২০১৮-তে অভিনয় জগতে আত্মপ্রকাশ। সিনেমার নাম ‘রেনবো জেলি’। তখন থেকেই খবরের শিরোনামে এই ‘স্পেশাল’ বা ‘ওয়ান্ডার কিড’। সাত বছর পর আবারও চর্চায় তিনি। নাম মহাব্রত বসু। এ বার উচ্চ মাধ্যমিকেও তাকলাগানো ফল তাঁর। নাহ, মেধাতালিকায় নাম নেই। কিন্তু সমস্ত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে পেয়েছেন ৪৫৯। শতকরা হার ৯২ শতাংশ।
এ বারের উচ্চ মাধ্যমিকের ফল ঘোষণা করা হয় বুধবার। এর পর বৃহস্পতিবার সমাজমাধ্যমের পাতায় চোখে পড়ে একটি পোস্ট। পোস্টদাতা ‘রেনবো জেলি’ সিনেমার পরিচালক সৌকর্য ঘোষাল। ‘ঘোঁতন’-এর সাফল্যে উচ্ছ্বসিত পরিচালক। মনের আনন্দ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, তাঁর সিনেমার মুখ্য চরিত্র দুনিয়াকে যোগ্য জবাব দিয়েছে পরীক্ষায় এই দুরন্ত ফল করে।
যেমনটা ‘রেনবো জেলি’-তে দেখা গেছিল, কিছুটা সে রকমই মহাব্রতের জীবনকাহিনি। একেবারে ছোটবেলায় ‘সেপ্টিসেমিয়া’ হয়েছিল। তার পর থেকেই হাত-পায়ের সঞ্চালনে খানিক সমস্যা ছিল তাঁর। কোনও কিছু বুঝে উঠতেও কিছুটা সময় লাগত। ছোটবেলায় তাই একটি বিশেষ স্কুলেই পড়াশোনা। ক্লাস সিক্সে ওঠার পর ভর্তি হন পাঠভবনে। ধীরে ধীরে আর পাঁচজনের মতো জীবন কাটাতে শুরু করলেও লেখালিখির প্রতিবন্ধকতা কিছু মাত্রায় থেকে যাচ্ছিল।
পড়া বোঝা, লেখায় সমস্যা থাকলেও বরাবর সহপাঠীদের থেকে বাইরের জগত নিয়ে জ্ঞান এবং বোধের দিক থেকে কয়েকগুণ এগিয়ে থাকতেন মহাব্রত। তেমনটাই জানাচ্ছেন তাঁর মা। এককালে একটি কলেজে আইনের শিক্ষক ছিলেন। স্বামী আইন পেশার সঙ্গে যুক্ত। ছেলেকে সময় দিতেই চাকরি ছাড়েন ‘ঘোঁতন’-এর মা। বলেন, “আমি মা বলে বলছি না, ছেলের মধ্যে বাকিদের মতোই আমিও অনেক সম্ভাবনা দেখি। ওর মাথায় একটা অদ্ভুত দুনিয়া আছে। বড়দের মতো উপলব্ধি, জ্ঞান রয়েছে ওর। তাই এত রকম সমস্যা থাকলেও কখনও সেটা বিশেষ পাত্তাই দিতে চাইত না। বরাবর ওর মধ্যে অসম্ভব আত্মপ্রত্যয় রয়েছে। আর তাতেই বোধহয় ওর এই সাফল্য।”
একই সুর ‘ঘোতঁন’-এর সিনেমার পরিচালকের। সৌকর্য বললেন, “নিজের পরিশ্রমেই এই ফল করে দেখাল ও। ওর তো নিজস্ব অনেক স্ট্রাগল রয়েছে। তার পর শিশুশিল্পী হিসাবে প্রকাশ্যে আসার পর সেই 'লাইমলাইট' যে ওর পড়াশোনার প্রতি ফোকাস কেড়ে নেয়নি, তাতেই আমি সবচেয়ে খুশি।”
লেখার অসুবিধা থাকায় কী রাইটার ছিল তাঁর? ফোনের ওপার থেকে সপ্রতিভ উত্তর, “না না, আমি নিজেই লিখেছি। অত কিছু ভাবিনি। এমনকি রেজাল্ট নিয়েও কিছু ভাবিনি। যা জানি, তা-ই লিখে এসেছি।” প্রস্তুতির জন্যও কোনও নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ ছিল না। ছিল না কোনও গৃহশিক্ষকও। স্কুলের শিক্ষকদের পড়ানো এবং বাড়িতে মায়ের সাহায্যেই এই ফলাফল। মহাব্রত জানান, কোনও দিন কিছু মুখস্থ করেননি, তাঁর শুধু বিষয়বস্তু বুঝলেই চলত।
বাংলা, ইংরেজি বাদে মনোবিদ্যা, সমাজবিদ্যা, এডুকেশন এবং ভিস্যুয়াল আর্টস ছিল মহাব্রতের। প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৭, ৯৮, ৮৫ এবং ৯৩। এর পর ভিস্যুয়াল আর্টস নিয়েই পড়ার ইচ্ছে। ভাল লাগে সিনেমা দেখতে, ছবি আঁকতে, অভিনয় করতে আর চুটিয়ে আড্ডা মারতে। আবার কখনও সুযোগ এলে কী অভিনয় করতে চান? বললেন, “কেন নয়? আবার করব!” কোনও লাভক্ষতির হিসাবের জন্য নয়। হার না মানা মহাব্রত, কখনও স্বপ্নের হাতও ছাড়তে চান না। সিনেমার মতো বাস্তবেও জয়ী হতে চান ‘ঘোঁতন’।