Advertisement
E-Paper

শুরু এসআইআর-এর কাজ, চলছে মাধ্যমিকের টেস্ট! স্কুলের পঠনপাঠন কি স্বাভাবিক ছন্দেই?

নিয়ম অনুযায়ী স্কুলের কাজ সামলে নির্বাচন কমিশনের কাজ করতে হবে। কিন্তু সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে শিক্ষকমহল। কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন শিক্ষকেরা।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৫ ১৮:৩১
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মাধ্যমিকের টেস্ট শুরু হয়েছে সোমবার থেকে। স্কুলে স্কুলে চলছে দশম পড়ুয়াদের পরীক্ষা। তার মধ্যে মঙ্গলবার থেকে শুরু হল ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর)-এর কাজ। এই কাজে যাঁদের বিএলও (বুথ লেভেল অফিসার বা বুথ স্তরের আধিকারিক) নিয়োগ করা হয়েছে তাঁদের বেশির ভাগই শিক্ষক-শিক্ষিকা। ফলে সরাসরি প্রভাব পড়ছে স্কুলগুলিতে।

কী ভাবে চলছে পরীক্ষা ও পঠনপাঠন? ৩ নভেম্বর থেকে থেকে রাজ্যের স্কুলগুলিতে শুরু হয়েছে মাধ্যমিকের টেস্ট। আগামী ১৩ নভেম্বরের মধ্যে সেই পরীক্ষা শেষ করে ফেলতে হবে। সেই পর্ব মিটলেই স্কুলগুলিকে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত তৃতীয় সামিটিভ-এর কাজ সেরে ফেলতে হবে। কিন্তু অত পড়ুয়ার মূল্যায়ন করার সময় কোথায় শিক্ষকদের হাতে? স্কুলে কাজ পরীক্ষার ব্যবস্থা করার মতো পর্যাপ্ত শিক্ষকই বা কোথায়?

স্কুলগুলির দাবি , কোনও স্কুলে ৫০ শতাংশ, কোথাও ৭০ শতাংশ শিক্ষককে বিএলও হিসাবে দায়িত্ব দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। রাজ্যে প্রাথমিক থেকে উচ্চ প্রাথমিক পর্যন্ত প্রায় ৬৬,০০০ স্কুল রয়েছে। সব মিলিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ ৪০ হাজার। তাঁদের মধ্যে বিএলও হিসেবে ডাক পেয়েছেন ৮০,৬৮১ জন। নিয়ম অনুযায়ী তাঁদের স্কুলের কাজ সামলে নির্বাচন কমিশনের কাজ করতে হবে। কিন্তু সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে শিক্ষকমহল। কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন শিক্ষকেরা। তাঁদের দাবি, দু’টি কাজ সামলানো সম্ভব নয়। ফলে স্কুলের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দাবি করেছিলেন তাঁরা। স্কুলগুলিতে যে সমস্যা হচ্ছে, তা স্বীকার করেছেন প্রশাসনিক কর্তাদের অনেকেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্কুল জেলা আধিকারিক বলেন, “শহরের তুলনায় শহরতলির স্কুলগুলির সমস্যা বেশি। বিশেষত প্রাথমিক স্কুলগুলিতে বিষয় ভিত্তিক শিক্ষকের সংখ্যা কম। তার উপর তাঁদের নির্বাচনী দায়িত্ব দেওয়ায় স্কুলগুলি পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে।”

যে সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকার বাড়ি ও স্কুলের দূরত্ব অনেক বেশি, তাঁরা সমস্যায় পড়েছেন। অভিযোগ, এমন অনেক শিক্ষককেই বিএলও হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁর বাড়ির কাছে। ফলে তাঁরা কী ভাবে দু’দিক সামলাবেন বুঝতে পারছেন না। এক স্কুল জেলা পরিদর্শক (ডিআই) দাবি করেছেন, বহু প্রধানশিক্ষকের নামেও চিঠি পাঠিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। সে ক্ষেত্রে তাঁরা পদক্ষেপ করেছেন। তিনি বলেন, “এত বেশি সংখ্যক শিক্ষককে বিএলও করে দেওয়ায় একটা সমস্যা তো তৈরি হয়েছে। বেশ কিছু স্কুল থেকে প্রধানশিক্ষকদেরও সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে সেগুলি আটকাতে পেরেছি।”

দক্ষিণ ২৪ পরগনা কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক চন্দন মাইতি বলেন, “আমাদের প্রায় সাড়ে ৫ হাজার পড়ুয়া। শিক্ষক ৫৪ জন। শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্যায় বেশ কয়েকজন পুরনো চাকরিতে ফিরে গিয়েছেন। ৩১ ডিসেম্বরের পর কী হবে জানা নেই। এই পরিস্থিতিতে ১০ জন শিক্ষককে বিএলও করে দেওয়া হয়েছে।” এই সময় একের পর এক পরীক্ষা রয়েছে। পরীক্ষা নেওয়ার পাশাপাশি খাতা দেখাও এক বড় দায়িত্ব। তা ছাড়া নিয়মিত ক্লাস করানো নিয়েও তৈরি হয়েছে সমস্যা।

খাস কলকাতায় প্রাথমিক স্কুল রয়েছে প্রায় ১২০০। সেখানে শিক্ষক সংখ্যা ৭,০০০। তাঁদের মধ্যে সাড়ে তিন হাজারেরও শিক্ষক-শিক্ষিকাকে যুক্ত করা হয়েছে এসআইআর-এর কাজে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান কার্তিক মান্না বলেন, “সাংবিধানিক কাজের জন্য নির্বাচন কমিশন শিক্ষকদের নিয়েছে। সেখানে আপত্তির কিছু থাকতে পারে না। কিন্তু এটা পরীক্ষার মরসুম। তা ছাড়া স্কুলগুলিতে ফর্ম পূরণের মতো নানা কাজ থাকে। বিপুল সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষিকাকে এই দায়িত্ব দেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পঠন-পাঠন।”

বেশ কিছু স্কুল এই সমস্যা দূর করতে তাদের ক্লাস কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। নারায়ণদাস বাঙ্গুর স্কুলের প্রধানশিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া বলেন, “শুধু শিক্ষকদের নয়, আমাদের মাত্র একজন শিক্ষাকর্মী, তাঁকেও বিএল‌ও হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে। ফলে নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন-সহ নানা কাজে সমস্যা হচ্ছে।” তিনি সাফ জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাবে ক্লাসের সময় অর্ধেক করে দিতে বাধ্য হয়েছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy