প্রয়াত অধ্যাপক মাধবেন্দ্রনাথ মিত্র। বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। বিশিষ্ট অধ্যাপক, লেখক এবং শিক্ষাবিদ রেখে গেলেন তাঁর স্ত্রী, কন্যা এবং অসংখ্য ছাত্রছাত্রী ও গুণমুগ্ধকে। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমেরেটা অধ্যাপক অমিতা চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে প্রাক্তন অধ্যাপকের। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার জেরে বেশ কিছু দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
ছাত্রদরদি মাধবেন্দ্রনাথের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ শিক্ষামহল। শিক্ষাক্ষেত্রে পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ রাখার ভাবনা বাস্তবায়িত হয়েছিল মাধবেন্দ্রনাথের হাত ধরে। তিনিই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম কাউন্সেলিং সেল শুরু করেছিলেন। বর্তমানে যা ‘সেন্টার ফর কাউন্সেলিং সার্ভিসেস অ্যান্ড স্টাডিজ় ইন সেল্ফ ডেভেলপমেন্ট’ হিসাবে পরিচিত।
মাধবেন্দ্রনাথের জন্ম ১৯৩৭-এর ৮ জুন কলকাতায়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রথম ছাত্র ছিলেন তিনি। পরবর্তী কালে আমেরিকার রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণা সম্পূর্ণ করেন তিনি। কর্মজীবনেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িয়ে ছিলেন। যদিও শিক্ষকতা শুরু বেলুড় বিদ্যামন্দিরে। প্রায় চার দশকের বেশি সময় ধরে দর্শনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করেছেন তিনি। জাতীয় শিক্ষা পরিষৎ-এর সভাপতি হিসাবেও দীর্ঘ সময় দায়িত্বভার সামলেছেন।
বহু শিক্ষকের সঙ্গে বেশ কিছু বই সম্পাদনা করেছিলেন মাধবেন্দ্রনাথ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য— ‘মনোদর্শন: শরীরবাদ ও তার বিকল্প’, ‘স্টাডিজ় ইন লজিক: আ ডায়লগ বিটুইন দ্য ইস্ট অ্যান্ড দ্য ওয়েস্ট: হোমজ টু বিমলকৃষ্ণ মতিলাল’, ‘রিয়েলিজ়ম: রেসপন্সেস অ্যান্ড রিঅ্যাকশনস’, ‘লজিক, নব্য-ন্যায় অ্যান্ড ইটস অ্যাপ্লিকেশন: হোমেজ টু বিমলকৃষ্ণ মতিলাল’ প্রভৃতি। এ ছাড়া গবেষণা পত্রিকা ‘দ্য ডন’ পুনঃপ্রকাশের মূল চালিকাশক্তি ছিলেন তিনি।
অধ্যাপকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (জুটা)। জুটার সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় প্রাক্তন অধ্যাপকের মৃত্যুতে সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘অধ্যাপক মাধবেন্দ্রনাথ মিত্রের দেখানো পথেই বর্তমানে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউন্সেলিং সেল তৈরি হয়ে চলেছে। তাঁর মৃত্যুতে শিক্ষাজগতের অপূরণীয় ক্ষতি হল।’’