দুনিয়ার প্রথম ২০টি শহরের মধ্যে ১৩টিই ভারতে। বায়ুদূষণের নিরিখে বিপজ্জনকতম শহরের তালিকায়। দিল্লি তালিকার শীর্ষে রহিয়াছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক রিপোর্টে জানা গেল। সরকারি কর্তারা অবশ্য রিপোর্ট মানিতে নারাজ। দিল্লির বায়ুদূষণ যে বেজিং-এর তুলনায় কম, এই কথাটি তাঁহারা বহুবিধ পন্থায় বুঝাইতে সচেষ্ট হইয়াছেন। যেন প্রথম না হইয়া দ্বিতীয় হইলেই আর চিন্তার কোনও কারণ থাকে না! বালিতে মুখ গুঁজিবার এই প্রবণতাই জরুরি কাজগুলির পথে বাধা হইয়া দাঁড়ায়। এখনই যেমন বায়ুদূষণের এই প্রাবল্যকে অস্বীকার না করিয়া ভাবা উচিত, কোন পথে এই প্রাণঘাতী সমস্যার— ভারতে প্রতি বৎসর যে কারণগুলিতে সর্বাধিক মৃত্যু ঘটে, বায়ুদূষণ সেই ক্রমতালিকায় পঞ্চম স্থানে— সমাধান সম্ভব। শহরাঞ্চলে এই লাগামছাড়া দূষণের প্রধান উৎস পরিবহণ। বিশেষত ব্যক্তিগত পরিবহণ। দূষণ নিয়ন্ত্রণের যে মান আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত, সেই ইউরো ৪-এর সমতুল ভারত ৪ এখনও দেশের বেশির ভাগ শহরেই চালু হয় নাই। গোটা দেশে অবিলম্বে ভারত ৪ মাপকাঠি চালু করিতে হইবে এবং অতি দ্রুত তাহার পরবর্তী ধাপগুলিতে পৌঁছাইতে হইবে। নেতারা বাস্তব অস্বীকার না করিয়া বরং কাজ করুন।
দূষণ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা যেমন কঠোর হওয়া প্রয়োজন, তেমনই ব্যক্তিগত পরিবহণের পরিবর্তে গণপরিবহণের উপর জোর দিতে হইবে। অবশ্য, তাহার জন্য গণপরিবহণের চেহারাটিও ভদ্রজনোচিত হওয়া বিধেয়। যাঁহাদের নিজস্ব গাড়িতে যাতায়াত করিবার সামর্থ্য এবং অভিরুচি আছে, তাঁহাদের কলিকাতার হতশ্রী বাস-ট্রাম-মেট্রোয় যাতায়াত করিতে বলিলে বৃথা মুখব্যাদন হইবে। গণপরিবহণের উন্নতি করিতে হইবে। মদন মিত্ররা জানিলে দুঃখ পাইবেন, কিন্তু তাঁহাদের সস্তা রাজনীতির প্রতি মোহ এই উন্নতির পথে বৃহত্তম বাধা। গণপরিবহণ যতক্ষণ সম্পূর্ণ লাভজনক না হইতেছে, তাহার উন্নতির আশা বৃথা।
কলিকাতার মেট্রো রেলের সহিত দিল্লির মেট্রো রেলের কোনও তুলনাই হয় না। ইদানীং বাসগুলিরও চেহারা ফিরিয়াছে। তদুপরি, গত এক দশকেরও বেশি সময় দিল্লির গণপরিবহণ সিএনজি-তে চলে। প্রশ্ন উঠিবে, তবুও দিল্লিই পৃথিবীর বায়ুদূষণ রাজধানী কেন? তাহার দুইটি— পরস্পর সংযুক্ত— উত্তর। এক, যে গতিতে গণপরিবহণের উন্নতি হইয়াছে, বহু মানুষের আর্থিক উন্নতি তাহার তুলনায় দ্রুততর হইয়াছে। ব্যক্তিগত সমৃদ্ধির সহজতম বহিঃপ্রকাশ গাড়ি কেনা। দিল্লিতেও ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বিপজ্জনক হারে বাড়িতেছে। দ্বিতীয়ত, শহরটি ছড়াইয়া গিয়াছে। গুরগাঁও, নয়ডা, গাজিয়াবাদ, ফরিদাবাদের মতো উপনগরীতে জনসংখ্যা ক্রমে বাড়িতেছে। বহু মানুষ প্রতি দিন শতাধিক কিলোমিটার গাড়ি চালাইতেছেন। ফলে, দূষণও বাড়িতেছে। স্পষ্টতই, এই সমস্যার সার্বিক সমাধান চাই। নগর পরিকল্পকরা ভাবিয়া দেখিবেন, কী ভাবে প্রাত্যহিক যাতায়াতের দৈর্ঘ্য কমানো সম্ভব। গণপরিবহণের উন্নতি ঘটিয়াছে, আরও উন্নতিসাধন সম্ভব। তবুও যাঁহারা ব্যক্তিগত পরিবহণেই স্বচ্ছন্দ, তাঁহাদের প্রভূত কর প্রদানে বাধ্য করিতে হইবে। এমন কর, যাহাতে নিজস্ব গাড়িতে যাতায়াতের বিকল্পটি বহু গুণ খরচসাপেক্ষ হইয়া উঠে। শহরের কিছু অঞ্চলে ব্যক্তিগত গাড়ির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যাইতে পারে। অন্যত্র বিপুল প্রবেশ কর চালু করা বিধেয়। তবে, যাহা করিবার, অবিলম্বে করিতে হইবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy