক প্রকাশ করিল, তাহার মূল সুরটি একবাক্যে বলিয়া দেওয়া যায়: সাড়ে পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধির হারের দেওয়ালটি টপকাইতে হইলে ভারতের সম্মুখে জোড়া সমস্যা এবং অর্ধেক সমাধানসূত্র রহিয়াছে।

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০১

অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যমের নেতৃত্বে প্রস্তুত যে ষাণ্মাসিক আর্থিক সমীক্ষাটি কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক প্রকাশ করিল, তাহার মূল সুরটি একবাক্যে বলিয়া দেওয়া যায়: সাড়ে পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধির হারের দেওয়ালটি টপকাইতে হইলে ভারতের সম্মুখে জোড়া সমস্যা এবং অর্ধেক সমাধানসূত্র রহিয়াছে। ওই আধখানা সমাধানের প্রতি যত্নশীল হইলে কাজটি করিয়া ফেলা যাইবে। জোড়া সমস্যার প্রথমটি হইল, সরকার ব্যয় না বাড়াইলে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির হারের সাড়ে পাঁচ শতাংশের ঊর্ধ্বে যাওয়ার সম্ভাবনা নাই; ইহাই সমীক্ষার রচয়িতাদের মত। দ্বিতীয় সমস্যা, রাজস্ব আদায়ে বিপুল ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও অর্থ মন্ত্রক এই বৎসর রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ ৪.১ শতাংশে বাঁধিয়া রাখিতে বদ্ধপরিকর। বিলগ্নিকরণের মাধ্যমে হাতে যে টাকা আসিবে, তাহাতে এই লক্ষ্যের পথে বেশ কয়েক কদম হাঁটা যাইবে নিশ্চিত। তবুও, যেখানে রাজকোষ ঘাটতির চড়া লক্ষ্যমাত্রা পূরণের তাগিদ বর্তমান, সেখানে সরকার ব্যয় বাড়াইতে দ্বিধা করিবে বইকী। সমস্যা দুইটি এমন প্রত্যক্ষ ভাবে পরস্পরবিরোধী হইয়াই অর্থমন্ত্রককে বিপাকে ফেলিয়াছে।

এইখানেই আধখানা সমাধানসূত্রটির গুরুত্ব। আধখানাই, কারণ সেই পথটি এখনও অবধি সাফল্যে পৌঁছাইতে পারে নাই। পথটি সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের। ইউপিএ সরকার এই পথে দেশের পরিকাঠামোর উন্নতিসাধন ইত্যাদির চেষ্টা করিয়াছিল। ফল মেলে নাই। বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা কেন পরিকাঠামো ক্ষেত্রে নামিতে ভয় পান, সরকারের বাড়াইয়া দেওয়া সহযোগিতার হাত ধরিয়াও কেন পিছাইয়া আসেন, তাহার একটি প্রচলিত উত্তর আছে। অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম রচিত সন্দর্ভটিতেও সেই উত্তরটি রহিয়াছে। জমি অধিগ্রহণে সমস্যা হইতে বিবিধ সরকারি ছাড়পত্র পাওয়া, পরিবেশ ছাড়পত্রের ব্যবস্থা করা— এ দেশে বিনিয়োগের ঝামেলা অনেক। বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা তাহাতেই ভয় পান। অর্থ মন্ত্রক বর্তমানে যে জোড়া সমস্যার সম্মুখীন হইয়াছে, তাহা হইতে নিস্তার পাওয়ার পথ বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের এই ভীতি দূর করা। সার্বিক অর্থনৈতিক দূরদৃষ্টি নরেন্দ্র মোদীর আছে কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও অজ্ঞাত। কিন্তু, শিল্পের চাহিদাগুলি যে তিনি বোঝেন, তাহাতে সংশয় নাই। অতএব, জমি অধিগ্রহণের জট এড়াইবার যে প্রচেষ্টা আরম্ভ হইয়াছে, তাহা দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাইবে বলিয়া আশা করা চলে। সরকারি লালফিতার ফাঁস আলগা করিতেও প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ করিয়াছেন। কাজেই, শিল্পমহল ভরসা করিতে পারে। বস্তুত, বিনিয়োগকারীরা নিজেদের স্বার্থের প্রশ্নে যদি কোনও এক জন রাজনীতিককে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করেন, তবে তিনি নরেন্দ্র মোদী।

কিন্তু, পরিবেশের প্রশ্নটিকে অন্যান্য প্রশ্নের সহিত গুলাইয়া ফেলিলে চলিবে না। এই প্রশ্নটির ভিন্নতর গুরুত্ব প্রাপ্য। শিল্পকে সুবিধা করিয়া দিতে সেই গুরুত্ব লাঘব করিলে তাহার ফল বিষম হইবে। অভিজ্ঞতা বলিতেছে, পরিবেশের প্রশ্নটিতে কালক্ষেপের বৃহত্তম কারণ, বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন ভাবে প্রশ্নটিকে এড়াইয়া যাইতে চেষ্টা করেন। কোন ফাঁক গলিলে পাশ কাটাইয়া যাওয়া যাইবে, তাহাই মূল বিবেচ্য হইয়া দাঁড়ায়। শিল্পমহলকেও বুঝিতে হইবে, ইহা পলাইয়া বাঁচিবার বিষয় নহে। পরিবেশের প্রশ্নে সরকারি মানদণ্ড মানিয়াই চলিতে হইবে। কোন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পরিবেশের কোন দিকগুলি কতখানি মাথায় রাখিতে হইবে, কোন কাজ কখনও করা চলিবে না, কোন ন্যূনতম সীমা লঙ্ঘন করা যাইবে না, এই প্রশ্নগুলির উত্তর ভারতে এখনও যথেষ্ট স্বচ্ছ নহে। কথাটি কেন্দ্রীয় সরকারও জানে। স্বচ্ছ, দ্ব্যর্থহীন নির্দেশিকার ব্যবস্থা হউক। সেই নির্দেশিকার প্রতিটি শব্দ মানিয়া চলিতে হইবে। মানিলে, হাতে হাতে ছাড়পত্র মিলিবে। না মানিলে, কঠোর শাস্তি। অর্থনীতিকে অনিশ্চয়তার ধোয়াশায় আটকাইয়া রাখিবার ভুলটি আর না করাই বিধেয়।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy