Advertisement
E-Paper

আত্মঘাতী

নেপাল মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান জানাইলেন, এভারেস্টে যে পরিমাণ মলমূত্র ত্যাগ করিতেছেন অভিযাত্রীরা, তাহাতে ওই অঞ্চলে প্রভূত দূষণ ও অসুখ ছড়াইয়া পড়িতেছে। প্রতি ‘আরোহণ সিজন’-এ প্রায় দুই মাস ধরিয়া ৭০০-র অধিক অভিযাত্রী ও প্রশিক্ষক এভারেস্টের বিভিন্ন স্থানে প্রকৃতির আহ্বানে সাড়া দিয়া থাকেন, কিছু ক্ষেত্রে প্রকৃতিই তাহাতে প্রবল পর্যুদস্ত হন।

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৫ ০০:০৩

নেপাল মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান জানাইলেন, এভারেস্টে যে পরিমাণ মলমূত্র ত্যাগ করিতেছেন অভিযাত্রীরা, তাহাতে ওই অঞ্চলে প্রভূত দূষণ ও অসুখ ছড়াইয়া পড়িতেছে। প্রতি ‘আরোহণ সিজন’-এ প্রায় দুই মাস ধরিয়া ৭০০-র অধিক অভিযাত্রী ও প্রশিক্ষক এভারেস্টের বিভিন্ন স্থানে প্রকৃতির আহ্বানে সাড়া দিয়া থাকেন, কিছু ক্ষেত্রে প্রকৃতিই তাহাতে প্রবল পর্যুদস্ত হন। যাঁহারা এভারেস্ট আরোহণ করিতে চাহেন, তাঁহারা তাঁবু খাটাইয়া, অত্যাধুনিক সরঞ্জাম লইয়া, চড়িবার শিক্ষা ও অনুশীলনের প্রতি প্রখর মনোযোগ দিয়া, পার্বত্য পরিবেশ ও আবহাওয়ায় শরীর ও মনকে খাপ খাওয়াইয়া লইবার প্রক্রিয়া অবলম্বন করিয়া সর্ব প্রকারে নিজেদের প্রস্তুত করিয়া লন, কিন্তু এই বৃহৎ কর্মকাণ্ডের মধ্যে একটি কৃত্রিম কলঘর তৈয়ারি করিয়া লওয়ার কথা কাহারও মনে পড়ে না। অথচ পর্বতারোহণ এমন একটি ক্রীড়া বা শখ, যাহার সহিত পর্বতের পরিবেশ ও তাহার প্রাণিসম্পদের প্রতি সহমর্মিতা ওতপ্রোত। অন্য দিকে, এক সমীক্ষায় প্রকাশ হইল, সিরিয়া-য় ২০০৬ ও ২০০৯-এর মধ্যে যে ভয়াল খরা হইয়াছিল, তাহার ফলে প্রবল সংখ্যক মানুষ গ্রাম হইতে পলাইয়া শহরে আশ্রয় লইতে বাধ্য হন, এবং ২০১১-য় বাশার-আল-আসাদ’এর বিরুদ্ধে সিরিয়ার জনগণের প্রবল আন্দোলন ও বিক্ষোভের একটি বড় উপাদান এইটি। ওই প্রবল খরার অন্যতম প্রধান কারণও ছিল আবহাওয়ার স্বাভাবিক গতিপ্রকৃতির পথে মানুষের অনবরত বাধা ও খোদকারির প্রয়াস, ইহার সহিত মিলিয়াছিল সিরিয়ার সরকারের কৃষি ও জলসরবরাহ-বিষয়ক অসংখ্য ভুল সিদ্ধান্ত। আর প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষের শহরে আসিয়া উঠিবার ফলে যে পরিমাণ সামাজিক চাপ উৎপন্ন হইয়াছিল, তাহাতে মানুষের অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পাওয়া ছিল স্বাভাবিক। অন্যান্য বহু আক্রোশের কারণের সহিত ইহা মিলিয়া, অবশেষে গৃহযুদ্ধও বাধিয়া যায়।

আবহাওয়া যে মানুষের ইতিহাসকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করিতেছে, এমনকী তাহার ক্রোধ ও প্রশান্তিকেও, তাহা আমরা তত্ত্বগত ভাবে জানিলেও, প্রকৃত বাস্তববোধের অঙ্গনে, মানি না। এভারেস্টে উঠিবার সময়েই হউক, আর সিরিয়ায় নির্বিচারে বৃক্ষচ্ছেদনের সময়, কলিকাতায় অট্টালিকা প্রস্তুত করিবার সময়েই হউক আর গঙ্গাভ্রমণকালে নদীবক্ষে প্লাস্টিকের প্যাকেট নিক্ষেপ করিবার সময়, আমরা এই সকল কথা সহজেই বিস্মৃত হই। কেহ চেঁচাইলে ভাবি, তালি কুড়াইবার জন্য অধিক সচেতনতা প্রদর্শন করিতেছে। আসলে আমরা সকলেই মানসিক দৃষ্টিক্ষীণতার রোগী, একটি মুহূর্ত কাটাইবার কালে সেই মুহূর্তটির অধিক প্রায় কিছুই দেখিতে পাই না, একটি ক্রিয়ার ফলে কয়েক বৎসর বা দশক পরে পৃথিবীর কোন ক্ষতি হইবে, ইহা আমাদের ক্ষুদ্র বোধবৃত্তে তরঙ্গ তুলিতেই সমর্থ নহে। আমরা কোনও ঘটনাকে তাহার বৃহৎ প্রেক্ষিতে দেখিতেও অক্ষম। একটি চিপ্সের প্যাকেট ফেলিব, তাহাতে কী এমন হইয়াছে, সকলেই তো ফেলিতেছে বলিয়া আমরা দায়িত্বহীনতার আরামে স্নাত হইয়া অনায়াসে ‘সকলের’ দলে ভিড়িয়া যাই। এই প্যাকেট যে কতগুলি মাছের মৃত্যুর কারণ হইতে পারে, অনেকে এই রূপ প্যাকেট ফেলিলে ধীরে ধীরে পৃথিবীর জলস্তরে সর্বনাশা দূষণ অবশ্যম্ভাবী, এই সকল আমাদের মস্তকে ঢুকে না, আর ঢুকিলেও, ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবিয়া বর্তমানকে পীড়িত করিবার প্রতি আমাদের সমর্থন নাই। বুধবারে বসিয়া বৃহস্পতিবারের বৈকালের ওই-পারে দৃষ্টি মেলিবার প্রয়োজন কী? এই মূর্খ সমষ্টির তাই যাহা উচিত শিক্ষা, তাহাই হইবে। যে দিন প্রকৃতি তাহার ভয়াবহ প্রতিশোধটি লইবে, বন্যা, অগ্ন্যুৎপাত বা খরা আসিয়া এই গ্রহের প্রাণ উজাড় করিয়া নিকেশ করিবে, তখন প্রলয়কালে সেল্ফি তোলা ব্যতীত, অপরিণামদর্শী ও বারংবার সতর্কবাণী শুনিয়াও তাহা অন্য কান হইতে বাহির করিয়া দেওয়া প্রজাতির আর কিছুই করার থাকিবে না।

য ৎ কি ঞ্চি ৎ

কারা আবার যাদবপুরে লেনিনের মূর্তি নষ্ট করল। নাক আর থুতনির কিছুটা ভেঙে দিয়েছে। বোকারা বিপ্লবী সাজলে এই হয়। নকশালরা যখন বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছিল, তা একটা দুর্দান্ত নতুন কাণ্ড ছিল। লেনিনের মূর্তি সারা পৃথিবী জুড়ে ভাঙাভাঙি হচ্ছে প্রায় বছর কুড়ি হয়ে গেল, এখন ও-মূর্তি আস্ত থাকলেও ভেঙে-পড়া দেখায়। এ রাজ্যে তো বটেই। তা হলে হঠাৎ লেনিনের নাক কেটে খবরের যাত্রাভঙ্গ করার মানে কী? লেনিনকে ফের জনপ্রিয় করার ঘুর-পরিকল্পনা নয় তো?

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy