মুঠোফোন এখন ছোটদের কাছে খুব প্রিয়। নানা জায়গায় বেড়াতে গিয়ে কখনও চোখে পড়েছে, ছোটরা মোবাইলে মগ্ন আর বড়রা নিজেদের মধ্যে গল্প করছেন। বাচ্চারা তো এতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, মুঠোফোনের আসক্তি কখনও কখনও এতটা প্রবল যে বাবা-মায়ের সঙ্গও চায় না অনেক শিশু। তার চাইতে পছন্দ একান্তে সময় কাটাতে। এটাকে বলা যেতে পারে স্ক্রিন অ্যাডিকশন যা বাচ্চাদের মনকে হাইজ্যাক করে নিচ্ছে। মোবাইলের প্রতি আসক্তি বাচ্চাদের স্বপ্ন কল্পনার পরিসর কেড়ে নিচ্ছে। মোবাইল-মগ্নতা যতটা আনন্দ দেয় ছোটদের, সেখানে ভাবনা-ক্ষমতার প্রয়োজন পড়ে কম। এই যে অনেকক্ষণ শুধু দেখে ভাললাগা, আনন্দ পাওয়া আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে মন্দ কী! কিন্তু অনেকটা সময় ধরে ছোটরা শুধু দেখছে, ভাবছে না, ফলে সেই সময়ে তাদের মস্তিষ্ক কম সক্রিয় থাকে। এটাতে ছোটোদের চিন্তাশক্তির বিকাশ ব্যাহত হতে পারে। এইখানেই লুকিয়ে আছে মোবাইলের বিপদ।
মানতে কষ্ট হলেও এ কথাটি সত্যি ছোটদেরকে মোবাইল থেকে সম্পূর্ণ দূরে রাখা যাবে না। তবে বড়রা যদি ছোটদের সামনে মোবাইল নিয়ে কম ঘাঁটাঘাঁটি করেন তবে হয়তো ওদের এই যন্ত্রের প্রতি আকর্ষণ কিছুটা কমতে পারে। বিশেষ করে ছোটরা যখন পড়বে তখন বড়রা যেন ছোটদের সামনে যথাসম্ভব কম মোবাইল ব্যবহার করেন। ছোটদের পড়তে বসিয়ে রিল দেখা, ফেসবুক করা থেকে বিরত থাকতে চেষ্টা করা দরকার। ছোটরা যখন খাবে তখন বড়দের উচিত ওদের সঙ্গে গল্প করা।
আরও পড়ুন:
মোবাইলে ইংরেজি, বাংলা বা অন্য ভাষার অভিধান থাকে। ছোটরা শব্দের অর্থ জানতে চাইলে চেষ্টা করতে হবে মোবাইল থেকে নয়, নিজের বাড়িতে রাখা অভিধানটি দেখে অর্থ বলে দিতে। এখন বেশির ভাগ বাড়িতেই অভিধান থাকে না। তবে, বাড়িতে অভিধান রাখলে ছোটদের পরবর্তী সময় খুব উপকার হবে। অভিধান দেখতে দেখতে ছোটরা পৌঁছে যাবে শব্দমালার দেশে। শব্দের মানে বলে দেওয়ার সময় ছোটদেরও অভিধানটি হাতে দেওয়া প্রয়োজন। দেখিয়ে দেওয়া শব্দটিকে ও তার মানে কী। এর মজাই আলাদা। শব্দের মানে দেখতে গিয়ে আরও কিছু নতুন শব্দ দেখবে, চিনবে ছোটরা, কেউ কেউ কৌতূহলবশত নতুন শব্দ শিখে নেবে। ছোটদের প্রজেক্ট তৈরি করতে বা কোনও জিজ্ঞাসার উত্তর দেওয়ার সময় নেট দেখলে ভাল হয়, কিন্তু সেটি ছোটদের সামনে সব সময় না করাই ভাল। বড়রা দেখে নিয়ে নানা গল্পের মধ্য দিয়ে বিষয়টির গভীরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। তাদের বই পড়ে পড়ে শোনার অভ্যেস তৈরি করা প্রয়োজন।
সব শেষে বলা যায়, কড়া শাসন না করে বরং কী করে মোবাইল থেকে ছোটদের দূরে রাখা যায়, তা নিয়ে অভিভাবকদের ভাবা প্রয়োজন। আবার শুধু ভেবে উপায় বের করলেই হবে না। তা প্রয়োগও করা দরকার।
(লেখিকা গোখলের মেমোরিয়াল গার্লস স্কুলের বাংলার প্রাক্তন শিক্ষিকা।)