হারের পর। ছবি: রয়টার্স।
প্রথমটার মতো দ্বিতীয় সেমিফাইনালও একই রকম উত্তেজনাপূর্ণ হবে, এমনই আশা করেছিলাম। কিন্তু ভারত যে এত সহজে হাল ছেড়ে দেবে, তা ভাবা যায়নি।
শক্তি-দুর্বলতার কথা বিচার করলে দু’দলের মধ্যে উনিশ-বিশের পার্থক্য বার করা যেতে পারে। লড়াইয়ের মানসিকতাও কারও কোনও অংশে কম নয়। বৃহস্পতিবারের আনন্দবাজার পত্রিকা-তে বিশ্লেষণ করেছিলাম ঠিক কোন কোন কারণে অস্ট্রেলিয়া এই ম্যাচে জিততে পারে। অস্ট্রেলিয়ার জয়ে কিন্তু সেগুলোই কাজে লাগল। কিন্তু ওদের জেতার ৫৫ শতাংশের বেশি সম্ভাবনা দেখিনি। কারণ, গত কয়েকটা ম্যাচে ভারতের পারফরম্যান্স এবং ভারতীয় ক্রিকেটারদের লড়াকু মানসিকতা দেখে মনে হয়েছিল ওরা মোটেই সহজে অস্ট্রেলিয়াকে ছেড়ে দেবে না। বুক চিতিয়ে লড়ে তবেই হারবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় হতাশ হলাম বইকি।
আসলে এই স্তরে এসে যে ‘বিগ ম্যাচ টেম্পারামেন্ট’ কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটাই বোঝাল অস্ট্রেলিয়া। আর আমাদের দলের ছেলেদের গ্রুপ লিগের ম্যাচ জেতার ক্ষমতা থাকলেও ওদের যে সেমিফাইনাল জেতার মতো যথেষ্ট টেম্পারামেন্ট নেই, সেটাই বুঝিয়ে দিল ওরা। না হলে দেখুন না, সারা টুর্নামেন্টে ভাল বোলিং করার পর আমাদের মহম্মদ শামি এই ম্যাচেই ফ্লপ করে গেল! উমেশ যাদব বেশি উইকেট নিল ঠিকই, কিন্তু প্রচুর রান দিল। আর মোহিত শর্মার মতো অনভিজ্ঞ একটা ছেলেকে কেন ডেথ ওভারে এত গুরুত্ব দিয়ে ব্যবহার করতে গেল ধোনি, তা ঠিক বুঝলাম না।
অশ্বিন, জাডেজারা খারাপ বল করেনি ঠিকই। কিন্তু যে সময়ে যে বলটা করা দরকার সেটাই ওরা ঠিকমতো করতে পারল না। যখন ইয়র্কার দরকার, তখন আউট সুইঙ্গার। যখন ব্যাটসম্যানকে ক্রিজ থেকে টেনে বার করে আনা দরকার, তখন শর্ট বল এখানেই ওদের অভিজ্ঞতার অভাবটা ধরা পড়ে গেল। ক্যাপ্টেন তো আর প্রতিটা বলের আগে বোলারকে বুঝিয়ে দিয়ে আসবে না, কোন পরিস্থিতিতে কেমন বল করতে হবে। সেটা বোলারকেই নিজের বুদ্ধি-বিবেচনা দিয়ে ঠিক করতে হয়।
একটা সময় মনে হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া হয়তো সাড়ে তিনশো রান পেরিয়ে যাবে। কিন্তু পরপর ওদের কয়েকটা উইকেট ফেলে দিয়ে (১৬ রানে তিন উইকেট) ওদের চাপে ফেলে দিয়েছিল আমাদের বোলাররা। অথচ শেষ পাঁচ ওভারে মিচেল জনসনের ওই ন’বলে ২৭ তোলাটাই গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে গেল। ৩২৮ তুলে নিয়ে ভারতকে যে প্রচন্ড চাপে ফেলে দিল ওরা, তাতেই অর্ধেক ম্যাচ ভারতের হাত থেকে বেরিয়ে গেল। ২৯৫-এর টার্গেট নিয়ে ব্যাট করতে নামার যা চাপ, টার্গেটটা তিনশোর সামান্য বেশি হয়ে গেলেই চাপটা তার চেয়ে প্রায় দশগুণ বেড়ে যায়। ভারতের ক্ষেত্রে আজ ঠিক এটাই হল। যে মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়া তিনশোর লাইনটা পেরোল, সেই মুহূর্তেই ভারতের ব্যাটসম্যানদের উপর চাপটা এক লাফে অনেকটা বেড়ে গেল।
যে ফ্যাক্টরে ভারত অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে সামান্য এগিয়ে ছিল, সেই স্পিন ফ্যাক্টরটা এ দিন অস্ট্রেলিয়া এত ভাল সামলেছে যে, তার প্রশংসা না করে পারা যাচ্ছে না। জাডেজা-অশ্বিনদের বলে ওরা কম রানই নিয়েছে। কিন্তু ওদের উইকেট না দেওয়ার যে পরিকল্পনা করে নেমেছিল, তাতে সফল অজি ব্যাটসম্যানরা। শুধু ম্যাক্সওয়েলকে ফেরাতে পেরেছে অশ্বিন। দুই স্পিনারের কুড়ি ওভারে ওরা একশো রানও নেয়নি। এটাই ছিল কৌশল যে, স্পিনারদের বিরুদ্ধে বেশি ঝুঁকি নেব না। সিডনির উইকেটে ভারতীয় স্পিনারদের বিরুদ্ধে স্মার্ট হতে যাওয়াটা যে আত্মহত্যার সমান, তা ওরা জানত বলেই এই পরিকল্পনা। তাই ডেথ ওভারের জন্য এক জন স্পিনারকে রেখে দিলে বোধহয় ভাল করত ধোনি।
এত বড় একটা টার্গেট তাড়া করতে নেমে বড় পার্টনারশিপ ছাড়া সফল হওয়া যায় না। একাধিক পার্টনারশিপ। একাধিক তো দূরের কথা, ভারতের একটা পার্টনারশিপই হল না। রাহানে-ধোনির মধ্যে একটা ভাল পার্টনারশিপ হবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, রাহানের ব্যাটে বল সামান্য ছুঁয়ে যাওয়ায় টিভি আম্পায়ার তাকে কট বিহাইন্ড দিয়ে দেন। তা ছাড়া এই ধরনের টার্গেটের ক্ষেত্রে বিরাট কোহলির মতো এক জন বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানের বড় ইনিংস দরকার। সেটাও তো পেল না ভারত। আমাদেরই দুর্ভাগ্য যে, কোহলি ফর্মে নেই।
আসলে টস-ই এই ম্যাচের ফলাফল অর্ধেকের বেশি ঠিক করে দিল। এই পরিবেশে, উইকেটে টস জেতা মানে অনেকটা এগিয়ে থেকে দৌড় শুরু করা। ভারত এই সুবিধাটা পেল না বলেই শেষ পর্যন্ত লড়তেও পারল না। ধোনি টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিলে ম্যাচের শেষ দিকে হয়তো অশ্বিনরা আরও কার্যকরী হয়ে উঠতে পারত। তাতে অজি ব্যাটসম্যানরা হয়তো একটু বেশিই সমস্যায় পড়ত। ক্লার্করা আগে ব্যাট করে নেওয়ায় সেই সমস্যায় আর পড়তে হল না অস্ট্রেলিয়াকে। বরং ভারতেরই কপাল পুড়ল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy