Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Paramedical

প্যারামেডিকস্ কী ধরনের পেশা? কারা যেতে পারেন এই পেশায়? জেনে নিন বিশদ

প্যারামেডিক্যাল স্টাফেদের ভূমিকা চিকিৎসক ও নার্সদের থেকে কোনও অংশে কম নয়। প্রত্যেকটি পেশাই একে অপরের পরিপূরক।

প্যারামেডিকস্

প্যারামেডিকস্ সংগৃহীত ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২২:০৪
Share: Save:

সমাজে কিছু মানুষ থাকেন, যাঁরা অপরের জন্য কাজ করেই সবচেয়ে বেশি পরিতৃপ্তি লাভ করেন। মানুষের কাজে আসার সবচেয়ে বড় সুযোগ যেখান থেকে আসা সম্ভব, সেটি হল- চিকিত্সাক্ষেত্র। কিন্তু রোগীদের সেবা-শুশ্রুষা করার ক্ষেত্রে নার্স ও চিকিৎসকের পাশাপাশি আরও কিছু মানুষ থাকেন, যাঁদের অবদানও অনস্বীকার্য। আপনার কোনও অসুস্থতার কথা যদি আপনার চিকিৎসক সন্দেহ করেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে নিঃসন্দেহে আপনাকে কোনও না কোনও পরীক্ষা করতে দেন। আর এই পরীক্ষাগুলি যাঁরা করেন বা পরীক্ষার ফলগুলি যাচাই করে দেখেন, তাঁরা কিন্তু কোনও চিকিৎসক বা নার্স নন। এই পেশাকেই প্যারামেডিকস্ বলে এবং এই পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের প্যারামেডিক্যাল স্টাফ বলে।

এই প্যারামেডিক্যাল স্টাফেদের ভূমিকা চিকিৎসক ও নার্সদের থেকে কোনও অংশে কম নয়। প্রত্যেকটি পেশাই একে অপরের পরিপূরক।

প্যারামেডিকস্ পেশাটির বেছে নেওয়ার কারণ-

১. পরিতৃপ্তিদায়ক- যাঁরা অন্যদের সাহায্য করে আনন্দ পান এবং অন্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল, তাঁদের জন্য এই পেশাটি খুবই তৃপ্তিদায়ক। চিকিত্সাক্ষেত্রে এঁদের ভূমিকা ভীষণ ভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। চিকিতৎসাক্ষেত্রে কোনও জরুরি অবস্থার সৃষ্টি হলে, যেমন, কোভিড অতিমারির সময়, এঁরাই প্রথম সারিতে থেকে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করেন।

২. ব্যাপক চাহিদা- আমাদের দেশে এমনিতেও চিকিৎসাক্ষেত্রে পরিকাঠামোর অভাবে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, নার্স ও প্যারামেডিকসের ঘাটতি রয়েছে। তার মধ্যে কোভিড অতিমারির মতো জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হলে এই পরিকাঠামোয় আরও সঙ্কট দেখা দেয়। এর ফলে আগামী কয়েক বছরেও চিকিৎসাক্ষেত্রে এঁদের ব্যাপক চাহিদা থাকবে এবং তার ফলে প্রচুর চাকরির সুযোগও তৈরি হবে।

৩. প্রশিক্ষণের কম সময়- এই পেশাতে যুক্ত হওয়ার জন্য প্রাথমিক ভাবে একটিই পেশাদারি প্যারামেডিক্যাল কোর্স করতে হয়। সেই কোর্সটি শিক্ষার্থীরা দ্বাদশ শ্রেণি পাশ করেই করতে পারেন। তাই পড়াশুনো শেষ হতে না হতেই চাকরির সুযোগ হয়ে যায় এই পেশার ক্ষেত্রে।

৪. চাকরি সুরক্ষা- যেহেতু চিকিত্সাক্ষেত্রের চাহিদা কোনও কালেই কমবে না এবং একইসঙ্গে এখানে প্রযুক্তির ব্যবহারেও বরাবর চাহিদা থাকবে, তাই প্যারামেডিকসের চাকরির সুরক্ষাও থাকবে চিরকালীন। বাজারের উত্থান-পতন,মন্দা, মুদ্রাস্ফীতি— কোনও কিছুতেই এর অন্যথা হবে না।

৫. অন্যদের থেকে সম্মান প্রাপ্তি- প্যারামেডিকসের কাজের ধরন এমনই যে, বৃহওর সমাজ তাঁদের দ্বারা উপকৃত হয়। এই কারণেই তাঁদের কাজ বাকিদের দ্বারা প্রশংসিত হয় এবং তাঁরা অন্যদের কাছে সম্মাননীয় ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হন।

প্যারামেডিকস্ পড়ে যে যে পদে চাকরি পাওয়া যায়। সেগুলি হল—

১. মেডিক্যাল ল্যাব টেকনিশিয়ান

২. অপারেশন থিয়েটার টেকনিশিয়ান

৩. হসপিটাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন হেলথকেয়ার প্রফেশনাল

৪. ডায়ালিসিস টেকনিশিয়ান

৫.এক্সরে টেকনিশিয়ান

৬.এমার্জেন্সি মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান

এ ছাড়াও অন্যান্য নানা ধরনের চাকরি শিক্ষার্থীরা পেতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত এবং কথোপকথনের জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা আছে। এই ধরনের কাজ ছাড়াও আরও অন্য রকম কাজেরও সুযোগ আছে। যেমন—

১. মেডিক্যাল প্রশিক্ষক

২. মেডিক্যাল কনটেন্ট রাইটার

৩. বিক্রয় প্রতিনিধি

৪. সহকারী গবেষক

এই পেশাগুলি বেছে নিয়ে ক্রমাগত নিজেদের দক্ষতা বাড়িয়ে যে কোনও বিষয়ে স্পেশালাইজেশন করতে পারেন। যেমন, এক জন ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের উন্নত করে মেডিক্যাল ল্যাব টেকনিশিয়ান, ল্যাব সুপারভাইজার, ল্যাব ম্যানেজার এবং সবশেষে ল্যাব ডিরেক্টর হতে পারবেন। অর্থাৎ এই পেশাতে সকলেই শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পদোন্নতি ঘটাতে পারেন।

যোগ্যতা

এই পেশাকে বেছে নিতে হলে সাধারণত খুব বেশি যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না। যে কেউই কোনও স্বীকৃত স্কুল থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পাশ করে এই পেশার জন্য নির্দিষ্ট পেশাদারি কোর্সটি করতে পারেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে এর সঙ্গে দ্বাদশ শ্রেণিতে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান বিষয়গুলি থাকাও জরুরি বলে গণ্য হয়।

বেতন

সাধারণত প্যারামেডিকসের কোর্স শেষ করার পরই শিক্ষার্থীরা চাকরি পেয়ে যান। তাঁদের বেতন প্রাথমিক ভাবে অনেকসময়ই মাসে ১০,০০০-২০,০০০ টাকা হয়। এই পেশার ব্যাপক চাহিদা থাকায় মাসিক বেতন অনেক সময় ৩৫,০০০ টাকাও হয়ে যায়।

ডিগ্রি

প্যারামেডিকসে সার্টিফিকেট কোর্স ছাড়াও এক বছর ব্যাপী ডিপ্লোমা কোর্স, তিন বছর ব্যাপী ব্যাচেলর্স কোর্স, দু'বছর ব্যাপী মাস্টার্স এবং পিএইচডি কোর্স করা যায়।

কোর্স

প্যারামেডিক্স যে কোর্সগুলি করা যায় সেগুলি হল—

১. বিএসসি রেডিওলোজি

২. বিএসসি অডিওলজি ও স্পিচ থেরাপি

৩. ব্যাচেলর অফ ফিজিওথেরাপি

৪.বিএসসি অপথ্যালমিক টেকনোলজি

৫.বিএসসি অপারেশন থিয়েটার টেকনোলজি

এছাড়াও অন্যান্য কোর্স আছে।

দেশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্যারামেডিক্স কলেজ—

১. এইমস, নয়া দিল্লি

২.পিজিআইএমইআর, চন্ডীগড়

৩. ডিপিএমআই ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, নয়া দিল্লি

৪. ক্রিশ্চিয়ান মেডিক্যাল কলেজ, ভেলোর

৫. একলব্য ইউনিভার্সিটি, দামো

পশ্চিমবঙ্গের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্যারামেডিক্স কলেজ—

১. এনএসএইচএম কলেজ, দুর্গাপুর

২. কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ

৩. আইপিজিএমইআর কলকাতা

৪. জর্জ গ্রুপ অব কলেজ

৫.সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটি, কলকাতা

পরোপকারী স্বভাবকে কাজে লাগিয়ে যদি নিজের পেশাই গড়ে তোলা যায়, তার চেয়ে ভাল কিছু হয় না। তাই প্যারামেডিকসের পেশার ব্যাপারে সব তথ্য সংগ্রহ করে এই পেশার মাধ্যমেই আপনার ভবিষ্যৎ গড়ে তুলুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE