এ বছরের মাধ্যমিক শুরু আর তিন দিন পরেই। ১১ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার হবে ইংরেজি ভাষার পরীক্ষা। এক জন পড়ুয়ার জীবনে প্রথম বড় পরীক্ষা মাধ্যমিক। তাই পরীক্ষার্থীদের মধ্যে এই নিয়ে উদ্বেগ থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অতিরিক্ত চিন্তা পরীক্ষার আগে শরীর এবং মন- দু’য়েরই ক্ষতি করে, সেটা ভুললে চলবে না। জোরকদমে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। ঠিক কী ভাবে প্রস্তুতি নিলে ভাল ফল হবে, সেই নিয়েই রইল কিছু পরামর্শ।
১) পরিচ্ছন্নতা ও পরিমিতিবোধ: ইংরেজি ভাষার পরীক্ষা যে হেতু কম্পোজ়িট পেপারে নেওয়া হয়, তাই উত্তর লিখতে হবে ‘টু দ্য পয়েন্ট’। বাহুল্য বর্জনীয়। অতিরিক্ত কাটাকুটি উত্তরপত্রকে অপরিচ্ছন্ন করে তুলতে পারে।
২) খুঁটিয়ে পড়া জরুরি: পরীক্ষার্থীদের ইংরেজি পাঠ্যবইয়ের প্রতিটি প্রোজ় (গদ্য) এবং পোয়েম (কবিতা) ভাল ভাবে পড়ে নিতে হবে। প্রতিটি অধ্যায়ের ‘এক্সারসাইজ’ অংশের ‘অ্যাক্টিভিটি টাস্ক’-গুলি ভাল ভাবে রপ্ত করতে হবে।
৩) প্রশ্নপত্র পড়া ও রিভিশন: প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পরে পুরো প্রশ্নপত্রটি মন দিয়ে পড়তে হবে। এক বার পড়া হয়ে গেলে উত্তর লেখার সময়ে অনেকটাই সুবিধা হবে। সমস্ত প্রশ্নের উত্তর লেখার পরে উত্তরগুলো রিভিশন করা জরুরি। এতে অনেক ছোটখাটো ভুল এড়ানো সম্ভব হয়।
৪) উত্তর গুছিয়ে লেখা: প্রশ্নের উত্তর আগে যথাযথ ভাবে ভেবে নিতে হবে। এর পরে উত্তর লিখতে হবে গুছিয়ে। তা না হলে, অনাবশ্যক কাটাকুটি হতে পারে।
৫) উত্তর লেখার ধরন: ছোট ছোট বাক্যে উত্তর লেখা ভাল। এতে ভুল হওয়ার আশঙ্কা কমে। উত্তর লেখার সময়ে ভাষা হতে হবে সহজ সরল। যে শব্দের অর্থ নিয়ে নিজের মনেই দ্বিধা আছে, তা না ব্যবহার করে পরিবর্তে অন্য সমার্থক শব্দ ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়।
৬) বানান ভুল: যতটা সম্ভব সঠিক বানান লিখতে হবে। বহুপঠিত শব্দের ক্ষেত্রে ভুল বানান একেবারেই কাম্য নয়। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীরা উত্তর লেখা শেষ করে আর এক বার চোখ বুলিয়ে নিলে ভুল এড়ানো সম্ভব।
আরও পড়ুন:
৭) প্রশ্নের কাঠামো: প্রশ্নপত্রের ‘এ’ বিভাগে ‘রিডিং কম্প্রিহেনশন সিন’ এবং ‘রিডিং কম্প্রিহেনশন আনসিন’। দু’ক্ষেত্রের প্রতিটিতে থাকবে ২০ নম্বর অর্থাৎ এই বিভাগে মোট নম্বর থাকবে ৪০। ‘বি’ বিভাগে ‘গ্রামার অ্যান্ড ভোকাবুলারি’-তে থাকবে ২০ নম্বর। এর পরে ‘সি’ বিভাগে ‘রাইটিং স্কিল’-এ ৩০ নম্বর থাকবে।
ক) ‘রিডিং কম্প্রিহেনশন সিন’-এর ক্ষেত্রে সাধারণত ‘প্রোজ়’ থেকে ১২ নম্বর এবং একটি কবিতা থেকে ৮ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। এর জন্য পাঠ্যবই ভাল ভাবে পড়তে হবে। যদিও অনেক সময়ে ‘প্যাসেজ’ তুলেও দেওয়া হয় প্রশ্নপত্রে।
খ) ‘রিডিং কম্প্রিহেনশন আনসিন’- এর ক্ষেত্রে ‘প্যাসেজ’টি সাধারণত নামী ইংরেজি দৈনিকের শেষ প্রকাশিত রিপোর্টের থেকে নেওয়া হয় প্রয়োজনীয় ‘অ্যাডাপটেশন’ বা তর্জমা করে। এ ছাড়া কোনও বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম থেকেও ‘আনসিন প্যাসেজ’ দেওয়া হয়। সুতরাং, নিয়মিত সংবাদপত্র পাঠ আর নামকরা লেখকদের লেখার সঙ্গে সামান্য পরিচিতি বাড়তি সুবিধা এনে দিতে পারে।
গ) ‘গ্রামার অ্যান্ড ভোকাবুলারি’-র জন্য বরাদ্দ ২০ নম্বরের মধ্যে সাধারণত গ্রামার বা ব্যকরণ থেকে ১২ নম্বর এবং ভোকাবুলারি থেকে ৮ নম্বরের প্রশ্ন থাকে।
ঘ) ‘রাইটিং স্কিল’ অংশে তিনটি ‘রাইটিং টাস্ক’ বা প্রশ্ন দেওয়া হয়। প্রতিটির জন্য বরাদ্দ ১০ নম্বর। অর্থাৎ, মোট ৩০ নম্বর থাকবে এই অংশে।
৮) সতর্কতা: ‘রিডিং কম্প্রিহেনশন সিন’ এবং ‘রিডিং কম্প্রিহেনশন আনসিন’-এ 'টি'/'এফ' টাইপের ক্ষেত্রে সতর্কতা প্রয়োজন। নির্ধারিত বাক্সে পরিষ্কার ভাবে 'টি'/'এফ' লিখতে হবে। অনেক সময়ে ‘এফ’ পরিষ্কার ভাবে বোঝা যায় না। সে ক্ষেত্রে উত্তরটি কেটে দেওয়া হয়। আর যে ‘সাপোর্টিং সেনটেন্স বা স্টেটমেন্ট’ লিখতে হয় 'টি'/'এফ'-এর সমর্থনে, সেটি সম্পূর্ণ ভাবে উল্লিখিত ‘প্যাসেজ’ থেকেই লিখতে হবে। নিজের থেকে কোনও শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। 'টি'/'এফ' ভুল হলে সাপোর্টিং সেনটেন্স বা স্টেটমেন্টের জন্য কোনও নম্বর দেওয়া হয় না। এ ছাড়া ‘কমপ্লিশন অফ সেনটেন্স’-এর ক্ষেত্রে শূন্যস্থান পূরণ করার সময়ে প্রয়োজনীয় তথ্য ‘প্যাসেজ’ থেকে লিখতে হবে।
৯) গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: ‘সিন প্যাসেজ’-এর ক্ষেত্রে ‘দ্য ক্যাট’, ‘আওয়ার রানঅ্যাওয়ে কাইট’, ‘দ্য পাসিং অ্যাওয়ে অফ বাপু’, ‘ফেবল’, ‘দ্য স্নেল’ এবং ‘সি ফিভার’ দেখে যেতে হবে। ‘আনসিন প্যাসেজ’-এর ক্ষেত্রে সমাজ, পরিবেশ, বন্যপ্রাণী-সহ অন্যান্য বিষয়ে সংবাদপত্রের রিপোর্ট দেখে যেতে হবে। এ ছাড়া, ইংরেজিতে বিভিন্ন নামী লেখকদের জনপ্রিয় লেখা পড়ার অভ্যাসও পড়ুয়াদের নানা ভাবে সাহায্য করবে। ‘গ্রামার অ্যান্ড ভোকাবুলারি’- অংশের জন্য আর্টিকল, প্রিপোজ়িশন, যথাযথ ভার্ব ফর্ম, ভয়েস চেঞ্জ ও ন্যারেশন সংক্রান্ত নিয়মবিধি, ট্রান্সফরমেশনের নিয়মবিধি, ফ্রেজ়াল ভার্ব এবং সেনটেন্স জয়েনিং দেখে যেতে হবে। ‘রাইটিং’-অংশের ক্ষেত্রে বায়োগ্রাফি রাইটিং, ফ্লো চার্ট অফ প্রসেসিং, জেনারেল প্যারাগ্রাফস, স্টোরি রাইটিং, লেটারস অফ ফরম্যাট টাইপস দেখে গেলে ভাল।
আরও পড়ুন:
তবে ইংরেজি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কোনও রকম ‘সাজেশন’-এর উপরে নির্ভর না করাই শ্রেয়। পাঠ্যবই খুঁটিয়ে পড়া, যে কোনও টেস্ট পেপার বা প্র্যাকটিস পেপার থেকে ‘গ্রামার’ অংশের উত্তর করার নিয়মিত অভ্যাস এবং প্রশ্নপত্র ভাল ভাবে পড়ার উপরে সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করে। এ ছাড়া, ‘রাইটিং’ অংশের ক্ষেত্রে প্রদত্ত পয়েন্টগুলি যাতে সব ঠিক ভাবে লেখা হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
(লেখক নাকতলা হাই স্কুলের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক)