Advertisement
E-Paper

প্রতিকূলতা দূরে সরিয়ে উৎকর্ষ বজায় রাখল যাদবপুর, বিশ্বের দুই শতাংশের মধ্যে রয়েছেন বহু বিজ্ঞানী

সময়ের সঙ্গে নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু অনভিপ্রেত কারণে বারবার শিরোনামে এসেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৮:১৮
Jadavpur University

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত।

আর্থিক অসঙ্গতি, সরকারি আনুকূল্যের অভাব, অপর্যাপ্ত পরিকাঠামো বা রাজনৈতিক তরজা—কোনও কিছুই দমিয়ে রাখতে পারেনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্যের মুকুটে জুড়েছে নয়া পালক। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বের সেরা দুই শতাংশ বিজ্ঞানীদের তালিকায় রয়েছে যাদবপুরের বেশ কয়েকজন অধ্যাপকের নাম।

বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পর পর ১৯০৬ সালে শুরু পথ চলা। বেঙ্গল টেকনিক্যাল কলেজ হিসাবে পরিচিত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্যই ছিল ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প হিসাবে দেশে কারিগরি, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার ঘটানো। এর পর ১৯৫৫ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে আত্মপ্রকাশ। মূলত ইঞ্জিনিয়ারিং ও বৈজ্ঞানিক শিক্ষাচর্চা এবং গবেষণায় যে প্রতিষ্ঠান গরিমালাভ করেছিল, তা সময়ের সঙ্গে খানিকটা হলেও খর্ব হয়েছে।

বিভিন্ন সময়ে নানা অনভিপ্রেত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বারবার শিরোনামে এসেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। সরকারপোষিত বিশ্ববিদ্যালয় হয়েও কখনও রাজ্যের তরফে আবার কখনও কেন্দ্রের তরফে ব্যয় সঙ্কোচন করা হয়েছে। স্থায়ী নিয়োগের ক্ষেত্রেও রয়েছে জটিলতা। আর্থিক আনুকূল্য না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা বিভাগে প্রয়োজনীয় গবেষণা সামগ্রী, গবেষণাগার সংস্কার, নতুন যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতার মতো সমস্যা দেখা গিয়েছে। যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যৎসামান্য খরচে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া এবং প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়ারাও শিক্ষালাভের সুযোগ পান, কেন্দ্র-রাজ্যের এই সাঁড়াশি চাপে ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পরিকাঠামো। অবশ্য উৎকর্ষ ধরে রাখার জন্য মাঝেমধ্যেই পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রাক্তনীরা।

অন্য দিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে র‍্যাগিংয়ের ঘটনার পর সম্প্রতি আরও এক ছাত্রীমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। একই সঙ্গে চলতি বছরে ওবিসি সংরক্ষণ জটের কারণে রাজ্য জয়েন্টের ফল প্রকাশে বিলম্ব হওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্নাতকস্তরে ফাঁকা রয়ে গিয়েছে রেকর্ড সংখ্যক আসন।

কিন্তু শেষমেশ কোনও বাধাই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। এ বছরই গ্র্যাজুয়েট অ্যাপ্টিটিউট ইঞ্জিনিয়ারিং টেস্ট (গেট)-এ সাফল্যের নজির রেখেছেন পড়ুয়ারা। এনআইআরএফ র‍্যাঙ্কিং তালিকায় রাজ্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে প্রথম এবং ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠান হিসাবে ১৮তম স্থান দখল করে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। সম্প্রতি এলসিভিয়ার বিভিন্ন প্রকাশনার সঙ্গে যৌথ ভাবে আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত বিশ্বের শীর্ষ ২ শতাংশ বিজ্ঞানীদের তালিকাতেও রয়েছেন যাদবপুরের বেশ কিছু গবেষক।

স্ট্যানফোর্ড-এর এই দু’শতাংশ বিজ্ঞানীর তালিকার ‘কেরিয়ার লং’-এ ৪০ জন এবং ‘লাস্ট ওয়ান ইয়ার পারফরম্যান্স’-এর ৫০ জন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক তথা অধ্যাপক। ২০১৯ সাল থেকে প্রকাশিত এই তালিকায় প্রথমে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ থেকে ২৫ জন গবেষকের নাম থাকত। বর্তমানে এতরকম প্রতিকূলতা পেরিয়ে আরও উন্নত স্থানে বিশ্ববিদ্যালয়। এই সাফল্যকে ‘সকলের সম্মিলিত সাফল্য হিসাবেই দেখতে চান মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক তথা ‘কেরিয়ার লং লিস্ট’-এ ১৭তম স্থানাধিকারী প্রশান্ত সাহু। বলেন, “যে ভাবে ফান্ডিং কম থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, সহ-গবেষকেরা পাশে ছিলেন, তাতেই এই স্বীকৃতি।” তাঁর গবেষণা মূলত বিভিন্ন যন্ত্রে কেমন সামগ্রী ব্যবহার করলে কম খরচে তাঁর কার্যকারিতা সর্বোচ্চ করা যায়, তা নিয়ে। যাদবপুর থেকেই স্নাতক। নানা সুযোগ এলেও সেই যাদবপুরেই ফিরে এসেছেন শিক্ষকতা করতে। ৩০ বছর ধরে শিক্ষকতা এবং গবেষণা— দু’ইই নিরলস ভাবে করে চলেছেন তিনি। ইতিমধ্যেই প্রায় ৫০০-র বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর।

তালিকার ২০তম স্থানে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অন্য এক জন অধ্যাপক হিমাদ্রী চট্টোপাধ্যায়। তাঁর গবেষণার কম্পিউটেশনাল ফ্লুয়িড ডায়নামিক্স নিয়ে। মূলত আবহাওয়ার গতিবিধি বুঝতে এবং বায়োমেডিক্যাল ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। যাদবপুরের প্রাক্তনী এই অধ্যাপকের শিক্ষকতা ও গবেষণার অভিজ্ঞতা ৩৫ বছরের উপর। তিনিও খুশি এই স্বীকৃতিতে। কিন্তু খানিকটা আক্ষেপের সঙ্গেই বললেন, “কোনও গ্রান্ট তো দিচ্ছে না!”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক অমিতাভ চট্টোপাধ্যায় ১৮তম স্থান দখল করে নিয়েছেন এই তালিকায়। তবে তিনি বলেন, “যে কোনও র‍্যাঙ্কিং তালিকার মতোই এই তালিকাকে চূড়ান্ত ধরাটা অত্যুক্তি হবে। তালিকায় থাকা গবেষকরা নিশ্চয়ই স্বীকৃতির যোগ্য, সেই নিয়ে কোনও দ্বিধা নেই। কিন্তু পরিচিত আরও অনেক উল্লেখযোগ্য গবেষণার কাজ করছেন, এমন অনেকের নাম নেই।” মূলত যে ‘স্করপাস ইনডেক্স’ ক্যাল্কুলেশনের মাপকাঠিতে এই তালিকা তৈরি করা হয়, তাকেই দায়ী করেন যাদবপুরের প্রাক্তনী এবং বর্তমানে সেখানকারই অধ্যাপক অমিতাভ। তাঁর কাজ মূলত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং ইমেজ প্রসেসিং নিয়ে।

উল্লেখ্য, রাজ্যের আর এক নামী প্রতিষ্ঠান আইআইটি খড়গপুরের ৯০ জন বিজ্ঞানীও রয়েছেন এই তালিকায়।

Jadavpur University Stanford’s World’s Top 2% Scientists stanford university JU Professors
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy