Advertisement
E-Paper

ভিত্তির প্রশ্ন

মূল্যস্ফীতির হার যখন নিম্নগামী, তখন সুদের হারই বা কমিবে না কেন? ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজনের উদ্দেশে এই প্রশ্নটি, জোর গলায় না হইলেও, পেশ করা হইতেছে। যেখানে চোরাবালি থাকিবার সম্ভাবনা, সেখানে রাজন মাপিয়া পা ফেলিতে চাহেন।

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০১

মূল্যস্ফীতির হার যখন নিম্নগামী, তখন সুদের হারই বা কমিবে না কেন? ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজনের উদ্দেশে এই প্রশ্নটি, জোর গলায় না হইলেও, পেশ করা হইতেছে। যেখানে চোরাবালি থাকিবার সম্ভাবনা, সেখানে রাজন মাপিয়া পা ফেলিতে চাহেন। কেন তিনি এখনই সুদের হার কমাইতেছেন না, রাজন তাহা ব্যাখ্যা করিয়াছেন। তাঁহার সংশয় ‘বেস এফেক্ট’ লইয়া। তিনি জানাইয়াছেন, আগামী জানুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতির হার দেখিয়া তিনি বুঝিবেন, সুদের হার সত্যই কমানো চলে কি না। কারণ, তাহার পূর্বে, ২০১৪ সালের বারো মাস জুড়িয়া, মূল্যস্ফীতি যতখানি কমিয়াছে, তাহার একটি প্রধান কারণ ‘বেস এফেক্ট’।

মূল্যস্ফীতি মাপা হয় দুইটি ভিন্ন সূচকে। প্রথমটি পাইকারি মূল্যসূচক, দ্বিতীয়টি ভোগ্যপণ্য মূল্যসূচক। প্রথমটি পাইকারি বাজারের দামের হিসাব, দ্বিতীয়টি ক্রেতার, খুচরা বাজারের হিসাব। দ্বিতীয় সূচকটি আবার কৃষি শ্রমিক, গ্রামীণ অ-কৃষি শ্রমিক ও শিল্প শ্রমিক, এই তিনটি শ্রেণির জন্য পৃথক ভাবে হিসাব করা হয়। পূর্বনির্দিষ্ট বিভিন্ন পণ্যের দাম এবং অর্থনীতিতে বা ক্রেতার ভোগের ক্ষেত্রে তাহার আনুপাতিক গুরুত্ব, এই দুইটি বিষয়কে মাথায় রাখিয়া সূচকের হিসাব কষা হয়। সূচক হিসাব করিবার জন্য কোনও একটি নির্দিষ্ট বৎসরের মূল্যস্তরকে ভিত্তি ধরা হয়। ধরিয়া লওয়া হয়, সেই বৎসর মূল্যসূচক ছিল ১০০। তাহার পর, প্রতি বৎসর যে ভাবে পণ্যের দাম বাড়ে, মূল্যসূচকও সে ভাবেই বাড়িতে থাকে। মূল্যস্ফীতির নির্দেশক রূপে যে অঙ্কটি আলোচনার কেন্দ্রে থাকে, তাহা এই সূচকের বৃদ্ধির হার। সংখ্যাটি চরম নহে, আপেক্ষিক। অর্থাৎ, তাহার বিচার হয় গত বৎসরের তুলনায়। ধরা যাউক, কোনও পর পর তিন বৎসর মূল্যস্ফীতির সূচকটি যথাক্রমে ১০০, ১৫০ এবং ২০০ হইল। হিসাব বলিবে, প্রথম বর্ষের তুলনায় দ্বিতীয় বর্ষে সূচক বাড়িয়াছে ৫০ শতাংশ, এবং দ্বিতীয় বর্ষের তুলনায় তৃতীয় বর্ষে বৃদ্ধি ৩৩.৩ শতাংশ। অর্থাৎ, তৃতীয় বর্ষে মূল্যস্ফীতি অপেক্ষাকৃত কম। প্রকৃত প্রস্তাবে কিন্তু সূচক বাড়িয়াছে সমান, প্রতি বৎসর ৫০ করিয়া (মূল্যসূচক সত্যই এমন লাফাইয়া বাড়িলে অর্থনীতির সমূহ বিপদ! অঙ্কগুলি নেহাতই হিসাব দেখাইবার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হইয়াছে)। প্রথম বর্ষের তুলনায় তৃতীয় বর্ষে জিনিসের দাম দ্বিগুণ হইলেও মূল্যস্ফীতির হার নিম্নমুখী হইয়াছে বলিয়া কেহ আহ্লাদ করিতেই পারেন। গত বৎসরে সূচক চড়িয়া থাকিলে এই বৎসর তাহার বৃদ্ধির হার কম ঠেকিবে, আর গত বৎসর সূচক নিচু স্তরে থাকিলে এই বৎসর মূল্যস্ফীতির হার চড়া হইবে— অর্থনীতির এই প্রাথমিক পাঠেরই পোশাকি নাম ‘বেস এফেক্ট’।

২০১৩ সাল জুড়িয়া ভারতের বাজারে আগুন লাগিয়াছিল। কেবল ডিসেম্বর ব্যতীত বৎসরের এগারো মাসই ভোগ্যপণ্যের মূল্যসূচকের বৃদ্ধির হার ১০ শতাংশের ঊর্ধ্বে ছিল। এই বৎসর জানুয়ারি হইতেই তাহা নিম্নমুখী। প্রথম আট মাস সাত শতাংশের আশেপাশে থাকিলেও অক্টোবরে তাহা পাঁচ শতাংশে নামিয়াছে। কিন্তু, এই হারটির কথা ভাবিলে গত অক্টোবরের কথা না ভাবিয়া উপায় নাই। তখন এই হার ছিল ১১.০৬ শতাংশ। কাজেই, রাজনের আশঙ্কাটিকে উড়াইয়া দেওয়ার উপায় নাই। ২০১৪-র জানুয়ারি হইতে সূচক নামিয়াছিল। অতএব, আগামী জানুয়ারিতে সূচকের বৃদ্ধির হারে উচ্চ বেস-এর প্রভাব পড়িবে না। তখন ছবিটি স্পষ্ট হইবে। সুদের হারের সিদ্ধান্তটি তত দিন বকেয়াই থাকুক।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy