বাবা ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি, মা গৃহবধূ। দিন আনা দিন খাওয়া সংসারেও মেয়েকে পড়িয়েছেন ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে। একটাই আশা, বাবা-মায়ের মতো কষ্ট যাতে তাঁদের মেয়েকে না করতে হয়। মেয়েও পাশে দাঁড়াচ্ছে। কথা হচ্ছে চলতি বছর আইএসসি উত্তীর্ণ শ্রেয়সী বিশ্বাসের।
বাঁশদ্রোণী ডিপোল স্কুল থেকে এই বছর আইএসসি-তে ৯৯.৭৫ শতাংশ পেয়েছে সে। বাবা-মা যদি পাশে না থাকতেন, তা হলে কোনও দিনই এমন ফল হত না বলেই মনে করছেন শ্রেয়সী। তিনি বলেন, ‘‘আমার শরীর বেশ খারাপ থাকত সারা বছর। ঠান্ডা লাগার ধাত রয়েছে। তাই বেশির ভাগ দিনই স্কুলে যেতে পারিনি। বাড়িতেই পড়েছি মূলত।’’
আরও পড়ুন:
ভবিষ্যতে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়ে, ‘অ্যাপ’ বানানোর ইচ্ছে রয়েছে শ্রেয়সীর। রাজ্যের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বা নামজাদা প্রতিষ্ঠান থেকে পরবর্তীতে পড়াশোনা করার ইচ্ছা। যেখানে এখন বেশির ভাগ ছাত্র-ছাত্রীর বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক থাকে, সেখানে শ্রেয়সী প্রায় একাই পড়েছে। যদিও পাশে দাঁড়িয়েছেন বাবা যে যে বাড়িতে ইলেক্ট্রিকের কাজ করতেন তাঁদের কেউ কেউ। শ্রেয়সীর বাবা সুব্রত বিশ্বাস দিনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ় কলেজের চুক্তিভিত্তিক অধ্যাপক মুন্না দত্তের বাড়িতে ইলেক্ট্রিকের কাজ করেন। মুন্না শ্রেয়সীকে গণিত পড়তে সাহায্য করেছি্লেন। শ্রেয়সীর এমন ফলাফলে মুন্না বলেন, ‘‘আর পাঁচটা ছেলেমেয়ে যেমন সুযোগ পায়, শ্রেয়সী কিছুই পায়নি তার। তা সত্ত্বেও অত্যন্ত তুখোড় মেধার কারণে এমন ফলাফল করেছে।’’
সাড়ে ৪০০ স্কোয়ার ফিটের একটা ঘরে থাকেন পরিবারের সকলে। শ্রেয়সীর বাবা নিজে বিকম (ব্যাচেলর অফ কমার্স) পাশ। তিনি বলেন, ‘‘ওর জেইই মেনস-এ ৯৯.৩৩ পারসেন্টাইল এসেছে। আইসিএসই-তে ৯৯.৬ পেয়েছিল। আমার অভাবের সংসারেও সব রকম ভাবে পাশে থাকব। তবে স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ড পাওয়া গেলে ওর উচ্চ স্তরে পড়তে খুব সুবিধা হবে।’’
উল্লেখ্য, কাউন্সিল ফর ইন্ডিয়ান স্কুল সার্টিফিকেট এগজ়ামিনেশন (সিআইএসসিই) আয়োজিত দশম (আইসিএসই) এবং দ্বাদশ শ্রেণির (আইএসসি) পরীক্ষার ফল ঘোষণা হয়েছে ৩০ এপ্রিল। রাজ্যে আইএসসি পরীক্ষায় রাজ্যের পড়ুয়াদের পাশের হার ৯৮.৭৫ শতাংশ। উত্তীর্ণ হয়েছেন ২৭ হাজার ৪৫৬ জন পড়ুয়া। তাঁদের মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা ১৪ হাজার ৭১১ জন (৯৮.২০ শতাংশ), ছাত্রীর সংখ্যা ১২ হাজার ৭৪৫ জন (৯৯.৩৮ শতাংশ)। রাজ্যের অংশগ্রহণকারী স্কুলের সংখ্যা ৩৩৩।