আর এক সপ্তাহও বাকি নেই। অগস্টের প্রথম সপ্তাহেই প্রকাশিত হতে পারে চলতি বছরের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউশনাল র্যাঙ্কিং ফ্রেমওয়ার্ক (এনআইআরএফ)। এ বছর দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান মূল্যায়নের ক্ষেত্রে দু’টি নতুন বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে কেন্দ্রীয় ভাবে জানানো হয়েছে।
২০১৫ সালে দেশের শিক্ষা মন্ত্রকের তরফে কেন্দ্রীয় ভাবে এই র্যাঙ্কিং ব্যবস্থা চালু করা হয়। প্রথম বার তালিকা প্রকাশ করা হয় ২০১৬ সালে। প্রথম বছরে শুধু মাত্র চারটি বিভাগ— ১) বিশ্ববিদ্যালয়, ২) ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠান, ৩) ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান এবং ৪) ফার্মাসি প্রতিষ্ঠান-এর ভিত্তিতে র্যাঙ্কিং তালিকা প্রকাশিত হয়। পরবর্তী সময়ে যুক্ত হয় আরও কিছু বিভাগ। ধীরে ধীরে এই তালিকার জন্য নাম নথিভুক্ত করার জন্য অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও যেমন বাড়তে থাকে, তেমন যুক্ত হয় আরও কিছু বিভাগ। ২০২৪-এ এনআইআরএফ র্যাঙ্কিং ফ্রেমওয়ার্কে ছিল মোট ১৬টি বিভাগ। এর মধ্যে ১) সামগ্রিক র্যাঙ্কিং ২) বিশ্ববিদ্যালয়, ৩) কলেজ, ৪) গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ৫) ইঞ্জিনিয়ারিং, ৬) ম্যানেজমেন্ট, ৭) ফার্মাসি, 8) মেডিক্যাল, ৯) ডেন্টাল, ১০) ল, ১১) আর্কিটেকচার অ্যান্ড প্ল্যানিং, ১২) এগ্রিকালচার অ্যান্ড অ্যালায়েড সেক্টরস, ১৩) ইনোভেশন, ১৪) ওপেন ইউনিভার্সিটি, ১৫) স্কিল ইউনিভার্সিটি এবং ১৬) স্টেট পাবলিক ইউনিভার্সিটি। গত বছর দেশের ১০ হাজারের বেশি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই তালিকার জন্য নিজেদের নাম নথিভুক্ত করে।
আরও পড়ুন:
প্রতি বছর কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের তরফে প্রকাশ করা হয় এনআইআরএফ তালিকা। যে সমস্ত মাপকের ভিত্তিতে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে মূল্যায়ন করা হয়, তার মধ্যে রয়েছে— ১)পড়াশোনার মান (শিক্ষাদানের সামগ্রিক মূল্যায়ন) ২) গবেষণা এবং পেশাদারি অভ্যেস, ৩) পড়ুয়া এবং গবেষকদের মূল্যায়ন, ৪) বাইরের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা এবং ৫) পিয়ার পারসেপশন।
তবে এই এনআইআরএফ র্যাঙ্কিং ঘিরে নানা সময়ে বিতর্কও দানা বেঁধেছে। কখনও প্রশ্ন উঠেছে প্রতিষ্ঠানগুলিতে পড়ুয়ার সংখ্যা এবং আর্থিক সংস্থানের মধ্যে তারতম্য রয়েছে, তাই কী ভাবে একই মাপকের ভিত্তিতে দু’টি ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তুলনা করা সম্ভব? ২০১৭ সালের মাদ্রাজ হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলাতেও প্রশ্ন উঠেছে, যে হেতু র্যাঙ্কিং তালিকা প্রকাশের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলি নিজেরাই সমস্ত তথ্য অনলাইনে জমা দেয়, সেক্ষেত্রে সেই তথ্য কোনওভাবে দ্বিতীয়ভাবে যাচাই না হওয়ায় অনেক জালিয়াতিরও সুযোগ রয়ে যায়, তা হলে এই তালিকাকে মান্যতা দেওয়ার অর্থ কী? এর ফলে দেশের উচ্চশিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তবে এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত জানায়, এখনও কোনও চূড়ান্ত নির্দেশ দেওয়ার মতো জুতসই প্রমাণ নেই, তাই এখনই এই তালিকা বাতিল করার কথা ভাবা হবে না।
আরও পড়ুন:
তবে এ বছর ‘গবেষণা ও পেশাদারি অভ্যাস’ মাপকের ক্ষেত্রে কোনও প্রতিষ্ঠান যদি তাদের কোনও গবেষণাপত্র প্রত্যাহার করে, তার ভিত্তিতে নেগেটিভ মার্কিং করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এ বছর নেগেটিভ মার্কিংয়ে কম নম্বর কাটা হলেও আগামী বছরগুলিতে এই নেগেটিভ মার্কিংয়ের পরিমাণ বাড়বে বলেও জানা গেছে। পাশাপাশি, যোগ হয়েছে ‘সাস্টেনেবেল ডেভেলপমেন্ট গোল’ বা সুস্থায়ী উন্নয়ন সংক্রান্ত আরও একটি মাপক। যার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানগুলি কতটা সুস্থায়ী পরিকাঠামো মেনে চলছে, লিঙ্গসাম্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পড়াশোনার দিকে জোর দিচ্ছে, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে।
উল্লেখ্য, গত বছর এনআইআরএফ র্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রেও ‘ওপেন ইউনিভার্সিটি এবং ‘স্টেট পাবলিক ইউনিভার্সিটি’-এর মতো দু’টি বিভাগ যোগ করা হয়েছিল। জোর দেওয়া হয়েছিল উদ্ভাবনে। বাদ গিয়েছিল সেলফ সাইটেশন-এর বিষয়টি। এমনকি, কিছু প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পরিবর্তন করা হয়েছিল শিক্ষক-পড়ুয়া অনুপাতেরও।