Advertisement
E-Paper

আলিঙ্গনের পরে

বারাক ওবামা নরেন্দ্র মোদীর স্বহস্তে প্রস্তুত চা পান করিবার জন্য বারো হাজার কিলোমিটার উড়িয়া আসেন নাই, দিল্লির রাজপথে সামরিক কুচকাওয়াজ এবং সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী দেখিবার জন্যও নহে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের এই ‘ঐতিহাসিক’ ভারত সফরের পিছনে এক এবং অদ্বিতীয় কারণ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ। স্বার্থ বহুমাত্রিক। প্রথম ও প্রধান মাত্রাটির নাম: চিন।

শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০০

বারাক ওবামা নরেন্দ্র মোদীর স্বহস্তে প্রস্তুত চা পান করিবার জন্য বারো হাজার কিলোমিটার উড়িয়া আসেন নাই, দিল্লির রাজপথে সামরিক কুচকাওয়াজ এবং সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী দেখিবার জন্যও নহে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের এই ‘ঐতিহাসিক’ ভারত সফরের পিছনে এক এবং অদ্বিতীয় কারণ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ। স্বার্থ বহুমাত্রিক। প্রথম ও প্রধান মাত্রাটির নাম: চিন। তাহার প্রমাণ রহিয়াছে এই সফর উপলক্ষে প্রকাশিত ভারত-মার্কিন যৌথ বিবৃতিতে। পূর্ব এশিয়ার সমুদ্রপথের এবং আকাশযাত্রার নিরাপত্তা রক্ষায় দুই দেশের সহযোগিতার অঙ্গীকারেই বিবৃতি থামে নাই, সরাসরি ‘বিশেষত সাউথ চায়না সি’ অঞ্চলে সহযোগিতায় জোর দিয়াছে। সাউথ চায়না সি’তে গত কয়েক বছরে চিনের আগ্রাসী নীতির প্রেক্ষিতে এই বিবৃতির তাত্‌পর্য অতি স্পষ্ট। চিন সেই তাত্‌পর্য বুঝিতে কিছুমাত্র ভুল করে নাই। বেজিং সচরাচর কোনও বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাইতে অন্তত আঠারো মাস সময় লইয়া থাকে, অথচ ওবামা-মোদী কূটনৈতিক অভিযানকে ‘অগভীর’ বলিয়া বাতিল করিবার জন্য তাহার চব্বিশ ঘণ্টাও লাগে নাই। প্রেসিডেন্ট ওবামার ‘এশিয়ান পিভট’ ইতিমধ্যে বহুচর্চিত ওয়াশিংটন এশিয়ার পশ্চিম হইতে পূর্বের প্রতি মনোযোগ বাড়াইতে চাহে, কারণ চিনের ক্রমবর্ধমান দাপট প্রতিহত করা তাহার পক্ষে জরুরি।

ভারতকে চিনের প্রতিপক্ষ হিসাবে খাড়া করিয়া মার্কিন কূটনীতি এশিয়া তথা দুনিয়ার রণাঙ্গন সামলাইতে চাহিতেছে, এমন নহে। ভারতের সেই সামর্থ্য নাই, প্রবল প্রতিবেশীর সহিত শত্রুতা তাহার আপন স্বার্থের অনুকূলও নহে। মোদীকে শি চিনফিংয়ের সহিত কূটনৈতিক সহযোগিতার আয়োজন করিতে হইবে, যেমন তাঁহাকে ভ্লাদিমির পুতিনকেও পাশে রাখিতে হইবে। কিন্তু চিনের প্রশ্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহিত ভারতের স্বার্থের যে সাযুজ্য, তাহা দিল্লির পক্ষে সুবিধাজনক। পারমাণবিক বিদ্যুত্‌ সংক্রান্ত জট খুলিয়া ভারতকে সাহায্য করিবার যে তত্‌পরতা ওবামার তরফে দেখা গেল, তাহা এই সত্যেরই প্রমাণ। ভারত-মার্কিন সম্পর্কে গত কয়েক বছরের শৈত্যপ্রবাহ দূর করিবার পিছনে নরেন্দ্র মোদী কিছুটা কৃতিত্ব নিশ্চয়ই দাবি করিতে পারেন, আন্তর্জাতিক কূটনীতির বাস্তবতা এবং মার্কিন স্বার্থের আনুকূল্যকে তিনি দ্রুত কাজে লাগাইয়াছেন এবং আবারও বুঝাইয়া দিয়াছেন যে, দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের অকর্মণ্যতাই তাহার প্রকৃত সমস্যা ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদী সম্ভবত জানেন, আলিঙ্গন এবং উপহার বিনিময়ের পরে প্রকৃত দায়িত্ব পালনের পর্ব শুরু হয়। মার্কিন বিনিয়োগ যদি আনিতে হয়, তবে ভারতীয় অর্থনীতিকে যথেষ্ট সচল এবং দক্ষ হইতে হইবে, তাহা না হইলে ব্যবসায়িক সম্পর্ক প্রসারের অঙ্কগুলি অঙ্কই থাকিয়া যাইবে।

মোদী সম্ভবত ইহাও বুঝিয়াছেন যে, তাঁহার ভারত সম্পর্কে ওবামা কিছু কুশলী প্রশ্নচিহ্নও রাখিয়া গেলেন। পরিবেশ দূষণের, বিশেষত গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের, নিয়ন্ত্রণে ভারত যথেষ্ট তত্‌পর নহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযোগ বহুশ্রুত। বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রতিরোধের জন্য চিনের সঙ্গে তাহারা সম্প্রতি যে যৌথ ঘোষণা করিয়াছে, ভারতের সহিত তাহার অনুরূপ কিছু হয় নাই, হইবার প্রত্যাশাও ছিল না। কিন্তু এই বিষয়ে দিল্লির উপর ওয়াশিংটনের চাপ বজায় আছে এবং থাকিবে। ঠিক যেমন চাপ থাকিবে মানবাধিকার সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনের। নরেন্দ্র মোদী একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরে এই দায়িত্বে নূতন মাত্রা যুক্ত হইয়াছে: সংকীর্ণ অর্থে সংখ্যালঘুর স্বার্থ রক্ষার দায়িত্ব, বৃহত্তর অর্থে বহুত্বের মর্যাদা ও অধিকার রক্ষার। দিল্লিতে তাঁহার শেষ অনুষ্ঠানে ওবামা যে এই বহুত্বের উপর জোর দিয়াছেন, তাহাকে ‘উদ্দেশ্য-প্রণোদিত’ মনে না করার কোনও কারণ নাই।

anandabazar editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy