Advertisement
E-Paper

রোগ নির্ণয়ের জন্য উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার, বিশ্বজোড়া স্বীকৃতি আইআইটি খড়্গপুরের অধ্যাপকের

প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে স্বল্প খরচেই কী ভাবে রোগ নির্ণয় করা যায়, তা নিয়ে নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন এই বিজ্ঞানী।

সুচেতনা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৫ ১৮:৪১
Suman Chakraborty

সুমন চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র।

এক জন ব্রাজিলের কার্লোস রিকার্ডো সকল। অন্য জন ভারতের তথা খোদ কলকাতার অধ্যাপক সুমন চক্রবর্তী। ২০২৬ সালের জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কম্পিউটার সায়েন্সে উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে এই দু’জনই সম্মানিত হবেন বিশ্বের দরবারে। সম্প্রতি ইউনেস্কোর দি ওয়ার্ল্ড অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস (টিডব্লিউএএস)-এর তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে এমনটাই ঘোষণা করা হয়েছে।

স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য পুরস্কৃত হবেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (আইআইটি) খড়্গপুরের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক সুমন চক্রবর্তী। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে স্বল্প খরচেই কী ভাবে রোগ নির্ণয় করা যায়, তা নিয়ে নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন এই বিজ্ঞানী। ডায়গনোস্টিক ল্যাব নির্ভরতা কমিয়ে কী করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও নিজেরাই রোগ নির্ণয় করে নিতে পারেন, সেই দিকেই বিশেষ নজর দিয়েছেন অধ্যাপক সুমন। যা প্রান্তিক মানুষদের আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী করার পথও প্রশস্ত করবে বলেই আশাবাদী তিনি।

সুমন বলেছেন, “প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে স্বাস্থ্য পরিষেবাকে আরও সহজলভ্য এবং স্বল্পমূল্যে সকলের কাছে পৌঁছে দিতে পারার জন্যই ওঁরা এই পুরস্কার দিচ্ছেন।” কিন্তু স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কোন কোন গবেষণা এবং উদ্ভাবনের জন্য তাঁর এই বিশ্বজোড়া স্বীকৃতি? তিনি জানিয়েছেন, উন্নয়নশীল দেশ বিশেষত ভারতের অধিকাংশ মহিলাই রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়ায় ভোগেন। তার ফলে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে নানা সমস্যার সম্মুখীন হন তাঁরা। কিন্তু রোগ শনাক্তকরণের হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করতে তাঁদের কোনও না কোনও ডায়নোস্টিক ল্যাবে যেতে হয়। ডায়াবেটিস রোগের ক্ষেত্রে যেমন বাড়িতে বসে রোগীরা নিজেরাই তাঁদের ‘সুগার লেভেল’ দেখে নিতে পারেন। অ্যানিমিয়ার ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয় না। তাই গবেষণার মাধ্যমে এমন একটি ‘পেপার স্ট্রিপ’ তৈরি করা হয়েছে। যাতে থাকবে কিউআর কোড। কেউ যদি নিজেদের হাতে পিন ফুটিয়ে রক্ত বার করে সেই স্ট্রিপে ফেলেন এবং তার পর স্মার্ট ফোনের ‘হিমো কিউআর অ্যাপ’ অ্যাপের মাধ্যমে ছবি তুলে নেন, তা হলে তৎক্ষণাৎ নিজেদের ‘হিমোগ্লোবিন লেভেল’ দেখে নিতে পারবেন। একই ভাবে, করোনার সময় রোগ নির্ণয়ের জন্য ‘কোভির‍্যাপ’ টেস্ট কিট, টর্চের মতো যন্ত্র ‘ওরোস্ক্রিন’-এর সাহায্যে ওরাল ক্যানসার শনাক্তকরণ, মহিলাদের গোপনীয়তা বজার রেখে যোনিপথের সংক্রমণের পরীক্ষার জন্য ‘প্রিপ্যাপ কিউআর’ প্রযুক্তি-সহ একাধিক গবেষণা কাজে সাফল্য পেয়েছেন অধ্যাপক।

কলকাতাতেই বেড়ে ওঠা। প্রথমে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক, তার পর বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স (আইআইএসসি)-তে স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি। তার পর বিদেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনও ‘ফেলো’ আবার কখনও ‘ভিজ়িটিং প্রফেসর’ পদে চাকরি। ২০০২ সালে অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন আইআইটি খড়্গপুরে।

বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির প্রতি তার ভালবাসা এবং উদ্ভাবনী কাজের জন্য মিলেছে একের পর এক স্বীকৃতি। কখনও রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পেয়েছেন ‘জাতীয় শিক্ষক’ সম্মাননা। আবার স্বীকৃত হয়েছেন শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরষ্কার এবং ইনফোসিস পুরষ্কারে। স্থান দখল করেছেন এশিয়ার সেরা একশো বিজ্ঞানীর তালিকাতেও। নতুন এই স্বীকৃতিতে কী প্রতিক্রিয়া তাঁর? সুমন বলেছেন, “ভীষণই খুশি এই পুরষ্কার পেয়ে। এই ধরনের স্বীকৃতি আসলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিক্ষেত্রে আরও গবেষণামূলক কাজ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা দেয়। বর্তমানে চিকিৎসা ক্ষেত্রে খরচ বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। তা ছাড়া গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রেও নানা সমস্যা রয়েছে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আমার এই গবেষণা যদি বৃহত্তর সমাজ বিশেষত প্রান্তিক মানুষের উপকারে আসে, তা হলেই আমার গবেষণার স্বার্থকতা।”

উল্লেখ্য, প্রতি দু’বছর অন্তর উন্নয়নশীল দেশে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের বিশেষ অবদানের জন্য পুরস্কৃত করে ইউনেস্কো দি ওয়ার্ল্ড অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস (টিডব্লিউএএস)।

Indian Institute of Technology Kharagpur Suman Chakraborty UNESCO Award 2026 Success Story
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy