একদিকে শিক্ষামন্ত্রীর বার্তা, কোর্টের নির্দেশ মেনে চাকরির পরীক্ষায় বসুন। মন্ত্রীর এই বার্তার পরই পাল্টা কর্মসূচি ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের’। বুধবার নতুন বিজ্ঞপ্তি পোড়ানোর ডাক দিয়েছে মঞ্চ।
চাকরিহারা শিক্ষকদের আন্দোলনের অন্যতম নেতা চিন্ময় মণ্ডল বলেন, ‘‘যখন কোর্টের নির্দেশ মেনে সব কিছু করার ছিল তখন করেনি। এখন কেন এই কথা বলছেন! আমরা পরীক্ষা দেব না। তাই পাল্টা প্রতিবাদ হিসাবে বিজ্ঞপ্তি পোড়ানোর ডাক।’’
চলতি সপ্তাহের সোমবার থেকেই স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে নতুন করে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগের আবেদন গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। আর পোর্টাল খোলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আবেদনের হিড়িকও পড়ে গিয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আবেদনের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজারের বেশি। তবে পোর্টাল খুললেও ফর্ম ফিলাপ করতে নারাজ অনেক ‘যোগ্য’ শিক্ষক শিক্ষিকাদের বড় অংশ। কিন্তু, চাকরিহারাদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রীর বার্তা, ‘‘কোর্টের নির্দেশ মেনে পরীক্ষাতে বসুন।’’
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘আবেদন শুরু হয়েছে। আমার কাছে যা খবর তাতে জানা গিয়েছে প্রচুর আবেদন জমা পড়েছে ইতিমধ্যে। যাঁরা পরীক্ষা দিতে চান না তাঁরা নিশ্চয়ই এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে কথা বলবেন। আমরা এই পরীক্ষা নিচ্ছি সম্পূর্ণ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। আমি তাঁদের কাছে আবেদন করতে পারি এই ধরনের কোনও হঠকারী জায়গায় না গিয়ে, সুপ্রিম কোর্টের আবেদনে সাড়া দিতে। রাজ্য সরকার ও এসএসসি আপনাদের সবরকম ভাবে সাহায্য করবে।’’ যদিও এই বার্তাকে অগ্রাহ্য করেছেন চাকরিহারাদের একাংশ। বুধাবার পাল্টা কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন:
গতকাল অর্থাৎ ১৬ জুন বিকেল ৫টা থেকে ২০২৫ সালের নবম দশম ও একাদশে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগের পোর্টাল খোলার কথা ছিল। প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে তা খোলা হয় নির্ধারিত সময়ের প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা পর, রাত ১০টা ৩৫ নাগাদ। শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, এসএসসি নিয়োগ নিয়ে আর কোনও বাধা হবে না। এই মুহূর্তে শুধুমাত্র আবেদন নেওয়া হচ্ছে। আবেদনে কোনও বাধা নেই। পোর্টাল খোলার ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে আবেদনপত্র জমা পড়ে প্রায় ৪০-এর কাছাকাছি। আর মধ্যরাত হতেই সেই সংখ্যা পৌঁছে যায় ৭০০-রও বেশি। ১৭ জুন দুপুর পর্যন্ত আবেদন জমা পড়ল প্রায় ১০ হাজারের বেশি।
যাঁরা আবেদন করছেন তাঁদের নিয়ে নতুন করে ভাবছেন না ‘যোগ্য’চাকরিহারারা। তাঁদের যাতে দ্বিতীয়বার পরীক্ষায় বসতে না হয়, তার জন্য অনশন আন্দোলনের পাশাপাশি প্রতিবাদকে আরও তীব্র করতে চাইছেন ‘যোগ্য’চাকরিহারারা। ইতিমধ্যেই ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী অনশন মঞ্চ’-র আন্দোলন পঞ্চম দিন এবং অবস্থানের ৪২ দিনে পা দিল। ‘আমরণ অনশন’-এর কারণে ১০ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও, নতুন করে অন্য পাঁচ জন অনশনে বসেছেন। এক জন দৃষ্টিহীন বিশেষ ভাবে সক্ষম ‘যোগ্য’ প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ সাহাও এই পাঁচ জনের সঙ্গে অনশনে বসেছেন। তিনি বলেন ‘‘সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল নতুন সিলেকশনের কথা। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে সেটা বলা হয়নি। এটা শিক্ষামন্ত্রী এবং এসএসসির বুঝতে অসুবিধা হয়েছে। সরকার ‘যোগ্য’দের তালিকা প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্টের কাছে ক্ষমা চাক। আমাদের মতো দৃষ্টিহীন বা শারীরিক ভাবে বিশেষ ভাবে সক্ষমদের আর কোনও ভাবেই সম্ভব নয় পরীক্ষা দেওয়া। সরকার আমাদের পুরো নগ্ন করে দিয়েছে।’’
উল্লেখ্য, সোমবারই বিকাশ ভবনে ‘যোগ্য’ শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাঁদের দাবি চিঠিতে লিপিবদ্ধ করে শিক্ষামন্ত্রী এবং স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কাছে জমা দিয়েছেন। ওই চিঠিতে জানানো হয়েছে, ১৬ জুন থেকে আবেদন গ্রহণের প্রক্রিয়ায় তাঁরা অংশগ্রহণ করছেন না এবং পরীক্ষাও দেবেন না। এর পর মঙ্গলবার আবারও চাকরিহারাদের একাংশ নতুন করে বিকাশ ভবন ও এসএসসি-র অফিসে চিঠি জমা দিয়েছেন।