‘মিডিয়া’ বলতে শুধু সংবাদমাধ্যমকে বোঝায় না। জ্ঞাপনের স্বার্থে ব্যবহার করা হয়, এমন সমস্ত মাধ্যমকেই ‘মিডিয়া’ হিসাবে গণ্য করা হয়। তার মধ্যে বই থেকে শুরু করে সংবাদপত্র, রেডিয়ো, টেলিভিশন এমনকি সমাজ মাধ্যম— সবই অন্তর্ভুক্ত।
মিডিয়ার কাজ শুধু তথ্যের আদান প্রদানেই বর্তমানে সীমাবদ্ধ নেই। এই বিভাগের অধীনে কর্মরত সব সংস্থাকেই ব্যবসা, আর্থিক বিষয়গুলিতেও লক্ষ্য রাখতে হয়। সেই সমস্ত বিভাগের বিশেষজ্ঞদের কিছু বিশেষ দক্ষতা থাকা প্রয়োজন হয়। তারই পাঠদান মিডিয়া বিজ়নেস স্টাডি বিষয়টিতে করা হয়ে থাকে। তবে, এর জন্য ব্যবসায়িক দক্ষতা থাকা আবশ্যক নয়। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, তথ্যের আদান প্রদানের প্রসার কেমন ভাবে হচ্ছে কিংবা কেমন ভাবে হওয়া প্রয়োজন, তা বুঝতে পারা বেশি প্রয়োজন।
বিষয়টি কী নিয়ে?
মিডিয়া বিজ়নেস স্টাডিজ় নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য গণমাধ্যম এবং তার কার্যক্রম সম্পর্কেও সমান ভাবে ওয়াকিবহাল হওয়া প্রয়োজন। এই বিষয়টির মাধ্যমে আর্থিক এবং বিষয়বস্তুর ব্যবস্থাপনা, মার্কেটিং, কন্টেন্ট ক্রিয়েশন এবং প্রযুক্তির সঙ্গে গণমাধ্যমের সহাবস্থান সম্পর্কিত সমস্ত বিষয়গুলি শেখানো হয়ে থাকে। এ ছাড়াও গণমাধ্যমে কাজ করার জন্য যে ধরণের আইন মেনে চলতে হয়, সেই সম্পর্কেও পড়ুয়াদের ওয়াকিবহাল করা হয়।
গণমাধ্যমে কাজের জন্য তথ্যের প্রবাহের দিকে লক্ষ্য় রাখা প্রয়োজন। প্রতীকী চিত্র।
কারা পড়তে পারবেন?
সাধারণত গণজ্ঞাপন নিয়ে পড়াশোনা করতে আগ্রহীরা এই বিষয়টি নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে থাকেন। তবে, যাঁরা উচ্চ মাধ্যমিক পর এই বিষয় নিয়ে পড়তে চান, তাঁদের সাংবাদিকতা এবং গণজ্ঞাপন নিয়ে স্নাতক স্তরে ভর্তি হতে হবে। কারণ এই দেশের সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে স্নাতক স্তরে আলাদা করে মিডিয়া বিজ়নেস স্টাডিজ় পড়ানো হয় না।
আগ্রহীরা মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট কিংবা মাস মিডিয়া বিষয়ে স্নাতক স্তরে পড়তে পারবেন। উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে উল্লিখিত বিষয়ে ডিগ্রি থাকলে মিডিয়া বিজ়নেস স্টাডিজ় নিয়ে পড়াশোনা করতে সুবিধা হয়।
স্নাতকোত্তর স্তরে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ মাস কমিউনিকেশন (আইআইএমসি) এই বিষয়টি পড়ানো হয়ে থাকে। এ ছাড়াও কিছু বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে উল্লিখিত বিষয়ে স্নাতকোত্তর যোগ্যতা অর্জনের সুযোগ রয়েছে।
ভর্তির শর্তাবলি:
স্নাতকস্তরে সাংবাদিকতা এবং গণজ্ঞাপন বিষয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য বাংলা, ইংরেজিতে ৬০ শতাংশ কিংবা তার বেশি নম্বর থাকা প্রয়োজন। মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট কিংবা মাস মিডিয়া নিয়ে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রেও একই শর্ত প্রযোজ্য। তবে কমন ইউনিভার্সিটি এন্ট্রান্স টেস্ট (কুয়েট)-এর মাধ্যমে দেশের কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলিতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরে ভর্তি নেওয়া হয়।
চাকরির সুযোগ:
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশ এবং বিদেশের গণমাধ্যমে বর্তমানে বহুমুখী প্রতিভা সম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়োগ করা হয়ে থাকে। শুধুমাত্র গণজ্ঞাপন কিংবা সাংবাদিকতায় ডিগ্রি থাকলেই চাকরির সুযোগ পাওয়া কঠিন। তাই মিডিয়া বিজ়নেস স্টাডিজ়ের মতো বিষয় নিয়ে পড়াশোনার চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এতে সাংবাদিক বা জনসংযোগ আধিকারিক পদে তো বটেই, পরবর্তীতে মিডিয়া ম্যানেজার, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, ডিজিটাল মার্কেটার, অ্যাডভার্টাইজ়িং এগজ়িকিউটিভ, মিডিয়া প্ল্যানার হিসাবে সরকারি এবং বেসরকারি গণমাধ্যমে কাজের সুযোগ পাওয়া যায়। এ ছাড়াও উদ্যোগপতি হিসাবে নিজের দক্ষতা প্রকাশ করতে পারবেন।
বিজ্ঞাপন সংস্থা হোক বা জনসংযোগ আধিকারিক - কাজের ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞদের চাহিদা রয়েছে। প্রতীকী চিত্র।
খরচ:
স্নাতক স্তরে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে পড়াশোনার খরচ পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে ১ লক্ষ কিংবা তার বেশিও হয়ে থাকে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে খরচের অঙ্ক তিন-চার লক্ষের গণ্ডিও পেরিয়ে যায়।
তবে, মিডিয়া বিজ়নেস স্টাডিজ় নিয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে আইআইএমসি প্রথম সেমেস্টারের ফি হিসাবে ৭৯ হাজার টাকা ধার্য করেছে। এই ফি সেমেস্টার পিছু পরিবর্তিত হতে পারে।
সম্প্রতি আইআইএমসি-র তরফে স্নাতকোত্তর স্তরে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আবেদন করতে আগ্রহীদের ১৫ জুনের মধ্যে নাম নথিভুক্ত করে নিতে হবে।