বিমান চালকের পেশা খুবই দায়িত্বপূর্ণ। এই পেশায় নিযুক্ত হতে গেলে প্রয়োজন বিশেষ দক্ষতার। চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পাশাপাশি অনেকেই বড় হয়ে পাইলট অথবা বিমান চালক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন।
কী যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন:
আগে শুধুমাত্র দ্বাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিষয় থাকলেই সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে পড়া যেত। তবে, এখন একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে বাণিজ্য বা কলা বিভাগে পড়াশোনা করলেও হওয়া যায় অসামরিক বিমানের পাইলট। পাইলট হওয়ার জন্য বিশেষ কিছু কোর্স রয়েছে।
১) বিমানচালনায় (অ্যাভিয়েশন) বিএসসি (ব্যচেলর অফ সায়েন্স)
২) এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিই (ব্যচলর অফ ইঞ্জিনিয়ারিং)
৩) এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিটেক (ব্যচলর অফ টেকনোলজি)
৪) এরোনটিক্যাল সায়েন্স বিএসসি (ব্যচলর অফ সায়েন্স)
৫) এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিই (ব্যচলর অফ ইঞ্জিনিয়ারিং)
৬) এভিওনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিটেক (ব্যচলর অফ টেকনোলজি)
এই সব কোর্সে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে হয় শিক্ষার্থীদের। মূলত তিনটি ধাপে পাইলট লাইসেন্স মেলে। প্রথমটি স্টুডেন্ট পাইলট লাইসেন্স, দ্বিতীয়টি প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স এবং তৃতীয়টি কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স। পেশাগত ভাবে কাজ করতে হলে কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স থাকতেই হয়। অন্তত ২০০ ঘন্টা বিমান নিয়ে ওড়ার অভিজ্ঞতা থাকতে হয়।
ভারত এবং রাজ্যে যে প্রতিষ্ঠানগুলিতে পাইলট প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়:
১) ইন্দিরা গান্ধী রাষ্ট্রীয় উড়ান অ্যাকাডেমি
২) গভর্নমেন্ট অ্যাভিয়েশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট
৩) কলকাতা পাইলট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট
৪) মধ্যপ্রদেশ ফ্লাইং ক্লাব
৫) বোম্বে ফ্লাইং ক্লাব
৬) রাজীব গান্ধী অ্যাভিয়েশন অ্যাকাডেমি
৭) গভর্নমেন্ট ফ্লাইং ট্রেনিং স্কুল
পাইলট হওয়ার জন্য পড়াশোনা বেশ খরচসাপেক্ষ। ইন্দিরা গান্ধী রাষ্ট্রীয় উড়ান অ্যাকাডেমি-র মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে তুলনামূলক খরচ কম। তবে এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া অনেকটাই কঠিন। সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স-র ক্ষেত্রে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা খরচ হয়। বেসরকারি ক্ষেত্রে অনেকসময় ৫০ লক্ষেরও বেশি হয়।
আরও পড়ুন:
পাইলটের কী কী বিভাগ রয়েছে:
কমার্শিয়াল এবং সিভিল পাইল
টকো-পাইলট
চিফ পাইলট
এয়ারলাইন পাইলট
টেস্ট পাইলট
ডিফেন্স পাইলট
ড্রোন পাইলট
সম্প্রতি পাইলট হওয়ার প্রশিক্ষণ কারা পাবেন, সেই নিয়মের রদবদলের সুপারিশ করে কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান মন্ত্রককে পাঠিয়েছে ডিজিসিএ। সেই সুপারিশ মতো তা সংশোধন করে আইন মন্ত্রককে পাঠাবে অসামরিক বিমান মন্ত্রক। আইন মন্ত্রকই বর্তমান আইন সংশোধন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। এত দিন একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে অঙ্ক, পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা না করলে কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স (সিপিএল) প্রশিক্ষণ নেওয়া যেত না। দ্বাদশ শ্রেণিতে অঙ্ক, পদার্থবিদ্যা-সহ সব বিষয়ে পাশ করার পাশাপাশি মেডিক্যাল ফিটনেস-সহ অন্যান্য পরীক্ষাতে পাশ করলে তবেই নেওয়া যেত প্রশিক্ষণ। আইন মন্ত্রক আইন সংশোধন করলে সেই নিয়মেই বদল হবে।
প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ হওয়ার পর একটি পরীক্ষা দিয়ে লাইসেন্স পেতে হয়। বিভিন্ন ভাগের জন্য আলাদা আলাদা লাইসেন্স থাকে।
প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স
এয়ারলাইন ট্রান্সপোর্ট পাইলট লাইসেন্স
কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স
মাল্টি ক্রু পাইলট লাইসেন্স
কমার্শিয়াল মাল্টি ইঞ্জিন ল্যান্ড লাইসেন্স
সার্টিফাইড ফ্লাইট ইনস্ট্রাক্টর লাইসেন্স
চাকরির সুযোগ: মূলত তিনটি ভাগে কাজ করার সুযোগ থাকে।
কো-পাইলট: কো-পাইলটরা বিমান উড়ানের সময় বা তার আগে প্রয়োজনীয় প্রতিটি বিষয় পরীক্ষা করে দেখেন। এই সমস্ত প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলি প্রধান পাইলটের তত্ত্বাবধানে করা হয়। প্রত্যেক কো-পাইলটকে ক্যাপ্টেন হওয়ার জন্য একটি পরীক্ষা দিতে হয়।
ফার্স্ট অফিসার: ফার্স্ট অফিসার একটি বিমানের দ্বিতীয় এয়ারলাইন পাইলট। ক্যাপ্টেনের পরে, প্রথম অফিসার হলেন বিমানের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড, যাঁকে আইনি কমান্ডারও বলা হয়। অধিনায়কের অনুপস্থিতিতে যে কোনও ঘটনায় ফার্স্ট অফিসারের কমান্ড সর্বোচ্চ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।
ক্যাপ্টেন: একটি বিমানের ক্যাপ্টেনের বিমানের নিরাপদ এবং দক্ষ পরিচালনার জন্য সামগ্রিক দায়িত্ব রয়েছে। ক্রু সদস্য ও যাত্রীদের নিরাপত্তার দায়িত্বও ক্যাপ্টেনের। ক্যাপ্টেনরা ফ্লাইট, ফ্লাইট রেগুলেশন, এয়ারট্রাফিক কন্ট্রোল পদ্ধতি এই বিষয়গুলি দেখেন। তাঁরা আকাশে সর্বাধিক নিরাপত্তা প্রদানের জন্য এয়ার নেভিগেশন্যাল দিকগুলিও দেখেন।
এ ছাড়াও এক জন পাইলটের আরও অনেক কাজের সুযোগ থাকে সরকারি বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলিতে।