Advertisement
E-Paper

আপেল ও শাস্তি

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রায় দিলেন, সামরিক বাহিনীর মধ্যে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে কেহ জড়াইয়া পড়িলে, তাহা কখনওই চাকুরি হইতে তাঁহাকে বহিষ্কারের যথেষ্ট কারণ হইতে পারে না। দুইটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে একটি সম্পর্কে আবদ্ধ হইলে, তাহাতে জাতীয় সুরক্ষা বিঘ্নিত হয় কী করিয়া? ইতিপূর্বে এই ধরনের সম্পর্ককে সামরিক বাহিনীতে প্রায় অপরাধ বলিয়াই দেখা হইত, ‘ভ্রাতৃপ্রতিম’ অফিসারের পত্নীর সহিত কেহ প্রেম করিতে শুরু করিলে, তাঁহাকে বরখাস্ত করা হইয়াছে বহু বার।

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৫ ০১:৩৬

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রায় দিলেন, সামরিক বাহিনীর মধ্যে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে কেহ জড়াইয়া পড়িলে, তাহা কখনওই চাকুরি হইতে তাঁহাকে বহিষ্কারের যথেষ্ট কারণ হইতে পারে না। দুইটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে একটি সম্পর্কে আবদ্ধ হইলে, তাহাতে জাতীয় সুরক্ষা বিঘ্নিত হয় কী করিয়া? ইতিপূর্বে এই ধরনের সম্পর্ককে সামরিক বাহিনীতে প্রায় অপরাধ বলিয়াই দেখা হইত, ‘ভ্রাতৃপ্রতিম’ অফিসারের পত্নীর সহিত কেহ প্রেম করিতে শুরু করিলে, তাঁহাকে বরখাস্ত করা হইয়াছে বহু বার। ভারত রক্ষণশীল দেশ বলিয়া পরিচিত, কিন্তু সেই দেশের সর্বোচ্চ আদালত এমন রায় দিলে আশা জাগে, আবেগ ও যুক্তিকে গুলাইয়া না ফেলিবার শুভ প্রবণতা এবং ব্যক্তিস্বাধীনতাকে সম্মান করিবার সদিচ্ছা সমাজে সঞ্চারিত হইবে। এ দিকে, ফ্রান্সে, বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক করিবার একটি ‘ডেটিং সাইট’-এর বিজ্ঞাপন লইয়া প্রায় জাতীয় বিতর্ক শুরু হইয়া গিয়াছে। সাইট-টি কয়েক জন নারী মিলিয়া প্রস্তুত করিয়াছেন, বিবাহিত নারীদের নূতন প্রেমের সন্ধান দিবার জন্য। ইহার লোগো একটি অর্ধেক ভক্ষিত আপেল, অর্থাৎ জ্ঞানবৃক্ষের ফলটি খাওয়া হইয়াছে কিন্তু অন্য স্বাদের আকাঙ্ক্ষা জাগিতেছে এমন মুহূর্তের বান্ধবী এই সাইট। প্রবল প্রতিবাদ চলিতেছে, সাতটি শহর ইতিমধ্যেই বিজ্ঞাপনটিকে নিষিদ্ধ করিয়াছে। কেহ বলিতেছে, প্রকাশ্যে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ককে কাম্য বাতলাইয়া এই উদ্যোগ কেবল অনৈতিক কার্যই করিতেছে না, যাহারা এই রকম সম্পর্কের ফলে অশেষ কষ্ট পাইয়াছেন, তাহাদের বেদনাকে অপমান করিতেছে।

বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটিকে যেন তেন প্রকারেণ বাঁচাইয়া রাখিতে সমাজের প্রয়াসের অন্ত নাই। বিবদমান দম্পতি আদালতে যাইয়া বিচ্ছেদের আর্জি জানাইলেও আদালত কখনও ধমক দিয়া দুই জনকে পুরী বা দিঘা পাঠাইয়া দেন, নূতন করিয়া সম্পর্ক জোড়া দিবার চেষ্টা করিতে বলেন। এক জন বিবাহসূত্রে অপর এক জনের সহিত আবদ্ধ হইলে, এই বিপুল বিশ্বে আর কখনও কোনও মানুষের প্রতিই আকৃষ্ট হইবেন না: দাবিটি প্রায় সর্বত্রই পবিত্র অনুশাসন হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু বেদনা এড়াইতে গিয়া সত্যকে বিসর্জন দেওয়া যায় না। বিবাহ প্রচলিত হইবার মূল কারণ, পরিবারকে সমাজের একক হিসাবে পাইলে সুবিধা হয়, যৌন সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকিলে, সন্তানের সম্পত্তির অধিকার নির্ণয় সহজ হয়। কিন্তু উপযোগিতার খাতিরেও মানুষের স্বাধীনতাকে বিঘ্নিত করা চলে না। অনেকের মতে, বিবাহ-সম্পর্কে অবিশ্বস্ততা সমাজের কাঠামোটিতে ঘুণ ধরাইয়া দেয়, নৈতিক দূষণ ছড়ায়। কিন্তু অসুখী হৃদয় লইয়া ও সম্পর্কটিকে প্রতিনিয়ত ঘৃণা করিয়াও তাহার মধ্যে টিকিয়া থাকিবার অভ্যাস কি নীতিগত ভাবে অধিক দূষণের জন্ম দেয় না? স্বামী অন্য নারীর প্রতি আসক্ত হইয়া বিবাহ ভাঙিয়া দিলে স্ত্রী আত্যন্তিক কষ্ট পান, কিন্তু স্ত্রীর প্রতি মন উঠিয়া যাইবার পরেও এবং অন্য নারীকে প্রবল আকাঙ্ক্ষা করিবার পরেও কেবল সমাজের ভয়ে নিজেকে খর্ব করিবার অভ্যাসে স্বামীটিও কি আত্যন্তিক কষ্ট পান না? তাঁহার বেদনা মূল্যবান নহে কেন? সেই বেদনার প্রভাবে তাঁহার অন্য সামাজিক সম্পর্কগুলি আহত হইলে, তাহা কি সমাজের পক্ষে ভাল? আইন বা সমাজের রক্তচক্ষু কখনও মানুষের অনুরাগকে নিয়ন্ত্রণ করিতে পারে না, তাহা হইলে বিবাহের সহিত যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পার্থক্য থাকে না। ফ্রান্সে অনেকে অর্ধভক্ষিত ফলটিকে ইতিহাসের সুবিচার বলিতেছেন, কারণ বহু শতাব্দী ধরিয়া, বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়াইয়া পড়া নারীদের নির্বাসন দেওয়া হইয়াছে। সমাজেও অধিক সংখ্যক নারীই স্বামীদের অবিশ্বস্ততার শিকার। নারীস্বাধীনতার এই দৃষ্টিকোণটি কিঞ্চিৎ একঝোঁকা। বরং মুুক্তচিন্তার ধাত্রী ফ্রান্স ভারতের রায় হইতে শিখিতে পারে, নর-নারী নির্বিশেষে ব্যক্তির হৃদয় কুচকাওয়াজের আদেশ মানিয়া চলে না।

য ৎ কি ঞ্চি ৎ

কথা ছিল, কলকাতা লন্ডন হবে। সবাই জানে, লন্ডনের সব ফুটপাথ হকারে হকারে ছয়লাপ। এ ভাবে ছোট ছোট শিল্পকে মদত দিয়েছে বলেই তো লন্ডন মহানগরী হয়ে উঠতে পেরেছে। বড় বড় দোকানের মুখ ঢেকে, কেনাবেচা কমিয়ে ও পুঁজিবাদীদের বিরক্তি বাড়িয়ে প্রকৃত সোশালিস্ট বাতাবরণও কায়েম হয়েছে। তবে কলকাতার পুরো লন্ডন হতে এট্টু বাকি। হকারদের মুখে খই ফুটতে হবে নিখুঁত ইংরিজিতে। তা, মুখ্যমন্ত্রী ফ্রি কোচিং খুলে দেবেন নিশ্চয়ই, পরের পুরভোটের আগে।

sampadokiyo edit appel o shasti
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy