বিজ্ঞানের থিয়োরি এবং সাংবাদিকতার ব্যবহারিক প্রয়োগ এক নতুন পেশার পথ প্রশস্ত করেছে। বিজ্ঞান সাংবাদিকতা হল সেই বিশেষ পেশা। ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ সায়েন্স জার্নালিস্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিজ্ঞান সাংবাদিক হিসাবে কাজ করছেন ১০ হাজারেরও বেশি পেশাদার কর্মী।
তাঁদের কাজ কী?
শুধুই বিজ্ঞান নির্ভর আবিষ্কারের কথা লেখা কিন্তু বিজ্ঞান সাংবাদিকের কাজ নয়। তাঁরা জটিল ভাষায় প্রকাশিত গবেষণালব্ধ তথ্যকে সাধারণ মানুষের কাছে সহজ ও বোধগম্য করে তোলেন। এই বিভাগের বিশেষজ্ঞ সাংবাদিকেরা মনে করেন, নিয়মিত চর্চায় থাকা, খবর সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা এবং সময়োপযোগী রিপোর্টিং করার দক্ষতা থাকলেই এই পেশায় সফল হওয়া সম্ভব।

বিজ্ঞান সাংবাদিকদের নিয়মিত চর্চায় থাকা প্রয়োজন। প্রতীকী চিত্র।
কী ভাবে এই পেশায় আসা যাবে?
স্নাতক বা স্নাতকোত্তর স্তরে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ফ্রিল্যান্সিং পদ্ধতিতে কিংবা চুক্তি ভিত্তিক কর্মী হিসাবে সংবাদমাধ্যমের অধীনে সাংবাদিক হিসাবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তবে, সাংবাদিকতার অন্য বিভাগের মত এই বিভাগেও তথ্য সংগ্রহ, খবরের বিষয় খুঁজে পাওয়া এবং যথাযথ রিপোর্টিং করার পদ্ধতি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ করতে হয়। সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে তো বটেই, বিশেষ করে ডিজিটাল সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে তথ্য যাচাই করার দক্ষতা থাকা আবশ্যক।
পড়াশোনার সুযোগ:
সেই অর্থে এই বিষয়টি নিয়ে দেশে কিংবা রাজ্যের কোনও প্রতিষ্ঠানেই ডিগ্রি কোর্স করানো হয় না। সাধারণত, মিডিয়া সায়েন্স কিংবা সাংবাদিকতা এবং গণজ্ঞাপন বিষয়েই ডিগ্রি অর্জন করতে হয়। পরবর্তীতে এই বিষয়টি নিয়ে গবেষক কিংবা পেশাদার হিসাবে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তবে এ ক্ষেত্রে, যাঁরা বিজ্ঞান নির্ভর বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেছেন, তাঁরাও এই পেশায় আসতে পারেন। যদিও সাংবাদিকতার সাধারণ জ্ঞান থাকা এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন।
অন্যান্য যোগ্যতা:
- বিজ্ঞানী, গবেষকদের ইন্টারভিউ নিতে হবে এই বিভাগের সাংবাদিকদের। তাই তাঁরা যে বিষয় নিয়ে কথা বলছেন, সেই সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তো থাকতেই হবে, পাশাপাশি, কথোপকথনেও দক্ষ হওয়া প্রয়োজন।
- সহজ ভাষায় লেখা খবর পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাই কথা বলার পাশাপাশি, লেখার ক্ষেত্রেও চাই দক্ষতা।
- পরমাণুর বিন্যাস, ফোটন কণার কার্যকারিতা, কোয়ান্টাম সায়েন্সের প্রাসঙ্গিকতা থেকে শুরু সংক্রামক রোগের প্রতিষেধক, রোগ প্রতিরোধের উপায়, সবুজায়নের অভাব, নগরায়নের সমস্যার মত বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করাই বিজ্ঞান সাংবাদিকতার মূল লক্ষ্য। তাই যে কোনও ধরনের সমস্যা নিয়ে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে।

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় এবং মেঘনাদ সাহা বাংলায় বিজ্ঞান সাংবাদিকতার পথ দেখিয়েছিলেন। ছবি: সংগৃহীত।
বাংলায় বিজ্ঞান সাংবাদিকতা:
রাজ্যের বিজ্ঞানীদের হাত ধরেই বিজ্ঞান সাংবাদিকতার সুচনা হয়েছিল। ১৯৩৫-এ আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় এবং মেঘনাদ সাহার প্রচেষ্টায় ইন্ডিয়ান সায়েন্স নিউজ অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সংস্থার তরফে নিয়মিত ভাবে বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল প্রকাশের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে ওই সংস্থার তরফে ১০ থেকে ১২ সপ্তাহের একটি কোর্স চালু করা হয়। কোর্সে যোগদানকারীরা বিজ্ঞান সাংবাদিকতার খুঁটিনাটি শিখে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। বর্তমানে প্রতি বছর এই সংস্থার তরফে একটি প্রশিক্ষণমূলক কোর্স করানো হয়।
আর কোন প্রতিষ্ঠান থেকে পড়ার সুযোগ রয়েছে?
- ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ সায়েন্স মিউজ়িয়ামের তরফে সায়েন্স কমিউনিকেশন বিষয়ে দু’বছরের মাস্টার অফ টেকনোলজি (এমটেক) ডিগ্রি কোর্স করানো হয়।
- ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স (আইআইএসসি), বেঙ্গালুরুর তরফে সায়েন্স কমিউনিকেশন নিয়ে স্বল্প সময়ের কোর্স করানো হয়ে থাকে।
- ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অন টেকনোলজি এনহ্যান্সড লার্নিং (এনপিটিইএল)-এর তরফে বিভিন্ন আইআইটি প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞরা অনলাইনে সায়েন্স কমিউনিকেশন বিষয়ে কোর্স করিয়ে থাকেন। কোর্সের ক্লাস ‘স্বয়ম’ প্ল্যাটফর্ম থেকে করার সুযোগ রয়েছে।
- ইন্ডিয়ান সায়েন্স কমিউনিকেশন সোস্যাইটির তরফে সায়েন্স জার্নালিজ়মের একটি ট্রেনিং কোর্স রয়েছে। ওই কোর্সটি এক বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ হয়।
খরচ কেমন?
- সরকারি প্রতিষ্ঠানের তরফে যে কোর্সগুলি করানো হয়, তার খরচ এক থেকে ছ’হাজার টাকা।
- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কোর্সগুলির ক্ষেত্রে ১০ হাজার টাকা কিংবা তার বেশিও খরচ হতে পারে।
চলতি সপ্তাহে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের আয়োজিত আলোচনাসভায় বিজ্ঞান সাংবাদিকতার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে চর্চা চলে। এই বিভাগের সাংবাদিকরা কী ভাবে পরিবেশকর্মী, বিজ্ঞানীদের কথা জনমানসে তুলে ধরেন, আরও কী কী বিষয় তাঁদের মাথায় রাখতে হবে— তা নিয়ে মতামত দেন বিশেষজ্ঞরা।