Advertisement
E-Paper

ভ্লাদিমির স্তালিন

সব মরণ যে সত্যই সমান নহে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্ভবত তাহা এখন টের পাইতেছেন। গত শুক্রবার রাত্রে রাজনীতিক এবং ভূতপূর্ব উপ-প্রধানমন্ত্রী বরিস নেম্ত্‌সভের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সপ্তাহান্তে মস্কোর রাজপথে যে বিপুল শোক তথা প্রতিবাদের উদ্যাপন দেখা গিয়াছে, তাহাকে জনজাগরণ বলিলে অত্যুক্তি হইবে, কিন্তু পুতিনের রাশিয়ায় এমন স্বতঃস্ফূর্ত সমাবেশ সুলভ নহে।

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৫ ০০:০০

সব মরণ যে সত্যই সমান নহে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্ভবত তাহা এখন টের পাইতেছেন। গত শুক্রবার রাত্রে রাজনীতিক এবং ভূতপূর্ব উপ-প্রধানমন্ত্রী বরিস নেম্ত্‌সভের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সপ্তাহান্তে মস্কোর রাজপথে যে বিপুল শোক তথা প্রতিবাদের উদ্যাপন দেখা গিয়াছে, তাহাকে জনজাগরণ বলিলে অত্যুক্তি হইবে, কিন্তু পুতিনের রাশিয়ায় এমন স্বতঃস্ফূর্ত সমাবেশ সুলভ নহে। এই শোকসমাবেশে ক্রেমলিন তথা তাহার সর্বাধিনায়কের প্রতি বিরাগ এবং বিরূপতা গোপন ছিল না। বিরূপতা অহেতুক নহে। নেম্ত্‌সভ পুতিনের কঠোর সমালোচক ছিলেন, প্রশাসনিক দুর্নীতি বিষয়ে তাঁহার তদন্ত ও সমালোচনা জারি ছিল, ইউক্রেনে পুতিনের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি অনুসন্ধান করিতেছিলেন, গুরুতর তথ্য ফাঁসের আভাস দিয়াছিলেন। ক্রেমলিনের অদূরে আততায়ীর গুলিতে তাঁহার নিধনের ঘটনায় নিশ্চয়ই প্রমাণ হয় না যে, পুতিন প্রতিহিংসার তাগিদে অথবা বিরোধীদের ভয় দেখাইতে কিংবা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে তাঁহার ষড়যন্ত্র ফাঁস হইবার ভয়ে হত্যাকাণ্ডটি ঘটাইয়াছেন। সরকারি সন্দেহ দুই দিকে ধাবিত। একটি মত: শার্লি এবদো-র প্রবল সমর্থক নেম্ত্‌সভকে ইসলামি সন্ত্রাসীরা হত্যা করিয়াছে। অন্য মত, ইউক্রেন-জনিত পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞা এবং তেলের বাজারে মূল্য-পতনের দ্বৈত আঘাতে বিপর্যস্ত পুতিনকে বিপাকে ফেলিবার জন্য তাঁহার শত্রুরাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটাইয়াছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করিয়াছেন: এই পৈশাচিক অপরাধের তদন্ত হইবে, অপরাধীর শাস্তি হইবে।

প্রমাণ তদন্তসাপেক্ষ। সমস্যা ইহাই যে, ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়াতে তদন্তের চরিত্র এবং ভাগ্য, দুইই— দেবা ন জানন্তি। ২০০৬ সালের দুইটি হত্যাকাণ্ড স্মরণীয়। লন্ডনে তেজস্ক্রিয় চা পান করিয়া মারা গিয়াছিলেন গুপ্তচর আলেকসান্দার লিত্‌ভিনেঙ্কো, মস্কোয় গুলিবিদ্ধ হইয়া নিহত হইয়াছিলেন মানবাধিকার কর্মী আনা পলিত্‌কোভস্কায়া; উভয়েই ছিলেন পুতিনের কঠোর সমালোচক। বরিস নেম্ত্‌সভ সেই তালিকায় যুক্ত হইলেন। তাঁহার মৃত্যু যে বিপুল ও তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করিয়াছে, তাহা রুশ শাসকদের প্রতি এবং শাসনের প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতি নাগরিক ও রাজনৈতিক সমাজের আস্থার পরিচয় দেয় না। তবে, এই বিরোধী প্রতিক্রিয়ার অগ্ন্যুত্‌পাত কেবলমাত্র নেম্ত্‌সভ-এর মৃত্যুর কারণেই নহে। কারণ রাশিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা কিছু কাল যাবত্‌ বিশেষ বিপাকে রহিয়াছে। সাধারণ মানুষের এই বিপুল ক্ষোভ তাহার অভিঘাতের বহিঃপ্রকাশ।

এই অনাস্থা বা অবিশ্বাসের দায় পুতিনকেই বহন করিতে হইবে, কারণ গত পনেরো বছর যাবত্‌ তিনিই সর্বেসর্বা। অতীতে তাঁহার বিরোধী হিসাবে কিছু কাল সক্রিয় হইবার পরে প্রসিদ্ধ দাবা খেলোয়াড় গ্যারি কাসপারভ রাজনীতির মঞ্চ হইতে সরিয়া যান বা সরিয়া যাইতে বাধ্য হন। তাঁহাকে প্রশ্ন করা হইয়াছিল, সোভিয়েত-উত্তর রাশিয়ায় (গণতান্ত্রিক) রাজনীতির পরিসরটি কতটা বিস্তৃত হইয়াছে? তিনি জবাব দিয়াছিলেন: ভ্লাদিমির পুতিনের ভ্রুযুগলের মধ্যে যতটা স্থান আছে, ততটাই। কথাটি আজ আরও অনেক বেশি ও ভয়ঙ্কর ভাবে সত্য। এক দিকে ‘সার্বভৌম গণতন্ত্র’ নামক তত্ত্বের মোড়কে পুতিন প্রতিবেশী দেশগুলিতে রুশ সাম্রাজ্য পুনর্বিস্তারে তত্‌পর, এই মুহূর্তে ইউক্রেন যে আগ্রাসনের শিকার; অন্য দিকে দেশের মধ্যে সমস্ত বিরোধিতা দমন করিতে তিনি নির্মম। নেম্ত্‌সভ এবং তাঁহার স্বজনবান্ধবরা আশঙ্কা করিয়াছিলেন, এই স্বৈরতন্ত্রী মহানায়কের বিরুদ্ধাচরণের মাসুল তাঁহাকে গনিতে হইবে। আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত। পুতিন দায়ী হউন বা না হউন, ইহার নৈতিক দায় তাঁহার উপর বর্তাইবে। স্বৈরতন্ত্রের মাসুল না গনিয়া তাঁহার উপায় নাই।

anandabazar editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy