Advertisement
E-Paper

সন্ত্রাসের বিশ্বরূপ

দুই দেশ, দু’জন নেত্রী, দুইটি উক্তি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আর্ত ক্ষোভ: পবিত্র রমজানের সময় যাহারা মানুষ মারিতে আসে, তাহারা ‘কেমন মুসলমান’! পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উক্তি: সন্ত্রাসের কোনও ধর্ম নাই।

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৬ ২২:৩৬

দুই দেশ, দু’জন নেত্রী, দুইটি উক্তি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আর্ত ক্ষোভ: পবিত্র রমজানের সময় যাহারা মানুষ মারিতে আসে, তাহারা ‘কেমন মুসলমান’! পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উক্তি: সন্ত্রাসের কোনও ধর্ম নাই। আবেগের কথা? অবশ্যই। কিন্তু এই দুই উচ্চারণে যে আবেগ, তাহা কেবল মূল্যবান নহে, জরুরি। সন্ত্রাসের পিশাচসাধকরা ধর্মের নামে যে বিভীষিকা ক্রমাগত রচনা করিয়া চলিয়াছে, তাহার মোকাবিলায় এই সত্যটি প্রবল ভাবে ঘোষণা করা আবশ্যক যে, ইহাদের সহিত কোনও ধর্মের কোনও সম্পর্ক নাই। এই সন্ত্রাসবাদীরা যে দেশের হউক, যে সংগঠনের হউক, যে ধর্মমতের পরিচিতিতে নিজেদের পরিচিত করুক, ইহারা সমস্ত ধর্মের চরম শত্রু। কথাটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ইহারা দুনিয়া জুড়িয়া ধর্মের নামে বহু মানুষকে ভুলাইতেছে, বিশেষত দেশে দেশে তরুণদের মধ্যে ইহাদের প্রচার রীতিমত প্রভাব বিস্তার করিতেছে। তাহার পিছনে অনেক কারণ— দারিদ্র, অসাম্য, রাষ্ট্রীয় আগ্রাসন ইত্যাদি নানা অন্যায় বহু বিক্ষুব্ধ মানুষকে সন্ত্রাসের হাতিয়ার হাতে তুলিতে উৎসাহ দিয়া চলিয়াছে। সেই সব অন্যায়ের প্রতিকার অবশ্যই জরুরি, কিন্তু যত বড় কারণই থাকুক না কেন, সন্ত্রাসের কোনও যুক্তি থাকিতে পারে না। সন্ত্রাসের ধর্ম হয় না। সন্ত্রাস মূর্তিমান অধর্ম।

অধর্ম অহোরাত্র আপন বিশ্বরূপ দর্শন করাইয়া চলিয়াছে। বাগদাদ তাঁহার সাম্প্রতিকতম নজির। ঢাকায় শুক্রবারের হত্যাকাণ্ডে স্বদেশি ও আন্তর্জাতিক জঙ্গিদের কাহার ভূমিকা কয় শতাংশ, তাহা ক্রমশ প্রকাশ্য। জঙ্গিরা যে দেশেরই হউক, সন্ত্রাসের কারবার বিশ্বায়িত। গুলশনের কাফেতে আক্রান্তদের মধ্যে বিদেশি, বিশেষত জাপান ও ইতালির নাগরিকদের প্রবল সংখ্যাধিক্যকে এই বিশ্বায়িত সন্ত্রাস হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া দেখা চলে না। ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশে তথা উপমহাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বা অর্থসাহায্যের কাঠামোয় আঘাতের আশঙ্কা অনস্বীকার্য। বস্তুত, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উন্নয়নের যে সম্ভাবনা তৈয়ারি হইয়াছে, আওয়ামি লিগ সরকার যাহা অংশত কাজে লাগাইয়াছে, যাহার প্রেক্ষিতে ভারত ও বাংলাদেশের সহযোগিতা অগ্রসর হইতেছে এবং এশিয়া জুড়িয়া সহযোগিতার বাতাবরণ রচিত হইতেছে, সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবের প্রভাব তাহার সম্পূর্ণ প্রতিকূল। এবং, বিভিন্ন দেশে উন্নতির পরিবেশ নষ্ট করা বিশ্ব-সন্ত্রাসের চালকদের এক বড় লক্ষ্য।

এখানেই প্রশাসনের দায়িত্ব। প্রশাসন বিভিন্ন স্তরের। একক ভাবে বাংলাদেশের, যৌথ ভাবে ভারত ও বাংলাদেশের, সমগ্রত গোটা দুনিয়ার। বিভিন্ন রাষ্ট্র যে যাহার স্বার্থ অনুসারে চলিবে, ইহাই কঠোর বাস্তব। চিন সন্ত্রাসের নিন্দা করিয়া দর্শকের ভূমিকায়। পাকিস্তানের, বিশেষত রাওয়ালপিন্ডির ভূমিকা সম্পর্কে বলিবার কিছুই নাই। নির্মম সত্য, উপমহাদেশে সন্ত্রাসের মোকাবিলায় ভারতের যথার্থ সঙ্গী কম। এই প্রেক্ষিতে ঢাকার পাশে দাঁড়াইতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্রুত ও দ্ব্যর্থহীন সংকল্প ঘোষণায় গুরুদায়িত্বের স্বীকৃতি আছে। আপন নিরাপত্তার স্বার্থেই দিল্লির একশো শতাংশ তৎপর হওয়া কর্তব্য। ঢাকার সহিত সহযোগিতায় কূটনীতির কৌশল আবশ্যক, কৌশলে ঘাটতি থাকিলে সহযোগিতা আধিপত্যের রূপ লইতে পারে, তাহাতে হিতে বিপরীত হইবে। দায়িত্ব কলিকাতারও। দুই হাজার কিলোমিটার সীমান্তে কেবল প্রশাসনিক প্রহরা দিয়া বিপদ রোধ করা দুঃসাধ্য, সমাজের সহযোগিতা চাহিয়া মুখ্যমন্ত্রী ঠিকই করিয়াছেন। কিন্তু ‘ইনটেলিজেন্স’-এর সার্থকতা সীমান্তের দৈর্ঘ্যের উপর নির্ভর করে না। সংকট কেবল আর্থিক সংস্কারের প্রেরণা নয়, প্রশাসনিক উন্নতির তাড়নাও বটে। সেই তাড়নায় পশ্চিমবঙ্গ সন্ত্রাস রোধে তৎপর হইলে মঙ্গল।

terror
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy