সামেটিভ পরীক্ষার খাতা এ বার শুধু পড়ুয়াদের নয়, দেখাতে হবে তাদের অভিভাবকদেরও। প্রধান শিক্ষকদের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এমনটাই জানাল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। বিজ্ঞপ্তিতে নতুন নির্দেশিকা দিয়ে বলা হয়েছে, যে দিন পড়ুয়াদের খাতা দেখানো হবে, সে দিন উপস্থিত থাকতে হবে তাদের অভিভাবকদেরও।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ডেপুটি সেক্রেটারি (শিক্ষা) ঋতব্রত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের কতটা অগ্রগতি হচ্ছে, তা পড়ুয়াদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সমান ভাবে জানার অধিকার রয়েছে। শিক্ষার অধিকার আইনেও এই বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে অভিভাবকরা অন্ধকারে থাকেন তাদের শিশুদের অগ্রগতির বিষয়ে। তাই এই সিদ্ধান্ত।”
আরও পড়ুন:
সরকারি স্কুলগুলিতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বছরে তিন বার করে পরীক্ষা নেওয়া হয়। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল প্রথা নেই।
প্রত্যেকবার পরীক্ষার পর স্কুলগুলি খাতা ছাত্রছাত্রীদের হাতে তুলে দেয়। তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অভিভাবকদের দেখিয়ে আবার স্কুলের কাছে জমা দিতে হয়। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গিয়েছে পড়ুয়াদের একাংশ সেই খাতা নিয়ে অনেক সময় অভিভাবকদের ঠিকমতো দেখায় না বা অভিভাবকরাও পড়ুয়াদের অগ্রগতি নিয়ে অবহিত হন না। যার জেরে পরবর্তীকালে স্কুলগুলির রেজাল্ট বা ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।
এ প্রসঙ্গে নারকেলডাঙা হাইস্কুলের শিক্ষক স্বপন মণ্ডল বলেন, “পর্ষদ যা বলেছে, স্কুলগুলো তো এই পদক্ষেপ নিজেরাই নিয়ে থাকে। আলাদা করে এই নির্দেশ কেন, বোঝা যাচ্ছে না। হয়তো কিছু স্কুল এই কাজ করছে না। পড়য়াদের অগ্রগতির উপর অভিভাবকদের নজর রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
আরও পড়ুন:
এপ্রিল, অগস্ট এবং ডিসেম্বর-- এই তিন বার পরীক্ষা গ্রহণ করা হয় সামেটিভ এর। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত তিনটি পর্যায়ে আলাদা আলাদা নম্বর ভাগ করা আছে বোর্ডের তরফ থেকে। একই ভাবে নবম ও দশম শ্রেণির ক্ষেত্রেও নম্বর বিন্যাস করা আছে। বোর্ডের নির্দেশে উল্লেখ করা হয়েছে, যেদিন পড়ুয়া ও অভিভাবকদের একযোগে খাতা দেখানো হবে, পড়ুয়াদের পাশাপাশি অভিভাবকদের অভিযোগও গুরুত্ব দিয়ে স্কুলগুলিকে শুনতে হবে।
পার্ক ইনস্টিটিউশন-এর প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজা বলেন, "মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফ থেকে যে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে, আমরা তা আগে থেকেই গুরুত্ব দিয়ে পালন করতাম। ছাত্র-ছাত্রীদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও আমরা তাঁদের সন্তানদের অগ্রগতি সম্পর্কে সমান ভাবে অবহিত করতাম। এটা অত্যন্ত ভাল উদ্যোগ।"
বেশ কিছু স্কুলের শিক্ষকদের বক্তব্য, এখনকার অধিকাংশ পরিবারে বাবা, মা দু'জনেই কর্মরত। সন্তানরা কোন স্তরে নিজেদের অগ্রগতি করছে, তার সম্পর্কে অনেকেই ওয়াকিবহাল থাকেন না। পরীক্ষার খাতা, পড়ুয়াদের সামনেই অভিভাবকদের দেখানো হলে সেই সমস্যা মিটবে।
যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বলেন, "এটা অত্যন্ত ভাল সিদ্ধান্ত। পড়ুয়াদের ভুলত্রুটির সম্পর্কে অভিভাবকরাও সরাসরি জানতে পারবেন। ফলে বাড়িতে সেই জায়গাগুলি দ্রুত সন্তানদের সঙ্গে কথা বলে সমাধানও করতে পারবেন।"