Advertisement
E-Paper

গোহিংসা

গো রক্ষার আশ্চর্য দৃষ্টান্ত দেখাইল ভারতীয় জনতা পার্টি শাসিত রাজস্থান সরকার। একটি সরকারি গোশালায় কর্মীদের হরতালের জেরে তিন সপ্তাহে ৫০০ গরু প্রাণ হারাইয়াছে।

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৬ ০০:০৮

গো রক্ষার আশ্চর্য দৃষ্টান্ত দেখাইল ভারতীয় জনতা পার্টি শাসিত রাজস্থান সরকার। একটি সরকারি গোশালায় কর্মীদের হরতালের জেরে তিন সপ্তাহে ৫০০ গরু প্রাণ হারাইয়াছে। সরকারের দাবি, মরণাপন্ন অবস্থাতেই রাস্তা হইতে ওই সকল গরুকে ‘উদ্ধার’ করিয়া গোশালায় ‘আশ্রয়’ দেওয়া হইয়াছিল। মানিতেই হইবে, গোমাতার সন্তানরা মানবমাতার প্রতি যে আচরণ করেন, তাহাই গরুর প্রতি করিয়াছেন। জননী স্বর্গাদপি গরীয়সী, তবু কাশী বৃন্দাবনে ভিখারিনি হইয়া অনেককে শেষ জীবন কাটাইতে হয়। অধিকাংশ ‘রত্নগর্ভা’ অপুষ্টি, অচিকিৎসা লইয়া বাঁচিয়া থাকেন। গরুরও সেই দশা। কেহ গরু মারিয়াছে, কি গোমাংস খাইয়াছে, সন্দেহ হইলেই মারধরে যাহাদের উৎসাহের অন্ত নাই, অনাহার, অবহেলায় গরু মরিলে তাহারা ফিরিয়াও তাকায় না। মৃত গরুর চামড়া ছাড়াইবার জন্য গুজরাতে চার দলিত যুবক প্রহৃত হইলেন, মহিষের মাংস বিক্রয় করিতে গিয়া মধ্যপ্রদেশে দুই মহিলা মার খাইয়া গ্রেফতার হইলেন, হরিয়ানাতে গোমাংস ফ্রিজে রাখিবার অপরাধে এক ব্যক্তি প্রাণ হারাইলেন। এমন সন্তান থাকা সত্ত্বেও এক হাঁটু গোবর ও কাদায় দাঁড়াইয়া, চিকিৎসা ও খাদ্যের অভাবে পাঁচশত গরুকে মরিতে হইল। ইহাতে সম্ভবত হিন্দুত্বের ক্ষতি হয় নাই, কারণ ওই মৃত গরুগুলির মাংস কেহ খায় নাই।

হিন্দুর গোভক্তির ঢক্কানিনাদে কান ঝালাপালা, কিন্তু চোখ খুলিলেই অভক্তির নিদর্শন। ভারতে অগণিত অবৈধ ডেয়ারি, তাহাদের কর্তারা গরুদের প্রতি অতি নিষ্ঠুর। গরুদের বিশেষ রাসায়নিক ইঞ্জেকশন দিয়া, মেশিনের দ্বারা দুধ বাহির করিয়া অতিরিক্ত দুধ উৎপাদন চলিতেছে। অতি সংকীর্ণ স্থানে আটকাইয়া রাখিবার ফলে গরুরা চলচ্ছক্তি হারাইতেছে। ময়লায় গাদাগাদি করিয়া থাকিবার ফলে অসহায় প্রাণীগুলি চর্মরোগ, টিবি প্রভৃতি অসুখে ভুগিতেছে। পুষ্টিকর গোখাদ্য বিষয়েও কাহারও মাথাব্যথা নাই। শহরের রাস্তায় গরু ছাড়িয়া দিবার ফলে বর্জ্যগুলিই গরু খাইতেছে, ফলে প্রচুর প্লাস্টিক তাহাদের শরীরে প্রবেশ করিতেছে। দেশের নানা স্থানে প্রাণী-চিকিৎসকরা বহু অসুস্থ গরুর অস্ত্রোপচার করিয়া পেট হইতে কঠিন পিণ্ডে পরিণত প্লাস্টিক উদ্ধার করিয়াছেন। দীর্ঘদিন ধরিয়া গরুর পেটে প্লাস্টিক জমা হইলে তাহার রাসায়নিক দুধেও বিষক্রিয়া ঘটাইতে পারে। ভারতের শহরগুলিতে দুধ যে দূষিত, তাহা বার বার নানা পরীক্ষায় ধরা পড়িয়াছে। জনস্বার্থ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট ইহার প্রতিকারের নির্দেশও দিয়াছে। কিন্তু বাস্তবে তাহার ফল হইয়াছে সামান্য। চাহিদা অপেক্ষা দুধের জোগান কম, তাই দুগ্ধ উৎপাদকদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করিয়াও হার মানিতে হইয়াছে।

মহাভারতে যুধিষ্ঠির বলিয়াছিলেন, অনৃশংসতাই ধর্ম। গরুর প্রতি হিন্দুত্ববাদীদের আচরণ দেখিলে বোঝা যায়, গরুর প্রতি সম্মানের ধুয়া তুলিয়া তাঁহারা বস্তুত অধর্ম করিতেছে। গোহত্যার আরোপ আনিয়া অপরের প্রতি হিংসার সুযোগ খুঁজিতেছেন। গরুর উপরও নির্যাতন করিতেছেন। গোমাতার সন্তানদের মনে রাখিতে হইবে, গরুর প্রতি ভালবাসা কোনও ধর্মের কুক্ষিগত নহে। বাংলার মনোজগতে যে চরিত্রটি গরুকে সন্তানের মতো ভালবাসিবার জন্য অমর হইয়া আছে, সে গফুর মিঞা। গোচারণভূমি বেচিয়া দিয়া নিষ্ঠাবান হিন্দু জমিদারই আদরের গরুটির মৃত্যু অবধারিত করিয়াছিল। আজ মহেশ মরিলে গফুরকে গণপিটুনিতে মরিতে হইত, তাহাতে সন্দেহ নাই।

Editorial Cow Vigilantes
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy