এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু আর এক সপ্তাহ পরেই। গণিত বা অঙ্ক পরীক্ষা ১৫ ফেব্রুয়ারি, শনিবার। অঙ্ক নিয়ে বরাবরই বহু পড়ুয়ার মধ্যে ভয়ভীতি কাজ করে। সেই ভয় থেকে জানা অঙ্কেও পরীক্ষায় ভুল হয়ে যায়। তাই শেষ মুহূর্তে পরীক্ষার্থীরা কী ভাবে প্রস্তুতি নেবে বা কোন দিকগুলিতে বেশি মনোযোগ দেবে বা কী ভাবে বেশি নম্বর তোলার সম্ভব হবে, সেই নিয়ে রইল কিছু পরামর্শ।
এক নম্বরের প্রশ্ন: প্রশ্নপত্রে দেওয়া ১ নম্বরের এমসিকিউ (মাল্টিপল চয়েস কোয়েশ্চেন) প্রশ্নগুলির মধ্যে ছ’টি প্রশ্নেরই উত্তর করলে ভাল। কোনও প্রশ্ন ছেড়ে আসা ঠিক হবে না। যে হেতু এই অংশে কোনও নেগেটিভ মার্কস নেই, তাই নম্বর কাটা যাওয়ার সম্ভাবনাও নেই।
দুই এবং তিন নম্বরের প্রশ্ন: এর পরের অংশে দুই এবং তিন নম্বর প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ছ’টি প্রশ্ন দেওয়া থাকলেও পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর করা উচিত। যদি কেউ ছ’টি প্রশ্নেরই উত্তর করে আসে, তাতেও কোনও সমস্যা নেই।
চার নম্বরের প্রশ্ন: এ ক্ষেত্রে উত্তরপত্রের এক দিকে অবশ্যই রাফ ওয়ার্ক করার চেষ্টা করতে হবে। যদি কেউ এই অংশে সব প্রশ্নের উত্তর দেয়, তা হলেও একটি বা দু’টি প্রশ্ন ভুল হলে অসুবিধা নেই। কোনও নেগেটিভ মার্কিং হবে না।
পাঁচ নম্বরের প্রশ্ন: এই অংশের জন্য চক্রবৃদ্ধি সুদ এবং সমহার বৃদ্ধির সূত্র অবশ্যই লিখে আসা উচিত। এখানে সূত্র লেখার জন্য কিন্তু পার্ট মার্কস দেওয়া হবে।
ছয় নম্বরের প্রশ্ন: ছ’নম্বরের প্রশ্নের উত্তর লেখার সময় অবশ্যই ‘এক্স’-এর দু’টি মান লিখতে হবে।
সাত নম্বরের প্রশ্ন: এই অংশের জন্য করনি ও ভেদের মধ্যে একটি অঙ্ক করতে হয়। ভেদের অঙ্কটি করার ক্ষেত্রে অবশ্যই অশূন্য ভেদ ধ্রুবক কথাটি লেখা উচিত। তা না করলে এক নম্বর কাটা যাবে।
আট নম্বরের প্রশ্ন: এখানে সমানুপাত এবং অসমানুপাত-এর যে প্রশ্ন থাকে, সেখান থেকে একটি অঙ্ক করতে হয়। এ ক্ষেত্রেও অশূন্য ভেদ ধ্রুবক লিখতে হবে পরীক্ষার্থীদের। নয়তো এখানেও এক নম্বর কাটা যাবে।
নয় নম্বরের প্রশ্ন: প্রশ্নপত্রের এই অংশে দু’টি উপপাদ্য থাকে। এর মধ্যে একটি উপপাদ্য করতে হয় পরীক্ষার্থীদের। এখানে ছবি আঁকতে হবে পরীক্ষার্থীদের। উপপাদ্যের ছবি না থাকলে কোনও নম্বর দেওয়া হবে না তাদের।
১০ নম্বরের প্রশ্ন: এখানে দুটি উপপাদ্যের প্রয়োগ থাকে। যেখানে উপপাদ্যের ছবি ভাল ভাবে আঁকা এবং নাম দেওয়া জরুরি। প্রামাণ্য বিষয় এবং ছবি ঠিক করে আঁকা থাকলে পরীক্ষার্থীদের এক নম্বর দেওয়া হবে।
১১ নম্বরের প্রশ্ন: এখানে দু’টি সম্পাদ্য থাকে। যার মধ্যে একটি সম্পাদ্য আঁকতে হয়।। আঁকার পাশাপাশি সম্পাদ্যের নামকরণ করাও জরুরি। এ বারের পরীক্ষায় মধ্য সমানুপাতী নির্ণয় অর্থাৎ জ্যামিতিক উপায়ে বর্গমূল নির্ণয়, খুব ভাল ভাবে দেখে যেতে হবে। শেষে লিখতে হবে উত্তর। তা না হলে এক নম্বর বাদ যাবে।
১২ ও ১৩ নম্বরের প্রশ্ন: এই অংশের জন্য ত্রিকোণমিতির মানগুলি ভাল করে মুখস্ত করা জরুরি। এ ছাড়া, উচ্চতা এবং দূরত্ব বিষয়ক সমস্যাগুলি নিয়ে যে প্রশ্ন থাকবে, সেই প্রশ্নের সঙ্গে যদি সঠিক ছবি দেওয়া না হয়, তা হলে কোনও নম্বর পাবে না পরীক্ষার্থীরা। ছবিটি যাতে নিখুঁত হয়, সে দিকে নজর দেওয়াও জরুরি।
১৪ নম্বরের প্রশ্ন: এখানে পরিমিতির অঙ্কের জন্য টেস্ট পেপার থেকে ১০-১২টি প্রশ্নের সেটের পরিমিতিগুলি অভ্যাস করলে ভাল।
১৫ নম্বরের প্রশ্ন: এখানে রাশিবিজ্ঞান সম্পর্কিত প্রশ্ন থাকবে। রাশিবিজ্ঞান এমন একটি অধ্যায় যেখানে খুব সহজেই ফুল মার্কস বা পূর্ণ মান পাওয়া যায়। তবে এর জন্য ভাল করে পরীক্ষার্থীদের ভাল ভাবে অনুশীলনও করতে হবে। মধ্যমা এবং সংখ্যাগুরু মান-এর সূত্রগুলি ভাল ভাবে মুখস্থ করা এবং অভ্যাস করা জরুরি। এই সূত্রগুলি জানা থাকলে সহজেই রাশিবিজ্ঞান থেকে ভাল নম্বর পাওয়া সম্ভব।
সবশেষে বলা প্রয়োজন, পরীক্ষার হলে হাতে প্রশ্ন পেয়েই তাড়াহুড়ো করা উচিত না। যারা নিজেদের অঙ্কে দুর্বল মনে করে, তাদের সবার আগে যে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর জানা, সেগুলি করে নিতে হবে। এর পর পাশ করার ভয় কেটে গেলেই বাকি অঙ্কের সমাধান করাও সহজ মনে হবে। এ ছাড়া, অঙ্কে পুরো নম্বর পাওয়ার জন্য, সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়ে গেলে খাতাটা আবার রিভিশন করতে হবে, যাতে কোনও ছোটখাট ভুল না হয়। আবার, কোনও অঙ্ক প্রথম বারের চেষ্টায় না পারলে তখন সেটা রেখে দিয়ে অন্য অঙ্কের সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে। এ সমস্ত ছোটখাট বিষয় মাথায় রাখলেই পরীক্ষা ভাল হবে।
(লেখক নাকতলা হাই স্কুলের গণিত বিষয়ের শিক্ষক)