Advertisement
E-Paper

দখলনামা

লো ককথার সেই সুযোগসন্ধানী উটও সামান্য সৌজন্য জানিত। তাঁবুর মালিককে সে তাঁবুছাড়া করিয়াছিল ঠিকই, কিন্তু গোড়ায় তাঁবুমধ্যে নিজ নাসিকাটি গলাইবার অনুমতিটুকু চাহিয়াছিল।

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০

লো ককথার সেই সুযোগসন্ধানী উটও সামান্য সৌজন্য জানিত। তাঁবুর মালিককে সে তাঁবুছাড়া করিয়াছিল ঠিকই, কিন্তু গোড়ায় তাঁবুমধ্যে নিজ নাসিকাটি গলাইবার অনুমতিটুকু চাহিয়াছিল। কিন্তু কেন্দ্রের বর্তমান সরকার, সেই সামান্য সৌজন্যটুকুও ভুলিয়াছে। তাহাদের আকাশচুম্বী অসৌজন্যের তালিকায় নব-তম সংযোজন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতিকে সরকার পুনর্গঠন করিয়াছে। কিন্তু চ্যান্সেলরের সঙ্গে কোনও আলোচনা করে নাই। ফল, চ্যান্সেলর জর্জ ইয়ো পদত্যাগ করিয়াছেন। তিনি বিস্মিত, অপমানিত। বিস্ময়, কারণ দায়িত্ব গ্রহণের সময় সরকারের তরফ হইতে স্বশাসনের আশ্বাস মিলিয়াছিল। অপমান, কারণ কার্যক্ষেত্রে সেই আশ্বাস মিথ্যা প্রমাণিত। এখন ভারতের সর্ব ক্ষেত্রে মোদী সরকারের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক যে এইরূপ দুর্বার গতিতে ছড়াইয়া পড়বে, তাহা ইয়ো-র জানিবার কথা নয়। জানিলে, দায়িত্ব লইবার পূর্বে তিনি হয়তো দুই বার ভাবিতেন।

ভাবিতে বাধ্য হইয়াছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনও। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি জর্জ ইয়ো-র পূর্বসূরি এবং ‘আইডিয়া অব নালন্দা’র রূপকারও বটে। গত বৎসরই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর পদ হইতে ইস্তফা দেন সরকারের অযাচিত হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে। কিন্তু পরিচালন সমিতির অংশ ছিলেন। সেই পরিচালন সমিতি ভাঙিয়া দিবার পর তাঁহাকে দায়িত্ব হইতে অব্যাহতি দেওয়া হইয়াছে। তাঁহার সঙ্গেই বাদ পড়িয়াছেন ইতিহাসবিদ সুগত বসুও। তর্ক উঠিতে পারে, সরকার তো বেআইনি কিছু করে নাই। বিশ্ববিদ্যালয় আইনই সরকারকে সমিতি পুনর্গঠনের অধিকার দিয়াছে। এবং সরকার তাহা করিতে পারে, চ্যান্সেলর-এর সঙ্গে আলোচনা না করিয়াই। সরকার তাহাই করিয়াছে। তাহা সত্ত্বেও আপত্তির কারণ আছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা সরকারের কাজ নহে। উহা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের কাজ। সরকারের হস্তক্ষেপ যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনসম্মতও হয়, তবে তো সেই আইনে পরিবর্তন আনা দরকার। কিন্তু তাহা ভবিষ্যতের কথা। আইন আছে বলিয়াই সেই আইন ব্যবহারের অভিপ্রায় যখনতখন জাগিয়া উঠবে— ইহা চলিতে পারে না।

অবশ্য ভারতে শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি আধিপত্য বিস্তারের অপচেষ্টা কিছু নূতন ঘটনা নহে। প্রায় সব সরকারই নিজ দলীয় রংটি শিক্ষার গায়ে জবরদস্তি চাপাইতে চাহে। পশ্চিমবঙ্গে বাম আমলে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হইতে শুরু করিয়া গ্রামের পাঠশালা অবধি সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থার নাড়িনক্ষত্র নির্ধারণ করিত আলিমুদ্দিন। বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী আবার কয়েক ধাপ অগ্রসর হইয়া প্রায়শই প্রকাশ্যে ঘোষণা করিতেছেন— শিক্ষকদের বেতন তাঁহারা দেন, সুতরাং নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠিটিও তাঁহাদেরই হাতে থাকিবে। বিভিন্ন দলের জমানায় কেন্দ্রীয় সরকারও নানা ভাবে একই পথে হাঁটিয়াছে। তবে বর্তমান বিজেপি চালিত সরকার ইহাদের সকলকে ছাপাইয়া রং-রাজনীতির এক অভূতপূর্ব নজির গড়িতেছে। পুণে ফিল্ম ইনস্টিটিউট, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব হিস্টরিক্যাল রিসার্চ— সেই নজিরের তালিকা দীর্ঘ হইতে দীর্ঘতর। বস্তুত, এই দিগ্বিজয়ে অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন পূর্ববর্তী এনডিএ সরকার হইতে মোদী বহু যোজন অগ্রসর হইয়াছেন। নালন্দা তাঁহার শিক্ষা-সাম্রাজ্যে সাম্প্রতিকতম সংযোজন।

Central Government Nalanda University George Yeo
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy